কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: ঝাঁটা হাতে প্রায় বৃদ্ধা এক মহিলা মন্দিরে ঝাঁট দিচ্ছেন। পুজোও দিলেন। এটা কোনও আশ্চর্য ঘটনা নয় এদেশে। কিন্তু, এই মহিলার সঙ্গে রয়েছে বিরাট নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এলাকার মানুষজনও খানিকটা হকচকিয়ে গেলেন, এই দৃশ্য দেখে। তাঁদের অনেকেই তাঁকে চেনেন। এ যে তাঁদেরই গ্রামের মেয়ে দ্রৌপদী!
ওডিশার ময়ূরভঞ্জ জেলার রায়রঙ্গপুরের বৈদাপোসি গ্রামকে কে চিনত? কিন্তু মঙ্গলবার রাত থেকে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গিয়েছে রায়রঙ্গপুর। দেশের লোকের মুখে মুখে ঘুরছে বৈদাপোসি গ্রামের নাম। কারণ, এই গ্রামেরই ভূমিকন্যা দ্রৌপদী মুর্মু বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী। যাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী একদা তাঁরই বয়োজ্যেষ্ঠ সহকর্মী যশবন্ত সিনহা।
দ্রৌপদী মুর্মু। ওডিশার আদিবাসী নেত্রী। ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন রাজ্যপাল। স্বাধীনতার ৭৫ বছর বয়সে দ্রৌপদী মুর্মু যদি নির্বাচিত হন, তাহলে তিনি হবেন দেশের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি। দ্বিতীয় মহিলা রাষ্ট্রপতি। এমনকী স্বাধীনতার পর জন্মগ্রহণ করা প্রথম রাষ্ট্রপতি। এমনকী ওডিশার ভূমিপুত্রী হিসেবে দ্বিতীয়, এর আগে ওডিশা থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন ভি ভি গিরি।
দ্রৌপদী মুর্মুর রাজনৈতিক উত্থানও অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে। ১৯৫৮ সালের ২০ জুন অনগ্রসর জেলা ময়ূরভঞ্জের বৈদাপোসি নামে এক অজ গাঁয়ে তাঁর জন্ম। বাবা ছিলেন বিরাঞ্চিনারায়ণ টুডু ছিলেন গাঁয়ের মোড়ল। সেইসব দিনে এক আদিবাসী মেয়ে শহরে এসে লেখাপড়া শিখবে, তা অনেকে কল্পনাতেও আনতে পারতেন না। দ্রৌপদী সমাজ বিশেষত সাঁওতালি সমাজের সে সমস্ত কুসংস্কারের বেড়া ভেঙে তা করে দেখিয়েছিলেন। ভুবনেশ্বরে এসে রমাদেবী কলেজ থেকে স্নাতক হন। তারপর একটি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি নেন। এরপর তাঁর বিয়ে শ্যামচরণ মুর্মুর সঙ্গে। কিন্তু, অল্পবয়সেই তাঁর ৩ ছেলেমেয়ের মধ্যে ২ ছেলে ও স্বামীর মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন: Corona Updates India: ফের ঊর্ধ্বমুখী দৈনিক করোনা সংক্রমণ, অ্যাক্টিভ কেস ছাড়াল ৮০ হাজার
৫ বছর আগে যখন প্রয়াত প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মেয়াদ শেষ হয়, তখনও দ্রৌপদী মুর্মুর নাম উঠেছিল। কারণ তিনি খোদ নরেন্দ্র মোদির বিশেষ পছন্দের প্রার্থী। কিন্তু সে সময় দল রামনাথ কোবিন্দকে চাওয়ায় পিছিয়ে পড়েন দ্রৌপদী। রায়রঙ্গপুর থেকে বিধানসভা ভোটে জিতে ওডিশায় বিজেপি-বিজেডি (২০০০-২০০২) জোট সরকারে তিনি বাণিজ্য ও পরিবহণ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। এছাড়াও মৎস্য ও পশুপালন (২০০২-২০০৪) দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। এরপর ঝাড়খণ্ডের প্রথম মহিলা ও দেশের প্রথম আদিবাসী মহিলা রাজ্যপাল হিসেবে দল তাঁকে মনোনীত করে।
কেন বিজেপি দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করল? কারণ, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়ের বিধানসভা নির্বাচন আছে সামনেই। এই চার রাজ্যের ১২৮টি আসন তফশিলি উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত। উচ্চবর্ণীয় দল বলে তকমা আঁটা বিজেপি গত ভোটগুলিতে এই ১২৮টির মধ্যে মাত্র ৩৫টি পেয়েছিল। দ্রৌপদী মুর্মুকে প্রার্থী করে বিজেপি ওই কেন্দ্রগুলিতে শক্তিবৃদ্ধির চেষ্টা করবে। এছাড়াও ওডিশার নবীন পট্টনায়কের পূর্ণ সমর্থন পাবে তারা। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেএমএম নেতা হেমন্ত সোরেনকেও আদিবাসী সুড়সুড়িতে বগলদাবা করবে তারা। পাশাপাশি বিজেপি স্বপ্ন দেখছে ভারতীয় আদিবাসী পার্টির মতো কিছু ছোট দল তাদের সমর্থন দেবে। যাদের গুজরাত ও রাজস্থানে কিছু বিধায়ক আছে।