সরকার কবেই ঘোষণা করেছিল ‘হাম দো হামারে দো’, সেই লক্ষেই এগোচ্ছে গোটা দেশ। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে চলা পরিবার পরিকল্পনার সুফল পাচ্ছে ভারত। দেশে ধীরে ধীরে জনসংখ্যার হার কমছে। আগে ভারতে বড় পরিবারের চল ছিল। কিন্তু বর্তমানে মানুষের চিন্তাধারা বদলেছে। তার প্রভাব পড়েছে মানুষের জীবনযাত্রায়। জন্মনিয়ন্ত্রণের কারণেই পরিবারের সদস্য সংখ্যা কমছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক (Union Health Ministry) বুধবার জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা (National Family Health Survey) বিষয়ক রিপোর্ট সামনে এনেছে। এনএফএইচএস-এর এই সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৫-২০১৬ সালে গোটা দেশে টিএফআর (Total Fertility Rate) ছিল ২.২ শতাংশ, এখন তা কমে হয়েছে ২.০ শতাংশ। পরিবার পরিকল্পনার কারণেই যে টিএফআর কমছে রিপোর্টে সে উল্লেখ রয়েছে।
মহিলা-পিছু সন্তানের গড় হিসেবের ওপর ভিত্তি করেই টোটাল ফার্টিলিটি রেট নির্ণয় করা হয়।
এনএফএইচএস-এর ২০১৯-২১-এর তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, বর্তমানে ভারতের শহরাঞ্চলে প্রজনন হার (Fertility Rate) এসে দাঁড়িয়েছে ১.৬ শতাংশে এবং গ্রামীণ অঞ্চলে এই হার ২.১ শতাংশ। যার অর্থ শহরের মহিলারা দু’টি সন্তানও ধারণ করছেন না। রাষ্ট্রসংঘের জনসংখ্যা বিভাগের মতে, যেসব দেশে মহিলা-পিছু প্রজনন হার ২.১-এর নীচে, ধরে নিতে হবে সেখানকার মহিলারা পর্যাপ্ত সংখ্যক সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন না। যার দরুন জনসংখ্যাও কমছে। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর পপুলেশন সায়েন্সের ডিরেক্টর কে এস জেমসের মতে, টিএফআর ২ শতাংশ হওয়ার অর্থই হল দেশের দীর্ঘমেয়াদী জনসংখ্যা এখন স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। এখন প্রত্যেক পরিবারে ২ জন করে সন্তানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এর ফলে যেমন মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে, তেমনি দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে যাবে।
আরও পড়ুন : মোহন ভগবতের ‘পপুলেশন পলিসি’ কি অভিন্ন দেওয়ানি বিধির খণ্ডিত রূপ ?
ভারতের পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের সভাপতি কে. শ্রীনাথ রেড্ডি মনে করেন, দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে এর সদর্থক প্রভাব পড়বে। তাঁর মতে, উন্নয়নের ক্ষেত্রে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ। জনস্বাস্থ্য এবং শিক্ষায় আরও বেশি করে বিনিয়োগ করার কথাও তিনি উল্লেখ করেন। একইসঙ্গে পরিবেশ সুরক্ষার উপর জোর দেওয়া প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন।
রেড্ডি জানান, টিএফআর ২.১-এর নীচে নামার অর্থ হল দেশ ক্রমেই জনসংখ্যার স্থিতিশীলতার দিকে এগোচ্ছে। মনে করা হয়েছিল, ২০২৪ থেকে ২৮-এর মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হয়ে উঠবে ভারত। কিন্তু জন্মনিয়ন্ত্রণের কারণে এখন তা হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বলেই মনে করেন তিনি।
অধ্যাপক রেড্ডি আরও জানিয়েছেন, এই জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর চাপ পড়ছিল। যদি আমরা এই জনসংখ্যাকে স্থিতিশীল রাখতে পারি, তা হলে পরিবেশকেও রক্ষা করতে পারব। সমীক্ষায় দেখা গেছে ২ শতাংশের উপর টিএফআর রয়েছে মোট ৫টি রাজ্যে। এই ৫টি রাজ্য হল বিহার(৩), মেঘালয় (২.৯), উত্তরপ্রদেশ (২.৪) এবং ঝাড়খন্ড(২.৩) এবং মণিপুর(২.২)।
