বহু যুগ আগে একদিন প্লেটোনিক একাডেমির বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্লেটো বলেছিলেন,“One of the penalties of refusing to participate in politics is that you end up being governed by your inferiors.” রাজনীতিতে অনীহা প্রদর্শনের অন্যতম শাস্তি নিজের থেকেও নিকৃষ্টদের দ্বারা শাসিত হওয়া৷
ঠিক এই কথাই যেন উঠে এল ভারতের প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশি’র গলায়৷ কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে কুরেশি বলেন, দেশের মোট ভোটারের প্রায় ৩০ শতাংশই বুথমুখী হন না, ভোট দেন না৷ ভোটাধিকার থাকা সত্ত্বেও বহু মানুষ ভোট দিতে আগ্রহী হয় না বলেই রাজনীতিতে দুর্বৃত্তদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করা অসম্ভব হয়ে উঠছে৷ রাজনীতির আঙিনায় দুর্বৃত্তদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে চাইলে প্রতিটি ভোটারকে বুথে আসতেই হবে৷ কুরেশির দৃঢ় বিশ্বাস, শুধু ভোটাধিকার প্রয়োগ করেই রাজনৈতিক আঙিনা থেকে দুর্বৃত্তদের হঠানো সম্ভব৷ সরকারি পরিসংখ্যান উল্লেখ করে দেশের প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, সাংসদদের ৪৩% শতাংশেরই কোনও না কোনওভাবে অপরাধের ইতিহাস রয়েছে৷ কুরেশির পরামর্শ, ভোট না দিতে যাওয়ার পরিবর্তে ভোট দিয়ে রাজনীতিকে দুর্বৃত্তমুক্ত করার চেষ্টা করা দরকার৷ ভোট দিয়ে সৎ মানুষদের নির্বাচিত করার সুযোগ যখন রয়েছে, তখন তা প্রয়োগ করা না হলে রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন রোখা কার্যত অসম্ভব ৷ নিজের কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা সামনে এনে কুরেশির প্রশ্ন, শহরের এলিট সম্প্রদায় ভোটের দিনটিকে স্রেফ একটা ছুটির দিন হিসেবে ধরে নেয়৷ কেন এমন হবে ? এই মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন৷
ওই অনুষ্ঠানেই রাজ্যের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত কুমার মিত্র বলেন, এই মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে কালো টাকার রমরমা৷ ফলে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন উঠতেই পারে, পরিস্থিতি যখন এমনই, তখন কাকে আর ভোট দেব ? সম্ভবত এই কারণেই নতুন প্রজন্মের ভোটারদের একটি অংশ ভোট দিতে আগ্রহ হারাচ্ছে৷ জয়ন্তবাবুর এই কথা মানতে চাননি কুরেশি৷ তিনি বলেন, আমি মেনে নিতে রাজি নই যে রাজনীতিবিদদের সবাই চোর৷ আজও রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের একাংশ সৎ ৷ তাঁরা ত্যাগের মন্ত্রে দীক্ষিত ৷ তবু যদি কোনও প্রার্থীকেই পছন্দ না হয়, তাহলেও বুথে যান এবং নোটায় ভোট দিন৷
পশ্চিমবঙ্গের ভোট নিয়েও অনেক কথা বলেন কুরেশি৷ তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে বাংলার কোনও অভিযোগ থাকা উচিত নয়৷ একুশের ভোটের ফলই তার প্রমাণ৷ পুরো কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা চার মাস এই রাজ্যে পড়েছিল৷ কিন্তু ফল তো হল অন্য ৷ কুরেশি বলেন, বাংলার ভোটে টাকার খেলা সেভাবে হয় না৷ তবে ভাবতে হয় ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে৷ যদিও ভোট মিটে গেলে নির্বাচন কমিশনের কোনও ক্ষমতাই থাকে না ৷ তাই ভোট পরবর্তী হিংসা দমনে কমিশনের ভূমিকা নগণ্য ৷