কলকাতা: সাবিত্রীবাঈ ফুলে (Savitribai Phule)। সমাজের পিছিয়ে পড়া মেয়েদের শিক্ষায় (women education) ব্রতী এক মহিয়সী নারী। এর জন্য তাঁকে কম গঞ্জনা সহ্য করতে হয়নি। সমাজের উচ্চবর্ণের মানুষেরা সাবিত্রীকে কটাক্ষ করেছেন, ব্যঙ্গ করেছেন। তবু তাঁকে দমানো যায়নি। তিনি ছিলেন তাঁর লক্ষ্যে অবিচল। শুধু নারীশিক্ষাই নয়, তাঁর অবদান রয়েছে সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রেও। তিনি ছিলেন শিক্ষক এবং কবি। ব্রিটিশ শাসনকালে নারীর অধিকার নিয়ে নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছেন। তাঁর স্বামী জ্যোতিরাও ফুলেও ছিলেন একই পথের পথিক। এই দম্পতি সেই যুগে শুধু মহারাষ্ট্র নয়, সারা ভারতে নারীর অধিকার নিয়ে লড়াই করেছেন। তাঁদের জন্যই আজ দলিত মহিলারাও শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন।
মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি সাবিত্রীর ১৯২তম জন্মদিন। শিক্ষায় তাঁর বিপুল অবদানের জন্যই বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে, ৫ সেপ্টেম্বর নয়, শিক্ষক দিবস পালন করা উচিত ৩ জানুয়ারি সাবিত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে। ১৮৩১ সালে মহারাষ্ট্রের নয়গাঁওতে জন্ম তাঁর। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি তাঁর তীব্র আকর্ষণ ছিল। আশপাশের বিভিন্ন এলাকার দরিদ্র দলিত পরিবারের মেয়েদের কেন শিক্ষার আলোকে আলোকিত করা হবে না, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন ছোট্ট সাবিত্রীকে ভাবিয়ে তুলত। যত বয়স বেড়েছে, ততই এই ভাবনা তাঁকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছে। তরুণ বয়সেই তিনি দলিত এবং অবহেলিত পরিবারগুলির মেয়েদের শিক্ষার অঙ্গনে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন।
আরও পড়ুন: Sumitra Sen Passes away: সুমিত্রা সেন বেঁচে থাকবেন তাঁর গানে, লিখলেন বিশিষ্ট সঙ্গীত গবেষক স্বপন সোম
১৮৫১ সালে ফুলে দম্পতি পুণেতে তিনটি মহিলা স্কুল খুলে ফেলেন। সেগুলিতে শুরুতে প্রায় দেড়শো নাবালিকা পড়াশোনা করত। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল অবহেলিত পরিবারের। সন্তান সন্ততিদের মুখে একটু খাবার তুলে দিতেও সেই সব পরিবারের বাবা-মায়েদের কষ্ট হত। আর্থিক সঙ্গতি ছিল এতই দুর্বল। তাদের বাড়ির মেয়েরা আবার পড়াশোনা করবে, এই ভাবনাই ছিল অমূলক। ফুলে দম্পতি তাঁদের বুঝিয়ে মেয়েদের স্কুলে ডেকে আনত। পরবর্তীকালে স্কুলে মেয়েদের সংখ্যা এত বেড়ে যায় যে, ছেলেরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে। এভাবেই সাবিত্রী অবহেলিত মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার বীজ পুঁতে দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: Karnataka Girl: এক লাথিতেই কুপোকাত ধর্ষণকারী, কী আছে স্কুলছাত্রীর তৈরি জুতোয়?
সাবিত্রী যখন স্কুলে যেতেন, তখন উচ্চবর্ণের মানুষজন তাঁর দিকে গোবর ছুড়ে দিত। পিছিয়ে পড়া দলিত ছেলেমেয়েরা কেন স্কুলে যাবে, এটাই ছিল ওই উচ্চবর্ণের মানুষের প্রশ্ন। তাদের দাবি ছিল, ওদের এভাবেই থাকতে হবে। সাবিত্রীর সহযোগী ছিলেন ফতিমা শেখ (Fatima Sheikh)। তিনি ভারতের প্রথম মুসলিম মহিলা শিক্ষিকা(first female teacher) । সাবিত্রী, ফতিমারা মিলে ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল সংস্কার এনেছিলেন।
ইতিহাস আজও স্মরণে রেখেছে সাবিত্রীবাঈ ফুলে ও তাঁর সহযোগী ফতিমা শেখদের
আজকের প্রজন্মের অনেকেই সাবিত্রী, ফতিমাদের নাম জানে না। সমাজে তাঁদের অবদানের কথা জানে না। কিন্তু ইতিহাস কথা বলে। ভারতের ইতিহাস তাঁদের স্মরণে রেখেছে। সাবিত্রীর ১৯২তম জন্মদিনে তাঁকে আরও একবার শ্রদ্ধা জানায় ভারতবাসী।