পটনা: আজ যে রাজা, কাল সে ফকির! হয়তো ভাগ্যের বিড়ম্বনা। কিন্তু, জীবনটা এমনই! বাঁধাধরা, পরিকল্পিত পথে চলে না। চিত্রনাট্য তাই আগে থেকে ঠিকও করে নেওয়া যায় না। চলার পথে ঘাত-প্রতিঘাতে প্রতিনিয়ত বদলাতে থাকে সে চিত্রনাট্য। বা, কখনও হঠাৎই এক লহমায় বদলে যায় জীবন! যার পূর্বাভাস থাকে না। আমরা বলি, ‘ভাগ্যের পরিহাস’! ভাগ্যের পরিহাস না হলে, আইআইটি-জেএএম (IIT-JAM) ক্র্যাক করা একটা ছেলে জেলে থাকবে কেন! তা-ও একবার নয়, পরপর দু-বার।
সুরজ কুমার। জেলবন্দি বিচারাধীন আসামি। বিহারের নওয়াদা জেলে রয়েছেন এই মেধাবী ছাত্র। মায়ের চোখে কানা ছেলেও পদ্মলোচন। নামে কী আর যায় আসে। কিন্তু, সুরজ– নিজের নামের সুবিচার করেছেন। তাই জেল কুঠুরির চার দেওয়াল আর অন্ধকার নয়। সেখানে সুরজের রোশনাই। জীবনের কঠিন সময়ও তাঁর স্বপ্নের বেলুনকে চুপসে দিতে পারেনি। জেলে বসেই জিইয়ে রেখেছেন ভবিষ্যতের স্বপ্নকে। বিজ্ঞানী হতে চান সুরজ কুমার।
সে তো অমলকান্তিও রোদ্দুর হতে চেয়েছিল! কিন্তু, সুরজের স্বপ্নে সেই ভাববিলাস নেই। নিজের স্বপ্ন ছুঁতে জেলের বিরূপ, প্রতিকূল পরিবেশেও একাগ্র থেকেছেন পড়াশোনায়। তাঁর নিরলস নিষ্ঠা, একাগ্রতা তাঁকে আরও একবার পৌঁছে দিয়েছে লক্ষ্যের কাছাকাছি।
আরও পড়ুন: Molokai Channel: চারপাশে হাঙর, বিপদসঙ্কুল হাওয়াইয়ের মলোকাই চ্যানেল পার হওয়াই চ্যালেঞ্জ কালনার সায়নীর
সুরজের বয়স ২২। নওয়াদা জেলে থাকা এই বিচারাধীন যুবক আইআইটি রুরকি-র জয়েন্ট অ্যাডমিশন টেস্ট ফর মাস্টার্স (JAM) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। র্যাঙ্ক ৫৪। জেল কর্তৃপক্ষও উচ্ছ্বসিত এই সাফল্যে। প্রথম নয়, গতবার পরীক্ষা দিয়েও নজরকাড়া ফল করেছিলেন। র্যাঙ্ক ছিল আরও আগে, ৩২। কিন্তু কলেজে ভর্তি হওয়ার আগেই এক ঘটনায় তাঁকে ঢুকতে হয় বিহারের নওয়াদার জেলে। এক বছর হয়ে গেলে তাঁর জেল জীবনের!
যার লালিত স্বপ্ন দেশের একজন বড় বিজ্ঞানী হয়ে ওঠা, তাকে যদি জেলে ঢুকতে হয়, যা হওয়ার তাই হয়েছিল। মানসিক ভাবে মুষড়ে পড়েছিলেন। কিন্তু, সেই বিরূপ ভাবনাচিন্তাকে প্রশ্রয় দেননি। ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে শুরু হয় তাঁর ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। সাথ দেয় জেল কর্তৃপক্ষও। যখন যে বই দরকার হয়েছে, জুগিয়ে গিয়েছে কর্তৃপক্ষ। মেধাবী এই ছাত্র তাঁদেরও নিরাশ করেননি। সুরজের সাফল্য তাই জেলকর্মীরাও আবেগাপ্লুত।
জেল কর্তৃপক্ষ জানায়, জমিবিবাদ সংক্রান্ত এক মামলায় বিচারাধীন সুরজ কুমার। ওই বিরোধের জেরে এক ব্যক্তির প্রাণহানিও হয়। সেই অভিযোগের তিরও সুরজের দিকেই। আদালতে সুরজ কুমারের মা বারবার দাবি করেছেন, তাঁর ছেলে নির্দোষ। ছেলেকে মিথ্যে অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে। কিন্তু, কেউ শোনেনি সুরজের মায়ের আর্তি। আসলে, আইন-আদালত প্রমাণ চায়। তাই, বিচার শেষ না-হওয়া পর্যন্ত সুরজের জীবনে অনিশ্চয়তার এই দোলাচল হয়তো থাকবে।
মা বলছেন, ‘ছেলে কোনও ঝুটঝামেলায় ছিল না। ও তো বিজ্ঞানী হতে চায়। কলেজে ভর্তি হতে বাড়ি এসেছিল। মিথ্যে মামলায় ওকে জড়ানো হয়েছে। ওকে আপনারা মুক্ত করুন। দেশের জন্য ও কিছু করতে চায়।’
আদালতের কাছে এক মায়ের করুণ আর্তি পৌঁছবে কি না, তা সময় বলবে। কিন্তু, যে আইনের দু’চোখই বাঁধা, তার কাছে কি ‘মানবিক চোখ’ আশা করা যায়? মায়ের মন সে আশাতেই…।