সেখানে পশ্চিমবঙ্গে টিএফআর ১.৬ শতাংশ। ভারতের আরও দুই রাজ্য মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানেও মহিলা-পিছু গড় টিএফআর ১.৬। মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, অন্ধপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরায় টিআরএফ গড়ে ১.৭ শতাংশ। দেশের আরও ৬টি রাজ্য কেরালা, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, অরুণাচল প্রদেশ, ছত্তিসগড় এবং ওড়িশায় গড় টিআরএফ হল ১.৮ শতাংশ। এ ছাড়াও হরিয়ানা, অসম, গুজরাত, উত্তরাখণ্ডে এবং মিজোরামে টিআরএফ ১.৯ শতাংশ। এনএফএইচএস তাদের প্রথম সমীক্ষায় এই সকল রাজ্যগুলিকে নিয়ে বুধবার এই ফল প্রকাশ করে। সমীক্ষার দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ১৪টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করে ফল প্রকাশ করবে বলে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন : জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট নীতি দরকার: মোহন ভাগবত
জনসংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে, পরিবার পরিকল্পনা, মেয়েদের বিবাহের বয়স এবং নারীর ক্ষমতায়নের জন্যই এটি সম্ভব হয়েছে। পপুলেশন ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়ার নির্বাহী পরিচালক পুনম মুত্রেজার মতে, মহিলাদের মধ্যে বন্ধ্যাত্বকরণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায় পরিবার পরিকল্পনার দায়িত্ব নিচ্ছেন মেয়েরা। তিনি আরও জানিয়েছেন, পুরুষরাও যদি পরিবার পরিকল্পনার দায়িত্ব নেয়, সে বিষয়ে সরকারের উচিত তাঁদেরও আরও সচেতন করা। আধুনিক প্রজন্মের মধ্যে গর্ভনিরোধকের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। যার জেরে জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন : চতুর্থ স্তম্ভ : মুসলিম জনসংখ্যা হু হু করে বাড়ছে
এনএফএইচএস-এর (National Family Health Survey) তরফে ২০১৫-২০১৬ সালে করা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছিল, টিএফআর (Total Fertility Rate) ছিল ২.২ শতাংশ, যা হ্রাস পেয়ে হয়েছিল ২.০ শতাংশ। এরপর এনএফএইচএস-এর ২০১৯-২১-এর তথ্য থেকে জানা যায়, ভারতের শহরাঞ্চলে প্রায় ১.৬ শতাংশ এবং গ্রামীণ অঞ্চলে ২.১ শতাংশ হারে জনসংখ্যা কমেছে। বুধবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে এই তথ্য জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিভাগের মতে, মহিলাদের ২.১ শতাংশ হাতে কম সন্তান ধারণের অর্থই হল একটি দেশের জনসংখ্যা হ্রাসের অন্যতম কারণ। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর পপুলেশন সায়েন্সের ডিরেক্টর ডাঃ কে. এস. জেমসের মতে, টিএফআর ২ শতাংশ হওয়ার অর্থই হল দেশের দীর্ঘমেয়াদী জনসংখ্যা এখন স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। এখন প্রত্যেক পরিবারে ২ জন করে সন্তানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এর ফলে যেমন মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে, তেমনি দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে যাবে।
ভারতের পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক কে. শ্রীনাথ রেড্ডি টিএফআর ২ শতাংশে নেমে যাওয়ার প্রেক্ষিতে ৩টি কারণ তুলে ধরেছেন। যার মধ্যে আছে, দেশের উন্নয়ন, যার জন্য এই জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়া একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। দ্বিতীয়ত, জনস্বাস্থ্য এবং শিক্ষায় আরও বেশি করে বিনিয়োগ, এবং সব শেষে পরিবেশের সুরক্ষার উপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। তিনি আরও জানান, দেশের জনসংখ্যায় ২.১ টিএফআর-এর পতনের অর্থই হল দেশ ক্রমেই জনসংখ্যার স্থিতিশীলতার দিকে এগোচ্ছে। মনে করা হয়েছিল, ২০২৪ থেকে ২৮-এর মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হয়ে উঠবে ভারত। কিন্তু এখন তা হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বলেই মত প্রকাশ করেন অধ্যাপক রেড্ডি।