কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: সঞ্জয় দত্ত অভিনীত ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ ছবিটির কথা হয়তো অনেকেরই মনে আছে। যেখানে কোনও ব্যক্তির সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে ‘জাদু কি ঝাপ্পি’র দৃশ্যটি আজও দর্শকের মনে গেঁথে রয়েছে। রূপোলী পর্দার সেই গল্পের দৃশ্যটি কিন্তু বাস্তবে রাজনীতির দুনিয়াতেও ফুটিয়ে তুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা থেকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পর্যন্ত সেই ‘মোদি কি ঝাপ্পি’র ধারা অব্যাহত।
এই ‘মোদি কি ঝাপ্পি’র সূত্রপাত ২০১৬ সালে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে ভারতে পা রাখেন সস্ত্রীক বারাক ওবামা। সমস্ত প্রোটোকল ভেঙে দিল্লি বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাতে হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ওবামার এয়ার ফোর্স ওয়ানের সিঁড়ি দিয়ে ওবামা নেমে আসতেই তাঁকে জড়িয়ে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বেশকিছুক্ষণ ধরেই চলে সেই আলিঙ্গন পর্ব। ততক্ষণে সাংবাদিকদের ক্যামেরার ফ্ল্যাশলাইটের ঝলকানিতে ছড়িয়ে পড়ে ছবিটি। ভারতীয় কূটনীতিতে কোনও দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সেই রাষ্ট্রপ্রধানকে প্রজাতন্ত্র দিবসে আমন্ত্রণ জানানোর রেওয়াজ চলে আসছে স্বাধীনতার পর থেকেই। সুতরাং সেই ‘প্রজাতন্ত্রের সকালে’ মোদি-ওবামার আলিঙ্গনে দুই গণতন্ত্রের সম্পর্কে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।
কূটনৈতিক মহলের মতে, মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পরিবর্তন আসে ভারতের বিদেশনীতিতে। চিরাচরিত জোট নিরপেক্ষতার নীতি থেকে ক্রমশ মার্কিনমুখী হয়ে ওঠে নয়াদিল্লি।
তারপর সেই বছর শেষেই হোয়াইট হাউজের মসনদে বসেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডোনাল্ড ট্রাম্পে রক্ষণশীল, ইসলাম বিরোধী মনোভাবাপন্ন হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। সুতরাং পাকিস্তান প্রশ্নে ট্রাম্পকেই ‘ট্রাম্প কার্ড’ হিসেবে দেখতে শুরু করে মোদি সরকার। তাই নিজের দেশে অপ্রিয় হওয়া সত্বেও মোদি সরকারের কাছে প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠেন সেই মার্কিন ধনকুবের প্রেসিডেন্ট।
২০১৯ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সম্মেলন মার্কিন মুলুকে যান মোদি। সেখানে হাউস্টন শহরে এক যৌথ সম্মেলন করা হয় ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে। দর্শক ভর্তি স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে ট্রাম্পকেও ‘জাদু কি ঝাপ্পি’ দেন মোদি। তারপর হাতে হাত রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অব কি বার… ট্রাম্প সরকার।’ অর্থাৎ, এবারেও আমেরিকায় ট্রাম্প সরকার। হাবভাব দেখে ঠাওর করার উপায় নেই, যেন মনে হচ্ছে ২০১৪ লোকসভা ভোটে নিজের জন্যই গলা ফাটাচ্ছেন তিনি।
যদিও ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রীর সমস্ত হিসেব নিকেশ উল্টে দেয় মার্কিনিরা। হোয়াইট হাউজ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয় ট্রাম্প। রিপাবলিকানদের সরিয়ে ক্ষমতায় আসে ডোমোক্র্যাটেরা। এবার প্রেসিডেন্ট হন ওবামার প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
জল্পনা শুরু হয় বাইডেনের সঙ্গে মোদির সম্পর্ক কোন খাতে বইবে। কারণ ট্রাম্পের হয়ে মার্কিন মুলুকে একরকম প্রচার সেরেছিলেন মোদি। প্রশ্ন উঠছিল সেই ঘটনার প্রভাব কতটা পড়বে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টের মনে ?
Glimpses from the meeting between PM @narendramodi and @POTUS @JoeBiden at the White House. pic.twitter.com/YjishxDVNK
— PMO India (@PMOIndia) September 24, 2021
যদিও কথায় আছে, আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে বৃহত্তর স্বার্থের কাছে অতীতের ক্ষুদ্র স্বার্থ মলীন হয়ে যায়। আর ভারত ও আমেরিকার উভয়ের স্বার্থই চীন ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিহত করা। সুতরাং সেই প্রশ্নে ওয়াশিংটনের সঙ্গে নয়াদিল্লির ঘনিষ্ঠতা স্বাভাবিক ভাবেই কাম্য। তাই শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফের ‘জাদু কি ঝাপ্পি’ দিতে দেখা গেল প্রধানমন্ত্রীকে। হোয়াইট হাউজের চার দেওয়ালে ‘মোদি কি ঝাপ্পি’তেই কি তাহলে শুরু দুই দেশের নতুন ভাবে পথ চলা… ?