গান্ধীনগর: বিশ্ব পর্যটনের মানচিত্রে সবরমতী আশ্রমকে তুলে ধরতে চান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ তাই মহাত্মা গান্ধীর তৈরি আশ্রমের পুনর্গঠনের পরিকল্পনা নিয়েছে গুজরাত সরকার৷ রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও আশ্রমকে ‘ওয়ার্ল্ড ক্লাস টুরিস্ট স্পট’ বানানোয় আপত্তি জানিয়েছে সবরমতী আশ্রম প্রিভেনশন অ্যান্ড মেমোরিয়াল ট্রাস্ট (এসএপিএমটি)৷ গুজরাতি ও ইংরেজি ভাষায় সরকারকে লেখা দুটি চিঠিতে সেই আপত্তির কথা জানিয়েছেন ট্রাস্টের সদস্যরা৷ তাঁদের আশঙ্কা, আশ্রমকে বিশ্বমানের পর্যটক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হলে তা গান্ধীর ভাবধারার সঙ্গে খাপ খাবে না৷ বরং তাতে আশ্রমের আদর্শমন্ডিত পরিবেশ নষ্ট হবে৷
আরও পড়ুন: বুর্জ খালিফার জেরে তীব্র যানজট, মৃত্যু হৃদরোগে আক্রান্ত পুলিশকর্মীর
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরে আসার পর ১৯১৭ সালে সবরমতী নদীর তীরে আশ্রমটি তৈরি করেছিলেন মহাত্মা গান্ধী৷ ১০৪ বছর পর সেই আশ্রম ভোল বদলাতে চলেছে৷ সবরমতী আশ্রমকে ভেঙে নতুন করে গড়ে তুলতে গুজরাত সরকার ১২০০ কোটি টাকা খরচ করবে৷ পার্কিং লট, ওয়ার্ল্ড ক্লাস মিউজিয়াম, ক্যাফেটেরিয়া, পার্ক ইত্যাদি বানানো হবে৷ পাশাপাশি চন্দ্রভাঙা নদীর ধারার পুনরায় উৎপত্তি এবং আশ্রমকে দৃষ্টিনন্দিত করে তুলতে সৌন্দর্যায়ন করা হবে৷
সবরমতী আশ্রমের পুনর্গঠনের পরিকল্পনা অনেকদিনের৷ বিজয় রুপানি যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তখন আশ্রম ট্রাস্টকে চিঠি লিখে প্রজেক্টটিকে ছাড়পত্র দেওয়ার আবেদন করেছিলেন৷ তার জবাবে সরকারকে দুটি ভাষায় চিঠি লিখেছিল ট্রাস্ট৷ জানিয়েছিল, সরকারের পরিকল্পনায় তাদের সায় আছে৷ কিন্তু আশ্রম তৈরির সঙ্গে ওয়ার্ল্ড ক্লাস মিউজিয়াম বা টুরিস্ট ডেস্টিনেশন ইত্যাদি শব্দের ব্যবহার চলবে না৷ এই শব্দগুলি শুনলে মনে হবে যেন পর্যটক টানার প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছে সবরমতী আশ্রম৷ কিন্তু সেটা নয়৷ যে আদর্শ ও চিন্তাভাবনা নিয়ে মহাত্মা গান্ধী এই আশ্রম গড়ে তুলেছিলেন চাকচিক্যের মধ্যে তা এতটুকুও যেন চাপা না পড়ে৷
সবরমতী আশ্রম প্রিভেনশন অ্যান্ড মেমোরিয়াল ট্রাস্টের চেয়ারপার্সন এলা ভাট সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা কয়েকটি শর্তে আশ্রমের পুনর্গঠনের সরকারি প্রস্তাব মেনে নিয়েছি৷ সবার প্রথম হল, নতুনভাবে তৈরির পর আশ্রম ততটাই অনাড়ম্বর থাকবে যা এখন আছে৷ পর্যটকদের জন্য সরকার রাস্তা, পার্কিং লট বানাতে চাইছে৷ আমরা তাতে আপত্তি জানাইনি৷ কিন্তু গুজরাতি এবং ইংরেজি ভাষায় লেখা চিঠিতে পরিষ্কার করে এটাও জানিয়ে দিয়েছি, আমরা আশ্রমের শুদ্ধতা ও পবিত্রতা অটুট রাখতে চাই৷’
আরও পড়ুন: মহাত্মা’র নির্দেশেই ব্রিটিশদের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন সাভারকার, বিতর্ক উস্কে দাবি রাজনাথের
এদিকে গান্ধী আদর্শে বিশ্বাসী অনেক সমাজকর্মী এবং স্কলার আশ্রমের পুনর্গঠনের পরিকল্পনার বিরোধিতা করা শুরু করেছেন৷ অন্তত ১৩০ জন নাগরিক বিরোধিতা করে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন৷ তাঁদের মতে, সরকার এখানে ‘গান্ধী থিম পার্ক’ তৈরি করতে চলেছে৷ কেউ কেউ এটাকে ‘গান্ধীর দ্বিতীয় হত্যা’ বলেও তীব্র কটাক্ষ করেছেন৷ সমাজকর্মীদের আশঙ্কা, এতে আশ্রমের শান্ত এবং মনোরম পরিবেশ নষ্ট হবে৷ এটার নাম আশ্রম৷ কোনও সংগ্রহশালা নয়৷ আশ্রমের সরল ও সাধারণ পরিবেশ দেখতে মানুষ আসেন৷ কারওর অনুমতি ছাড়া বিনা বাধায় ঘোরাফেরা করা যায়৷ সবুজ গাছপালা ঘেরা জায়গায় পাখিদের কলরব শুনতে শুনতে সময় যায় কেটে৷ কিন্তু পুনর্গঠনের পর হয়তো দেখা যাবে আশ্রমের বাইরে পেল্লাই সাইজের গেট তৈরি হয়েছে৷ তখন গেটের বাইরে অপেক্ষারত প্রহরীদের অনুমতি নিয়ে আশ্রমে প্রবেশ করতে হবে৷