নয়াদিল্লি: লকডাউনের জেরে দেশে রাতারাতি কাজ হারিয়েছিলেন কয়েক কোটি অসংগঠিত শ্রমিক । এ বার সংবাদ মাধ্যমের ক্ষেত্রেও উঠে এল ভয়াবহ সঙ্কটের ছবি । সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি (সিএমআইই,CMIE )-র সাম্প্রতিক তথ্য জানাচ্ছে, গত ১২ মাসে সংবাদ মাধ্যম এবং প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত কর্মীর সংখ্যা প্রায় দুই লাখ কমে গিয়েছে ৷ গত চার বছরের হিসেবে সংখ্যাটা পাঁচ লাখের কাছাকাছি ৷
সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি(Centre for Monitoring Indian Economy ) তাদের সম্প্রতি প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে জানিয়েছে, গত চার বছরে সংখ্যাটা ৮.৩ লাখ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৩.৭ লাখে ৷ শতকরা হিসেবে যা ৫৬ শতাংশ ৷ গত পাঁচ বছরের হিসাবে পরিসংখ্যানটা আরও ভয়াবহ ৷ তাতে দেখা গিয়েছে, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মীর সংখ্যা ছিল ১০.৩ লাখ ৷ আর ২০২১ সালের অগস্টে কর্মীর সংখ্যা ২.৩ লাখ ৷ অর্থাৎ, শতকরা হিসেবে প্রায় ৭৮ শতাংশ কমে গিয়েছে ৷
ভারতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের আগে থেকেই দেশের অর্থনীতি ধুঁকছিল । আর গত বছর মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে লকডাউন শুরু হতেই কার্যত ভেঙে পড়ে অর্থনীতির মেরুদণ্ড । বহু সংস্থা বন্ধ হয়ে গিয়েছে কিংবা বিপুল কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হেঁটে টিকে থাকার লড়াই করছে । সেই ধাক্কা যে কতটা বড়, তা বোঝা গেল অর্থনৈতিক সমীক্ষাকারী সংস্থা সিএমআইই-র শেষ প্রকাশিত তথ্যে ।
সিএমআইই-র তথ্য অনুযায়ী লকডাউনের ধাক্কা কাটিয়ে এপ্রিলের শেষের দিক থেকেই অবশ্য অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের হার বাড়ছে । কিন্তু বেতনভূক কর্মীদের ক্ষেত্রে সেই হার নিম্নমুখী । গত এপ্রিল থেকে এই ক্ষেত্রে যে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছিল, এখনও তা বন্ধ হয়নি । কিন্তু, এই ধাক্কা যে সহজে কাটিয়ে ওঠা যাবে, এমনটাও নয় । অর্থনীতিবিদদের ধারণা, অতিমারি এবং তার জেরে লকডাউন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিরাট আঘাত করেছে । গোটা দেশের অর্থনীতিতেই চাহিদা কমে যাওয়ায় বেতনভুক কর্মীদের ক্ষেত্রে তা আরও মারাত্মক আকার নিয়েছে । সংস্থা জানিয়েছে, পরস্থিতি খারাপ ছিলই, যা করোনা এবং অতিমারিতে আরও তীব্র হয়ে ওঠে ৷
আরও পড়ুন-কর্মীরাই সম্পদ, বিধায়ক-সাংসদ ভাঙিয়ে বিজেপিকে শেষ করা যায় না: সুকান্ত মজুমদার
এই ডামাডোলের মধ্যেও একটি বিষয় স্পষ্ট নয়, ভারতের সংবাদ মাধ্যমের আর্থিক স্বাস্থ্য কি সত্যিই এত দুর্বল যে, দু’মাস বিজ্ঞাপনে কোপ পড়লে সংস্থা বন্ধ করে দেওয়ার উপক্রম হয় ? নাকি বৃহত্তর পরিবর্তনের অঙ্গ হিসেবেই চলছে ব্যয় সঙ্কোচন ? তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, দেশে সংবাদ মাধ্যমের সার্বিক ছাঁটাই এবং বেতনে কোপের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন খবরের কাগজে কাজ করা কর্মীরা । টিভি কিংবা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিউজ করা সংস্থাগুলোতে যে একেবারেই ছাঁটাই কিংবা বেতনে কোপ পড়েনি তা নয়, কিন্তু সবচেয়ে বেশি প্রভাব খবরের কাগজেই ।
আরও পড়ুন-করোনার ‘জুজু’ দেখিয়ে ত্রিপুরায় সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা, অনিশ্চিত অভিষেকের পদযাত্রা
দেশের প্রথম সারির কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ঘটা বেতন সঙ্কোচন, লাগাতার ছাঁটাই ও বেতন কমানোর অভিযোগ তুলে বম্বে হাইকোর্ট থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্ট, একের পর এক মামলা হয়েছে । কোনও মামলাতে কেন্দ্র, রাজ্য-সহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কাছে জবাবদিহি তলব করেছে আদালত, আবার কোথাও ব্যবসা চালু রাখতে ছাঁটাই করা ছাড়া উপায় নেই বলে জানিয়েছে মালিক পক্ষ।
সমস্যা আরও বেড়েছে যে হারে চাকরি থেকে ছাঁটাই করেছে সংস্থাগুলি, আনলক পর্যায়ে সেই হারে কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি বা পুরনো কাজ ফেরত পাননি কাজ হারানো কর্মীরা । সমীক্ষা বলছে, আনলক-এর সময় চাকরি পুনরুদ্ধারের হার অত্যন্ত ধীর ।