এক বছর ধরে রাজপথে নেমে লাগাতার আন্দোলন। সরকার পক্ষের সঙ্গে বারবার আলোচনায় নিজেদের দাবিতে অনড় থাকা। রাজধানী দিল্লি অভিমুখী কৃষকদের লড়াইকে ব্যারিকেড আর অসংখ্য নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে বেঁধে রাখার চেষ্টা। রাস্তার উপর গজাল পুঁতে সিঙ্ঘু বর্ডারকে প্রায় যুদ্ধক্ষেত্রের চেহারা দেওয়া কেন্দ্র সরকার অবশেষে বুঝল কৃষকদের শক্তি। সামনেই উত্তর প্রদেশ, পঞ্জাব সহ একাধিক রাজ্যে ভোট। সব হিসেব নিকেশ করে, কৃষি আইন নিয়ে ইউ টার্ন করার সিদ্ধান্ত নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা মত সব ঠিক থাকলে সংসদে আগামী শীতকালীন অধিবেশনে তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করবে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রের সরকার দাবি করেছিল এই নতুন তিন কৃষি আইন দেশের কৃষকদের মুক্তি দেবে। কিন্তু যাঁদের মুক্তির কথা ভাবা হয়েছিল, সেই অগণন কৃষকদের কাছ থেকে কোনও রকম পরামর্শ নেওয়ার চেষ্টা করেনি সরকার। এমনকি রাজ্যসভায় বিরোধী বক্তব্যের উপর বুল ডোজার চালিয়ে বিল পাস করিয়ে নেয় মোদি সরকার। দেশের বাকি সাধারণ মানুষ যাতে সেই ঘটনা না জানতে পারেন, সে জন্য রাজ্যসভা টিভির সম্প্রচার কেটে দেওয়া হয়। দিনটা ছিল ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর। এর পর থেকেই বরাবর অনড় মনোভাব দেখিয়ে গিয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।
কৃষিবিল প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় কৃষকরা
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল কৃষকেরা মান্ডি ব্যবস্থার দাস। সরকার কৃষকদের নিজেদের পছন্দ মত দাম বেছে নেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। অথচ এই পরিসংখ্যান সরকারের কাছেই রয়েছে যে, এপিএমসি অর্থাৎ কৃষি উৎপাদন বাজার কমিটি’র বাইরে কৃষি বিপননের একটা বড় অংশ দেশের অর্থনীতিতে জড়িয়ে। কেন্দ্র কৃষি আইনের মাধ্যমে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে। বলা হয়ে যে কর্পোরেট বা বড় ব্যবসায়ীরা ফসলের অনেক বেশি দাম দেবে। সরকার ভুলে গিয়েছিল যে বিহারে ২০০৬ সাল থেকে কোনও এমএসপি বা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নেই। কিন্তু কর্পোরেট ক্ষেত্র থেকে কোনও বিনিয়োগ আসেনি। কেরলে কোনও সময়েই এমএসপি নেই। বড় পুঁজিপতি বা কর্পোরেটকে সেখানে কোনও দিনই দেখা যায়নি।
आंदोलन तत्काल वापस नहीं होगा, हम उस दिन का इंतजार करेंगे जब कृषि कानूनों को संसद में रद्द किया जाएगा ।
सरकार MSP के साथ-साथ किसानों के दूसरे मुद्दों पर भी बातचीत करें : @RakeshTikaitBKU#FarmersProtest
— Rakesh Tikait (@RakeshTikaitBKU) November 19, 2021
আরও পড়ুন – কৃষকদের চাপের কাছে নতি স্বীকার কেন্দ্রের, অবশেষে ৩ কৃষি আইন প্রত্যাহার করলেন মোদি
আইনের আরও একটি দিক। যেটা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এপিএমসি আইনের ১৯ নং ধারা এবং চুক্তি চাষ আইনের ১৩ এবং ১৫ নং ধারা। আইনের এই কয়েকটি দিক একটু খুঁটিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে কী মারাত্মক ভুলভুলাইয়ার ভিতর কৃষকদের বেঁধে ফেলার ব্যবস্থা করেছিল সরকার। সোজা করে বললে চুক্তি চাষ অনুযায়ী কোনও নাগরিক বা কৃষক যদি ক্ষতির মুখে পড়েন তা হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থা (কেন্দ্র বা রাজ্য) বা কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। শুধু তাই নয় চুক্তি চাষের কোনও সুরক্ষাও দাবি করা যাবে না। কৃষকেরা প্রথম থেকেই এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন।
দিল্লি সীমান্তে কৃষকদের প্রতিবাদ
প্রথম থেকেই অর্ডিন্যান্স জারি, তারপর আইন। কেন্দ্র নিয়ম নীতির কোনও রকম তোয়াক্কা না করেই চাপিয়ে দেওয়ার রাস্তায় হাঁটতে চেয়েছিল। সঙ্গে ছিল অতিমারীর আর্থিক ধাক্কা। নীতি আয়োগের পরামর্শে এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চেয়েছিল কেন্দ্র। নরেন্দ্র মোদি সরকারের অংক মেলেনি কৃষকদের এককাট্টা আন্দোলন, চাষবাস, জমি-বাড়ি সব ফেলে রেখে ম্যারাথন আন্দোলনের হিসেব।