পিনাকী চক্রবর্তী: পাখিদের পাঠশালায় ককিল গুরু যেমনি করে পাঠ শেখান, এ পাঠশালা তেমন পাঠশালা নয়। এখানে প্রথমেই মানতে হয় কাঠোর সহবত। শিখতে হয় দল থেকে বিচ্যুত হয়ে একা টিকে থাকার জঙ্গল জীবন। ছবিটা জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের হলোং সেন্ট্রাল পিলখানার। রাজ্যের ওই জায়গাই বনদপ্তরের খাতায় একমাত্র ‘এলিফ্যান্ট স্কুল’ হিসেবে পরিচিত। যেখানে ঠাঁই দেওয়া হয় দল ও মা পরিত্যক্ত হস্তি শাবকদের। বছরের পর বছর ধরে না-মানুষদের ওই স্কুলে পাঠ শিখে আসছে দলছুট হাতির বাচ্চারা। পরবর্তীতে তারাই কুনকি হওয়ার পাঠ শেষে বনদপ্তরের কর্মী হিসেবে নিয়োজিত হয় বনসুরক্ষার কাজে। বনদপ্তের নথি বলছে যেখানকার ‘সাকসেস রেট’ প্রায় একশো শতাংশ।
ঠিক কীভাবে ওই এলিফ্যান্ট স্কুুলে আসে ছাত্ররা? অনেক সময়েই ডুয়ার্সের বনাঞ্চল অথবা দক্ষিণবঙ্গে নানান কারনে দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সদ্যজাত হাতির বাচ্চারা। একবার মানুষের সংস্পর্শে এসে গেলে হাতিদের সমাজ জংলী নিয়ম মেনে তাদের আর দলে ফেরায় না। মায়ের ইচ্ছে থাকলেও দলপতির বারণে মায়ের অপত্য স্নেহ হারমানে বনের অনুশাসন মেনে। তখনই অগতির গতি হয়ে তাদের কাছে টেনে নেয় ওই এলিফ্যান্ট স্কুল। এই মুহূর্তে জলদাপাড়ায় রয়েছে এমন ছয়টি দলছাড়া হাতির শাবক। যারা বনদপ্তরের তত্বাবধানে বেড়ে উঠছে ধীরে ধীরে। আগামীতে তারাই সামলাবে বনসুরক্ষার কাজ। তাদের নাম বীর, পারমিতা, কলাবতী, রেয়ান হলেও, তারা আদতে না-মানুষ। এখন তারা কুনকির পাঠ নিতে বাধ্য পড়ুয়ার মতো দিন কাটায় ওই আবাসিক স্কুলে। একদিন সব পাঠ ও সহবত শিক্ষা চুকিয়ে ওরাই জঙ্গল দেখভালে পারদর্শী হয়ে উঠবে। ফলে জঙ্গলের মাহুত থেকে বনকর্তারাও ওদের না-মানুষ থেকে প্রায় মানুষ করার পথকে মসৃন করতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে আসছেন যুগ যুগ ধরে।
আরও পড়ুন: বিজেপির পূর্বাঞ্চলীয় পঞ্চায়েতিরাজের সম্মেলন উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী
উল্লেখ্য, বিশ্ব হাতি দিবস আজ। ২০১২ সাল থেকে আজকের এই দিনটিতে পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব হাতি দিবস।জনসচেতনতা বাড়াতে ২০১২ সালে কানাডিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা প্যাট্রিসিয়া সিমস ও মাইকেল ক্লার্ক এবং থাইল্যান্ডের এলিফ্যান্ট রিইন্ট্রোডাকশন ফাউন্ডেশনের প্রধান শিভাপর্ন দারদারানন্দ বিশ্ব হাতি দিবস প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবস পালিত হয়।