খড়গপুর: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হাফ প্যান্ট পড়তে বলেছিলেন। তাছাড়াও বিভিন্ন সময়ে মহিলাদের প্রতি কটূক্তি করার অভিযোগ রয়েছে দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে। এবার দলের মহিলা কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্য করেছেন বঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। যা নিয়ে দলের রাজ্য সভাপতিকে পালটা হুমকি দিয়েছেন ওই বিদায়ী কাউন্সিলর।
আরও পড়ুন- বিদ্যাসাগর সেতুতে বাইক আরোহীকে পিষে দিল বাস
রবিবার খড়্গপুর পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডে জলবন্দি বাসিন্দাদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে ‘বেফাঁস’ মন্তব্য করে বসেছিলেন মেদিনীপুরের সাংসদ। তিনি বলেছিলেন, “আমি যদি সব করে দেব, আপনারা কি বাড়িতে বসে ঘুমাবেন। আমি সাংসদ কোটার টাকা দিয়েছি, এরপর বাড়ির পাশে নর্দমাও করে দেব?….যান গিয়ে কাউন্সিলরের বাড়ির সামনে মলত্যাগ করে আসুন, কাদা জমা করুন! ওনাকেও বাড়ি থেকে বেরোতে দেবেন না! ছোটো লোকের সাথে ছোটো লোকের মতো আচরণ করুন। দরকার পড়লে ল্যাম্প পোস্টে বেঁধে রাখুন!” আর, দিলীপের সেই মন্তব্য নিমেষে ‘ভাইরাল’ হয়ে যায়। ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। ওঠে সমালোচনার ঢেউ!
আরও পড়ুন- পুলিশের পরীক্ষায় ‘বাংলার ভোট-সন্ত্রাস’, পেগাসাস নেই কেন প্রশ্ন তৃণমূলের
ঘটনার একদিন পরেই এবার গর্জে উঠলেন ২ নং ওয়ার্ডের ওই মহিলা বিদায়ী কাউন্সিলর ও তাঁর স্বামী। নিজের দলের নেত্রী তথা পৌরসভার বিদায়ী মহিলা কাউন্সিলর সুখরাজ কাউর ‘অগ্নিবাণ’ ছুঁড়ে দিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষের উদ্দেশ্যে। দিলীপ ঘোষকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, “একজন মহিলার উদ্দেশ্যে উনি এই ধরনের মন্তব্য করেন কি করে! ওনাকে কে এই সাহস দিয়েছে? উনি তিন বছর খড়্গপুরের বিধায়ক ছিলেন, কি করেছেন!”
আরও পড়ুন- যন্তর-মন্তরে মুসলিম বিরোধী স্লোগানের ঘটনায় গ্রেফতার অশ্বিনী উপাধ্যায়-সহ ৬ জন
অবিলম্বে ‘ক্ষমা’ না চাইলে অন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ওই বিদায়ী কাউন্সিলরের স্বামী সুখবীর সিং অটওয়াল। তিনি বলেছেন, “ওনার ফোন করে ক্ষমা চাওয়া উচিত, নাহলে আমাদেরকে অন্য কিছু ভাবতে হবে!”
মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষের ক্ষোভের মূল কারণ ছিল, তাঁর সাংসদ কোটার টাকা থেকে কোনও প্রকল্প অনুমোদন দিচ্ছে না MKDA (Midnapore Kharagpur Development Authority)। কোনো কাজ না করার জন্য ক্ষোভ ছিল খড়্গপুর পৌরসভার প্রতিও। সেই ক্ষোভের কথা বলতে গিয়েই ওই ওয়ার্ডের নিজের দলের বিদায়ী কাউন্সিলর-কেই আক্রমণ করে বসেন দিলীপ। বিশেষ করে যখন বাসিন্দারা বলেন, “কাউন্সিলর কোনো কথাই শুনছেন না!” এরপরই, স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে “অমার্জিত” (এক্ষেত্রে, অশালীন-ও) ভাষার প্রয়োগ করে বসেন দিলীপ।
আরও পড়ুন- সংঘসেবকদের পেটানোর কারণেই কেরলে হেরেছে কংগ্রেস: বিজেপি নেতা
তারপরই, নিন্দার ঝড় ওঠে সর্বত্র। মুখ খোলেন ওই বিদায়ী কাউন্সিলর ও তার স্বামী। বিজেপি নেতা তথা সুখরাজ কাউর-এর স্বামী দলের জেলা সহ-সভাপতিও। সোমবার তিনি বলেন, “আমাকে কিংবা আমার কাউন্সিলর (বর্তমানে, কো-অর্ডিনেটর) স্ত্রী’কে ওই এলাকায় ডেকে জিজ্ঞাসা করতে পারতেন কি হয়েছে বলে! আমরা মহিলাদের সম্মান দিই। কিন্তু, উনি একটা মহিলার বিরুদ্ধে এত নোংরা কথা বলেছেন। রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ হয়ে ওনার মুখে এ কথা শোভা পায়না। আমি চাই দিলীপবাবু এসে বা ফোন করে আমার স্ত্রী’র কাছে ক্ষমা চেয়ে নিন। যদি উনি ক্ষমা না চান তাহলে আমরা একটা চিন্তাভাবনা করব!”
আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়ে তৃণমূলের নেতা তথা খড়্গপুর পৌরসভার প্রশাসক প্রদীপ সরকার আবার, দিলীপ বিরোধী কাউন্সিলর-দের নিজেদের দলে আহ্বান জানিয়েছেন! দিলীপের সমালোচনা করে প্রদীপ সরকার বলেছেন, “উনি কিছু জানেন না! এসব ঘটনা রেলের জন্যই হচ্ছে। তা না করে পৌরসভা আর কাউন্সিলর-কে গালমন্দ করছেন। একজন মহিলার প্রতি এই ধরনের মন্তব্যের সমালোচনা না করে পারছিনা!”