কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: পেগাসাস কাণ্ড নিয়ে রীতিমতো শোরগোল চলছে সংসদের বাদল অধিবেশনে। পেগাসাস কান্ড এবং জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধি ইস্যুতে কেন্দ্রকে চাপে ফেলতে সংসদে সরব হয়েছে তৃণমূল সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলি। এমন পরিস্থিতিতে মুখ খুললেন প্রাক্তন আমলা তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সংসদ জহর সরকার। “সংসদে প্রতিবাদী সাংসদদের মাইক্রোফোন বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র। যাতে তাদের প্রতিবাদের আওয়াজ কেউ শুনতে না পায়। প্রতিবাদী বিরোধী সাংসদদের মাইক্রোফোন বন্ধ করা হলেও সংসদ ভবনের অফিসিয়াল মাইক্রোফোন নেটওয়ার্ক গুলি বন্ধ করা হয়নি।“ এমনই অভিযোগ তাঁর। একটি বহু চর্চিত ইংলিশ পোর্টালে এই বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছেন তৃণমূল সাংসদ। সেখানে নিজের সংসদ হিসেবে প্রথম ভবনে পা রাখার অভিজ্ঞতা থেকে দেশ-বিদেশের সংসদ ভবনের নানান ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরেছেন তিনি।
“Even though the government side muted every microphone of ‘troublesome’ members of either house who protested, all that could be heard even over the official microphone network were resounding slogans,” new Rajya Sabha MP @jawharsircar writes.https://t.co/8uApf84Di6
— The Wire (@thewire_in) August 9, 2021
যদিও জহর বাবুর বক্তব্যের মূল বিষয়বস্তু ছিল সংসদ ভবনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মোদী সরকার কিভাবে বিকৃত করে তুলেছে। পেগাসাস ইস্যুকে অস্বীকার করে বিরোধীদের অগ্রাহ্য করা। তাড়াহুড়ো করে স্বল্প সময়ের মধ্যে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস করার প্রচেষ্টা। এছাড়াও সংসদীয় কমিটিগুলো কে অপ্রাসঙ্গিক করে তোলার এক মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে মোদী সরকার। এই সমস্ত অভিযোগ বিস্তারিত তুলে ধরেছেন তৃণমূল সাংসদ।
আরও পড়ুন: সমুদ্র পথে বাণিজ্যে বাড়াতে সমস্ত বাধা দূর করতে হবে: মোদি
জহর বাবু তীব্র ভাষায় কেন্দ্রকে আক্রমণে হেনে বলেছেন, যে দলটির নেতা বিগত সাত বছরে একটিও সাংবাদিক সম্মেলনে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হতে পারেননি। সংসদে বিরোধীদের প্রশ্নের জবাব দিতে পারছেন না। এর থেকে স্পষ্ট যে স্বাভাবিকভাবেই কোনও গণতান্ত্রিক বিতর্ক ছাড়াই তাঁর কাজ সম্পন্ন করতে তিনি বেশি পছন্দ করেন। তাই কেন্দ্রের নির্দেশে সংসদের প্রতিবাদী সাংসদদের মাইক্রোফোন স্তব্দ করে রাখা হয়েছে।
পাশাপাশি পেগাসাস বিতর্ক এবং কৃষি বিল প্রত্যাহার নিয়ে যখন বিরোধীরা প্রতিবাদে সোচ্চার, ঠিক সেই সময় সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে একের পর এক বিল পাস করাচ্ছে কেন্দ্র।
বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল টেলিফোন হ্যাকিং তথা পেগাসাস কাণ্ড নিয়ে কেন্দ্রের অবস্থান জানতে চাইছে বিরোধী দলগুলি। সেই সময় পেগাসাস ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা তার উত্তরে যথেষ্ট ইঙ্গিত বহন করে। শুধু তাই নয় প্রধানমন্ত্রী এটি একটি ঐতিহাসিক ভুল করছেন বলেও তিনি তীব্র আক্রমণ করেন কেন্দ্রকে।
