বেঙ্গালুরু: কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়৷ এবার তাঁদের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে সরকারি উচ্চ পদ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ আনলেন রাজ্যের এক সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার ড. এম সুধীন্দ্র রাও৷ কর্ণাটক দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি৷ কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের সীমাহীন টাকার লোভের ক্ষিদে মেটাতে না পারায় অনৈতিকভাবে তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়৷ ঘটনার কথা সামনে আসার পরই ইয়েদুরাপ্পা সরকারকে চেপে ধরেছে কংগ্রেস৷ গোটা ঘটনায় তারা বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি তুলেছে৷ কংগ্রেস মুখপাত্র গৌরব বল্লভ তোপ দেগে বলেন, ‘কোভিডের বিরুদ্ধে নয়, বরং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতি টিকিয়ে রাখতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন৷’
আরও পড়ুন: স্ত্রীর অভিযোগে ভুয়ো সিবিআই অফিসারের পর্দাফাঁস
২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর কেএসপিসিবি-র চেয়ারম্যান পদে বসেন ড. এম সুধীন্দ্র রাও৷ এই পদ পেতে মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ এক আত্মীয় এবং জেলা পঞ্চায়েতের সভাপতি মারিস্বামীর সঙ্গে তাঁর ১৬ কোটি টাকার ‘ডিল’ হয়৷ অভিযোগ, চেয়ারম্যান পদে বসার পর থেকেই মারিস্বামী তাঁকে ১৬ কোটি টাকা মেটানোর জন্য চাপ দিতে থাকে৷ টাকা মেটাতে ফ্ল্যাট, সোনা ও রুপোর গয়না এবং অন্যান্য সম্পত্তি বেচে দেন এম সুধীন্দ্র রাও৷ এমনকী বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ২ কোটি টাকা লোন নেন৷ সব মিলিয়ে গত বছর লকডাউনের আগে নগদে মোট ৯.৭৫ কোটি টাকা তিনি মারিস্বামীকে দেন৷
এর পর তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় মুখ্যমন্ত্রীর ছোট ছেলে বি ওয়াই বিজেয়ন্দ্র, নাতি শশীধর মারাদি এবং আত্মীয় সঞ্জয় শ্রীর সঙ্গে৷ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে তাঁর কাছে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার ফাইল পাঠাতে থাকেন ওই তিন জন৷ ওই ফাইলগুলিতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল৷ এম সুধীন্দ্র রাওয়ের অভিযোগ, তাঁর সইয়ের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর পরিবার সংশ্লিষ্ট সংস্থাদের কাছ থেকে ৬০ কোটি টাকা ঘুষ আদায় করে৷ কয়েকটি ফাইল অনুমোদনের জন্য খোদ মুখ্যমন্ত্রীও তাঁকে ফোন করে ‘চাপ’ দেন বলে অভিযোগ৷ সরকারি সফরে বিদেশে থাকাকালীনও বি এস ইয়েদুরাপ্পা তাঁকে ফোন করতেন৷ বলতেন, ‘ওগুলি জরুরি ফাইল৷ দ্রুত সই করে দিতে হবে৷’
এক স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাতকারে সুধীন্দ্র রাও বলেন, ‘আমার পক্ষে ফাইলগুলিতে সই করা খুবই কষ্টকর ছিল৷ দূষণ নিয়ন্ত্রণ আইনের পরোয়া না করেই এনওসি-র জন্য আবেদন করেছিল সংস্থাগুলি৷ যদিও আমি মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছিলাম, আপনার নির্দেশে ফাইলগুলিতে সই করে দিয়েছি৷ তাতে বেশ খুশিই হয়েছিলেন ইয়েদুরাপ্পা৷ আমাকে পরের দিন বাড়িতে ডেকে পাঠিয়েছিলেন৷’ কিন্তু ইয়েদুরাপ্পার আত্মীয়দের কাছে এ ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিলেন৷ অভিযোগ, এর পরই তাঁকে পদ থেকে সরানোর হুমকি দেওয়া হয়৷
আরও পড়ুন: তালিবান আতঙ্কে ৫০ কূটনীতিবিদ, জওয়ানকে দেশে ফেরাল ভারত
অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর আত্মীয়রা তাঁর স্বাক্ষর জোগাড় করে ইস্তফাপত্র তৈরি করে৷ সেই ইস্তফাপত্র সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷ সরকারও সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে নেয়৷ অথচ সুধীন্দ্র রাওয়ের দাবি, তিনি কোনও পদত্যাগপত্র সরকারের কাছে পাঠাননি৷ ২০২০ সালের ২ মে তাঁকে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়৷ পদ খুইয়ে তিনি মারিস্বামীর সঙ্গে দেখা করেন৷ সেই ৯.৭৫ কোটি টাকা ফেরত চান৷ কিন্তু মারিস্বামী তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেন৷ উপায় না পেয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর ছেলের সঙ্গে দেখা করেন৷ তাঁকে নিজের পরিস্থিতির কথা বলেন৷ জানান, এখন তিনি নিঃস্ব৷ বাড়ি, গাড়ি, গয়না সব বেচে দিয়েছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী ছেলে তাঁকে অন্য সরকারি সংস্থায় চেয়ারম্যানের পদ অফার করেন৷ সেই পদের জন্য সুধীন্দ্রর কাছে ৫ কোটি টাকা চাওয়া হয়৷ সুধীন্দ্র এবার হাত তুলে দেন৷ তার পরই নিজের দুর্দশার কথা জনসমক্ষে আনার সিদ্ধান্ত নেন৷
এমন ইস্যু পেয়ে লুফে নিয়েছে কংগ্রেস৷ জানিয়েছে, এত অভিযোগ সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের কোনও লজ্জাবোধ নেই৷ একের পর এক দুর্নীতির ঘটনায় তাদের নাম জড়িয়ে যাচ্ছে৷ মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইয়েদুরাপ্পার অবিলম্বে সরে দাঁড়ানো উচিৎ৷ কর্ণাটক হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির নজরদারিতে বিচারবিভাগীয় তদন্ত হওয়া দরকার৷