দিল্লি : মহাসমারোহে রবিবার ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস পালিত হচ্ছে দেশজুড়ে। স্বাধীনতা দিবস হোক বা প্রজাতন্ত্র দিবস, দেশ ও জাতির সম্মানে জাতীয় পতাকা তোলেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। পতাকার ব্যবহার বিধি নির্দিষ্ট করার জন্য কিছু নিয়ম বিধি বেঁধে দেওয়া হয়েছে। পতাকার সম্মান রাখতে কখনই তা মাটিতে রাখা যায় না বা জলে ফেলা যায় না। মঞ্চের নিচে অথবা টেবিলের আচ্ছাদন হিসাবেও পতাকার ব্যাবহার করা নিষেধ। তেমনই বিশেষ দিনগুলিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। সরকারি অনুষ্ঠানে সেই নিয়ম মেনেই জাতীয় পতাকা তুলে থাকেন দেশের প্রশাসনিক প্রধানরা। স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিনের অনুষ্ঠানে তিনিই হলেন মুখ্য অতিথি। স্বাধীনতা দিবসে জাতীর উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। অথচ সাধারণতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। কিন্তু কেন ? ২০০ বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশীক শাসনের কবল থেকে দীর্ঘ সংগ্রামের পর মুক্তি পেয়েছিল দেশ। শত শত মানুষের সংগ্রাম ও রক্তের বিনিময়ে ভারত সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র রাষ্ট্রের মর্যাদা অর্জন করে। লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন দেশের শাসনভার তুলে দেন প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর হাতে। ১৪ আগস্ট মধ্যরাতে চুক্তিপত্রে সাক্ষর করেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। ১৫ আগস্ট ভোরে স্বাধীনতার সূর্যোদয় দেখে দেশ।
আরও পড়ুন :মালদায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত ৪
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্টের মধ্যরাতে ক্ষমতার হস্তান্তর করে ইংরেজ ভারত ত্যাগ করে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের পতাকা দণ্ড বেয়ে নেমে আসে। পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্ত স্বাধীন দেশের তিরঙ্গা পতাকা উত্তোলন করেন স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। সেইদিন থেকেই চলে আসছে এই নিয়ম। স্বাধীনতা দিবসে পতাকা তোলেন প্রধানমন্ত্রী। দণ্ডের মাঝে পতাকা ভাঁজ করে বেঁধে রাখা হয়। নিচ থেকে দড়ি টেনে আস্তে আস্তে ওপরে তোলা হয় পতাকা। কারণ দীর্ঘ সংগ্রামের পর অর্জন করা স্বাধীনতার রূপ ফুটে ওঠে এই পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে। এরপর প্রায় ২ বছরেরও বেশী সময় কেটে যায়। ভারতবর্ষের আইনের অনুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি সংবিধান গৃহিত হয়।
আরও পড়ুন: মধ্যরাতে এল কাঙ্খিত স্বাধীনতা, কলকাতায় সকাল থেকেই বন্দেমাতরম ধ্বনিতে মাতল জনতা
যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে অনুসরণ করে দেশে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা হয়। রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক প্রধান হিসাবে মর্যাদা পান। ততদিনে স্বাধীন দেশের পতাকা উজ্জ্বল অস্তিত্ব নিয়ে উড়ে চলেছে। তাই প্রজাতন্ত্র দিবসে রাষ্ট্রপতি দণ্ডের ওপরে ভাঁজ করে বাঁধা পতাকাকে এক ঝটকায় খুলে দেন। এই পদ্ধতিতে পতাকা উত্তোলন করার কারণ হল রাষ্ট্রপতি দেশের সাংবিধানিক প্রধান হিসাবে আন্তর্জাতিক স্তরে বার্তা দেন স্বাধীন ভারতবর্ষ সার্বভৌমিক গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। ইতিহাসের সরণী বেয়ে সেই নিয়মই চলে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে। সেই থেকে আজও প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা স্বাধীনতা দিবসে তোলেন আর রাষ্ট্রপতি পতাকা উত্তোলন করেন সাধারণতন্ত্র দিবসে। আর দুটি ক্ষেত্রেই পতাকা তোলা হয় দুটি নিয়মে।