নয়াদিল্লি: ক্যান্সার। মারণ রোগ। এই মারণ রোগের বিভিন্ন ধরনের মধ্যে অন্যতম হলো সার্ভিক্যাল ক্যান্সার। আর এই সার্ভিক্যাল ক্যান্সারে প্রতি বছর ভারতে ৭৭ হাজারের মতো মহিলা মারা যান। একবিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে এসেও এটাই ছবি ভারতের। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পার করেও দেশের ৪৫ কোটিরও বেশি নারী ও মহিলা এই মারণ রোগের ঝুঁকিতেও রয়েছেন। ভারতের মহিলাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করে চলা সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে প্রসূতি বিশেষজ্ঞ (Obstetricians) এবং স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের (Gynaecologists) প্রতিনিধিত্ব করা দেশের বৃহত্তম সংস্থা ফেডেরেশন অবস্ট্রেটিক অ্যান্ড গাইনোলজিক্যাল সোসাইটিস অব ইন্ডিয়া (Federation of Obstetric and Gynaecological Societies of India), সংক্ষেপে এফওজিএসআই (FOGSI) এই বিষয়ে উদ্বেগের কথা কেন্দ্র সরকারকে (Central Government) জানিয়েছে। তাদের আর্জি, ভারত সরকার যেন তাদের জাতীয় কার্যক্রম (National Program)-এ এইচপিভি ভ্যাকসিন(HPV vaccine)-এর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে। কারণ, সার্ভিক্যাল ক্যান্সারে দেশের বহু মহিলা আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মারাও যাচ্ছেন। ভ্যাক্সিন (Vaccine) দেওয়া গেলে এই মারণ রোগের ঝুঁকি কমবে।
গত বুধবার (১৯ অক্টোবর) নয়াদিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স (AIIMS)-এ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি বৈঠকে আয়োজন করেছিল এফওজিএসআই। যৌথ উদ্যোক্তা ছিল এইমস। এই বৈঠকের থিম ছিল ‘অ্যাকসিলারেটিং অ্যাকশন ফর সার্ভিক্যাল ক্যান্সার মুক্ত ভারত’ (Accelerating Action for Cervical Cancer Mukt Bharat)।
আরও পড়ুন: World Osteoporosis Day 2022: জেনে নিন ঠিক কোন কোন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাড়
সার্ভিক্স বা জরায়ু গ্রীবার ক্যান্সার মূলত হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (Human Papilloma Virus)-এর সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। মাইল্ড ডিসপ্লাসিয়া (Mild Dysplasia) সমস্যা হিসেবে শুরু হওয়া এই রোগ ১০ থেকে ২০ বছরের ব্যবধানে সার্ভিক্যাল ক্যান্সারে আকার নেয়। ভারতের মহিলাদের ক্ষেত্রে যা অন্যতম চ্যালেঞ্জজনক স্বাস্থ্য সমস্যা। একটি রিপোর্টে জানা গিয়েছে, ভারতে প্রতি বছর ১ লক্ষ ২০ হাজার মহিলা এই রোগে আক্রান্ত হন আর একই সময় পর্বে ৭৭ হাজারের মতো মহিলা প্রাণ হারান। যা অত্যন্ত চিন্তার ও উদ্বেগের বিষয়। এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট থেকে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ১৫ বছরের উপরে ৪৫ কোটি ৩০ লক্ষ মেয়ে ও মহিলার সার্ভিক্যাল ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
এফওজিএসআই-এর মূল লক্ষ্য হল ভারত থেকে এই রোগকে নির্মূল করা। সার্ভিক্যাল ক্যান্সারকে রোখার একমাত্র উপায় হল এইচপিভি ভ্যাকসিন এবং এই রোগের নিয়মিত স্ক্রিনিং। সম্প্রতি দেশে ভারতীয় প্রযুক্তিতে এইচপিভি ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে। শীঘ্রই তা অন্যদেশেও বাজারজাত করা হবে। ফলে ফেডেরেশন অবস্ট্রেটিক অ্যান্ড গাইনোলজিক্যাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়া চায় দেশের সরকার যাতে এই ভ্যাকসিনকে তাদের কার্যক্রমের অধীনে নিয়ে আসে। তাতে দেশের গ্রামাঞ্চল এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা মহিলাদের সুবিধা হবে। সবার আগে দরকার এই রোগের বিষয়ে জনসচেতনতা। তবেই সার্ভিক্যাল ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ থেকে দেশের মেয়ে ও মহিলাদের বাঁচানো সম্ভব হবে। বিশেষ করে এইচপিভি ভ্যাকসিন দেওয়া গেলে সার্ভিক্যাল ক্যান্সারের সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ কমে যায়।