এই প্রসঙ্গে একজন সংসদের কর্তব্য কথা মনে করিয়ে তিনি রাশিয়া এবং চীনের সংসদীয় ব্যবস্থার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, একজন সাংসদের কর্তব্য হলো দেশের গণতান্ত্রের পক্ষে আওয়াজ তোলা। যে সমস্ত বিষয়গুলি গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হওয়া। নয়তো ভারতীয় সংসদীয় ব্যবস্থা একদিন চীন কিংবা রাশিয়ার মত সুসজ্জিত সংসদের মতোই হবে। যেখানে কোরাস গাওয়ার মতো হাততালির শব্দ শোনা যাবে, কিন্তু প্রতিবাদ করার কেউ থাকবে না।
পাশাপাশি মোদি সরকারের অধীনে সংসদীয় কমিটিগুলির অবমূল্যায়নের বিষয়টিও তিনি তুলে ধরেছেন। সংসদে উপস্থাপিত বিল গুলির পরীক্ষা-নিরীক্ষা আলোচনা-পর্যালোচনা জন্য সংসদীয় কমিটির গুরুত্ব অপরিসীম। তিনি বলেন, ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ ইউপিএ আমলে সংসদে পেশ করা ৭১ শতাংশ বিল সংসদীয় কমিটিগুলির কাছে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মাত্র ২৫ শতাংশ বিল সংসদীয় কমিটিতে পৌঁছয়। তারপর ২০১৯ সালের পর দ্বিতীয় বার মোদী সরকার ক্ষমতায় এলে সেই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়। গতবছর ৮২ টি বিলের মধ্যে মাত্র ১৭ টি বিল আলোচনার জন্য পাঠানো হয় সংসদীয় কমিটিতে। এমনকি কখনো কখনো একই দিনে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করিয়েছে সরকার। যা থেকে সংসদ এবং সংসদীয় কমিটিগুলির গুরুত্ব অস্বীকার করছে কেন্দ্র। কার্যত এই ভাষাতেই কেন্দ্রকে তোপ দাগলেন তৃণমূল সাংসদ।
আরও পড়ুন: ইজরায়েল থেকে কেনা হয়নি পেগাসাস, রাজ্যসভায় দাবি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের
জহর বাবুর লেখনীতে ধরা পড়ল বাজপেয়ীর শাসনকালের কথাও। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী সংসদ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন অটল বিহারি বাজপেয়ি মাত্র ছয় বছরের ৭৭ বার সংসদে বিরোধীদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন। সেখানে গত ছয় বছরে মোদী মাত্র ২২ বার বিরোধীদের প্রশ্নে মুখ খুলেছেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এই তুলনা টেনে রীতিমতো বিজেপির দুই প্রধানমন্ত্রীর শাসনকালে গণতান্ত্রিকতার পার্থক্য তুলে ধরলেন তিনি। শুধু তাই নয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর সময় একাধিকবার আর্থিক বেহাল দশা নিয়ে তাকে উপহাস করতেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সেই মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী মোদীর চেয়ে সংসদে অনেক বেশি কথা বলেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
বাদল অধিবেশন শুরু হওয়ার পর থেকেই কৃষি বিল প্রত্যাহারের দাবিতে সরব বিরোধীরা। তারপর পেগাসাস কান্ড সেই বিরোধিতা আরও নতুন মাত্রা যোগ করে। প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতিতে যখন সংসদ বয়কটের পথে হেঁটেছেন বিরোধীরা। তখন বিরোধীদের ওপর দোষ চাপিয়ে কেন্দ্র জানায় বিরোধীদের অবিবেচকের মতো ভূমিকায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। এভাবেই বিরোধীদের কাঠগড়ায় তুলতে পদক্ষেপ করে অমিত সাহার।
কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের প্রেক্ষিতেই এবার কলম ধরলেন তৃণমূল সাংসদ। বিরোধীরা নয়, কেন্দ্রই সংসদের ভেতরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অবমূল্যায়ন ঘটাচ্ছে বলে মোদী-অমিত শাহদের কাঠ গড়ায় তুললেন তিনি। একদিকে বয়কট প্রতিবাদ অন্যদিকে জহর বাবুর এই আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া আসলে তৃণমূলের কৌশল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।