কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি ১৯৮০ সালের বন সংরক্ষণ আইনে কিছু সংশোধনী এনেছে সংসদে। ২০২২ সালের এই নতুন ধারায় বলা হয়েছে, এখন থেকে জঙ্গলের অধিবাসী এবং গ্রামসভার অনুমোদন ছাড়াই নির্বিচারে জঙ্গল কাটা যাবে। শুধু তাই নয়, সেই জঙ্গল এবার থেকে বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যবহার করা যাবে। গত ২৮ জুন সংসদে ওই আইনের সংশোধনী পাশ হয়ে গিয়েছে।
বিরোধীরা অভিযোগ করছেন, এই নতুন ধারার ফলে আদিবাসীদের জঙ্গলের অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হবে। খুব সহজেই এখন কেন্দ্রীয় সরকার কিংবা কোনও বেসরকারি সংস্থা আদিবাসীদের জঙ্গল থেকে উচ্ছেদ করতে পারবে। আগে নিয়ম ছিল, বাণিজ্যিক স্বার্থে জঙ্গল ব্যবহার করতে হলে সেখানকার অধিবাসীদের অনুমতি নিতে হত। নতুন ধারায় তারও সংস্থান থাকছে না। এতে আদিবাসীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবারই রাষ্ট্রপতি পদে এই প্রথম কোনও আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হলেন দ্রৌপদী মুর্মু। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, আদিবাসী হিসেবে রাষ্ট্রপতি কেন্দ্রের এই বিপজ্জনক ধারা মানবেন কি না। ২০১৭ সালে ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল থাকাকালীন দ্রৌপদী দুটি বিল আটকে দিয়েছিলেন। ওই সংশোধনীতে বলা হয়েছিল, আদিবাসীরা নিজেদের জমি বাণিজ্যিক স্বার্থে কাজে লাগাতে পারবেন। এই বিলে অনুমোদন দিলে আদিবাসীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে, এই যুক্তিতে তখনকার রাজ্যপাল দ্রৌপদী তা আটকে দেন।
দ্রৌপদীর এই অতীতকে টেনে এনেই বিরোধীরা বলছেন, এবার রাষ্ট্রপতি কী করবেন। তিনি কি কেন্দ্রের আনা ওই সংশোধনী মেনে নেবেন?
আদিবাসীদের অরণ্যের অধিকারের দাবিতে যাঁরা লড়াই করেন, তাঁরা ইতিমধ্যেই ওই সংশোধনী ধারা বাতিলের দাবি তুলেছেন। বিরোধীরা বলছেন, এই সংশোধনী ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়েরও পরিপন্থী। তাছাড়া এটি ২০০৬ সালের বন অধিকার আইনেরও বিরোধী। ২০১৩ সালে ওডিশা মাইনিং কর্পোরেশন বনাম কেন্দ্রীয় সরকার মামলায় শীর্ষ আদালত ওডিশার নিয়ামগিরিতে আদিবাসী ডোংরিয়া কান্ধাদের বসবাসের অধিকারকে মান্যতা দিয়েছিল। একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়ে এ ব্যাপারে গ্রামসভার আইনি ভূমিকার উপরেও জোর দেওয়া হয়।
বিভিন্ন মহল মনে করছে, নতুন এই সংশোধনীর ফলে নির্বিচারে অরণ্য নিধন হবে। জঙ্গলের আদিবাসীদের জীবনযাত্রা ব্যাহত হবে। রাষ্ট্রপতি নিজে একজন আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধি। তাঁর নিজের রাজ্য ওডিশায় প্রচুর আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা রয়েছে। সেই সব এলাকার আদিবাসীরা এমনিতেই চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁদের জন্য নতুন রাষ্ট্রপতি কী করেন, সেটাই দেখার।