নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রীর নামেই তহবিল। তিনিই চেয়ারম্যান। তহবিলের ঠিকানা সাউথ ব্লকে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের দাবি ছিল, পিএম-কেয়ার্স (প্রাইম মিনিস্টার্স সিটিজেন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যান্ড রিলিফ ইন এমারজেন্সি সিচ্যুয়েশন ফান্ড) তহবিলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই! এই তহবিল কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন নয়। এর কাজকর্মেও সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। এ-সকল কারণে পিএম-কেয়ার্স নিয়ে প্রথম থেকেই বিতর্ক ছিল। এবার আদালতের প্রশ্নের মুখে ২০২১-এর মার্চে কোভিডের মোকাবিলায় তৈরি পিএম-কেয়ার্স তহবিল।
দিল্লি হাই কোর্ট গতকাল, মঙ্গলবার দেশের সংবিধানের দ্বাদশ অনুচ্ছেদের অধীনে পিএম কেয়ার্স তহবিলকে ‘রাজ্য’ (স্টেট) হিসাবে ঘোষণা করার জন্য এক পিটিশনের এক পাতার উত্তর দেওয়ার জন্য কেন্দ্রকে তিরস্কার করে। হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মা এবং বিচারপতি সুব্রহ্মণ্যেম প্রসাদের ডিভিশন বেঞ্চ কেন্দ্রের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, “আপনারা এই মামলায় উত্তর দিয়েছেন। কিন্তু, এত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে মাত্র এক পাতার জবাব! মামলাকারী আইনজীবীর সওয়ালের কোনও উল্লেখ নেই। মামলাকারীর তরফে যে যে বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে তার প্রতিটির জবাব দিতে হবে।” ডিভিশন বেঞ্চের স্পষ্ট নির্দেশ, আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যেই এই বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করতে হবে। পরবর্তী শুনানি ১৬ সেপ্টেম্বর।
উল্লেখ্য, সংবিধানের ১২ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে পিএম-কেয়ার্স তহবিলকে সরকারি তহবিল হিসাবে ঘোষণা করা উচিত। এমনই দাবি করে হাই কোর্টে এক পিটিশন দাখিল করা হয়েছিল। ২০২১ সালের মার্চে কোভিডের মোকাবিলায় পিএম-কেয়ার্স তহবিল তৈরি হয়েছিল। শুধু যে প্রধানমন্ত্রী তার চেয়ারম্যান, তা নয়। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী তহবিলের অছি পরিষদের সদস্য। তার ওয়েবসাইটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি রয়েছে। নামের সঙ্গে জাতীয় প্রতীক অশোক স্তম্ভও রয়েছে। তাতে চাঁদা চেয়ে সরকারি খরচে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, ব্যাঙ্কের কর্মীদের বেতন কেটে তহবিলে টাকা জমা করা হয়েছে। রেল থেকে বিদেশ মন্ত্রক, শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রক— সরকারের প্রতিটি মন্ত্রকই কোটি কোটি টাকা এই তহবিলে অনুদান হিসেবে জমা করেছে।
আরও পড়ুন- PM Modi: মোদির টুইস্ট, অশোকস্তম্ভের সিংহের রূপবদল কার নির্দেশে? নিন্দার ঝড়
এমন একটা তহবিলের কোনও হিসাব পরীক্ষা অবশ্য হয়নি। এ নিয়ে বারবার বিরোধীরা দাবি জানালেও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বারবারই দাবি করা হয়েছে, এটা সরকারি তহবিল নয়। তাতে প্রশ্ন বেড়েছে বই কমেনি। বিতর্ক বাড়তে থাকায় গত বছর প্রধানমন্ত্রীর দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি প্রদীপকুমার শ্রীবাস্তব দিল্লি হাই কোর্টে হলফনামা দিয়ে দাবি করেছিলেন, এই তহবিলে বাজেট থেকে কোনও অর্থ বরাদ্দ করা হয় না। শুধু মাত্র স্বেচ্ছায় অনুদানই জমা পড়ে। সংবিধান বা সংসদের তৈরি কোনও আইনের মাধ্যমে এই তহবিল তৈরি করা হয়নি। তার পরই কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবির প্রশ্ন তোলে, পিএম-কেয়ার্সের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কোনও সম্পর্ক না থাকলে তিনি কেন একটা বেসরকারি তহবিলে চাঁদা জোগাড়ের জন্য নিজের পদের অপব্যবহার করছেন। খোদ অর্থ মন্ত্রকের রাজস্ব দফতর সার্কুলার জারি করে জানিয়েছিল, ‘কারও আপত্তি না থাকলে এক বছর পর্যন্ত ইচ্ছুক কর্মীদের প্রতি মাসে একদিনের বেতন কেটে পিএম-কেয়ার্সে জমা করা হবে।’ এ নিয়েও প্রশ্ন তোলে কংগ্রেস, পিএম-কেয়ার্সে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা জমা পড়েছে। সেই টাকা কোথায় গেল?