পাটনা: বিহারে (Bihar) কি ফের পালা বদল ঘটতে চলেছে? বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কর্পূরী ঠাকুরকে (Karpuri Thakur) মরণোত্তর ভারতরত্ন দেওয়ার কথা কেন্দ্র ঘোষণা করার পর থেকেই নানা ঘটনা পরম্পরায় সেই বদল নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। সেই জল্পনা আরও জোরদার হয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবের (Laluprasad Yadav) মেয়ে রোহিণী আচার্যের সমাজমাধ্যমে করা কিছু পোস্টকে ঘিরে। যদিও সেই তিনটি পোস্ট পরে লালু-তনয়া মুছেও দেন। লোকসভা ভোটের (Loksabha Vote) ঠিক মুখেই জেডিইউ, আরজেডি, কংগ্রেস, সিপিআইএমএল-এর মহাজোট সরকারের অস্তিত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। গত ৪৮ ঘণ্টার ঘটনাবলি সেই প্রশ্নকেই আরও জোরালো করে তুলেছে।
বুধবার কর্পূরী ঠাকুরের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার পরিবারতন্ত্র নিয়ে কিছু কথা বলেন। তাঁর মন্তব্য, জেডিইউ দল প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রীর আদর্শ মেনেই কখনও পরিবারতন্ত্রকে প্রশ্রয় দেয় না। জেডিইউ দলের কোনও নেতার পরিবারের লোকজনকে দলের বা সরকারের কোনও পদে রাখা হয়নি। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেন, কর্পূরী ঠাকুর কখনও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দলের পদে রাখেনি। রাজনৈতিক মহলের মতে, জেডিইউ নেতা তথা মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার আসলে এই কথা বলে তাঁর সরকারের শরিক রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সুপ্রিমো এবং রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদকেই খোঁচা দিয়েছেন। লালুর এক ছেলে তেজস্বী যাদব বিহারের উপ মুখ্যমন্ত্রী। আর এক ছেলে তেজপ্রতাপও বিহার সরকারের এক মন্ত্রী। নীতীশ ওই অনুষ্ঠানে বলেন, প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রীকে মরণোত্তর ভারতরত্ন দেওয়ার প্রস্তাব জেডিইউ অনেক আগেই করেছিল।
আরও পড়ুন: আচমকা রাহুল গান্ধী কেন দিল্লি ফিরে গেলেন তা নিয়ে জল্পনা
তারপরই লালুর কন্যা একাধিক পোস্ট করেন তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে। তার একটিতে তিনি লেথেন, কেউ কেউ তাঁদের নিজেদের খামতি দেখেন না। কিন্তু তাঁরা অপরের দিকে কাদা ছুড়তে ভালোবাসেন। বাকি পোস্টগুলিতেও ই্ঙ্গিতে কটাক্ষ করা হয়েছে নীতীশ কুমারকে। পরে অবশ্য রোহিণী সেগুলি ডিলিট করে দেন।
এদিকে আগামী ২৯ জানুয়ারি পূর্ণিয়ায় রাহুলের ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায় অংশ নিচ্ছেন না নীতীশ কুমার। কংগ্রেস তাঁকে ওই যাত্রায় শামিল হতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, ওইদিন তাঁর অন্য কর্মসূচি রয়েছে। তাই যেতে পারবেন না। এরই মধ্যে রাজনৈতিক মহলের খবর, নীতীশ কুমারের সঙ্গে নানা কারণে লালু, তেজস্বীদের ফাটল চওড়া হচ্ছে। লালুর মেয়ের পোস্টে যারপরনাই ক্ষুব্ধ নীতীশ কুমার। এ ব্যাপারে তিনি তাঁর নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে খোঁজখবর নিচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, আরজেডির সঙ্গে আর কাজ করা যাচ্ছে না। তিনি বিধানসভা ভেঙে দিয়ে লোকসভার সঙ্গেই ফের ভোটে যেতে চান। তা নিয়ে লালুদের সঙ্গে তাঁর কথাও হয়েছে। কিন্তু লালু, তেজস্বীরা বিধানসভা ভাঙার পক্ষপাতী নন।
ইন্ডিয়া জোট নিয়ে যখন নানা আলোচনা চলছে, তখন আশ্চর্যজনক ভাবে নীতীশ কুমার নীরবতা আবলম্বন করে চলেছেন। অথচ বিজেপি বিরোধী জোট গঠনে শুরুর দিকে সব চেয়ে বেশি উদ্যোগী ছিলেন তিনি। সূত্রের খবর, সম্প্রতি নীতীশ বিজেপির দুতিনজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন। বুধবার দিল্লিতে বিহার নিয়েই বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপির জাতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। সূত্রের খবর, নীতীশ এনডিএ জোটে ফিরলেও তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায় না বিজেপি। বিজেপি চায়, নীতীশ মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিন। বৃহস্পতিবার পাটনায় নীতীশ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। তার আগে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয় মাত্র পনেরো মিনিটের জন্য। সেখানে আসন্ন রাজ্য বাজেট নিয়ে আলোচনার কথা ছিল। কিন্তু কিছুই হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী এবং উপ মুখ্যমন্ত্রী আলাদা আসেন বৈঠকে যোগ দিতে। সেখানে দুজনের মধ্যে কোনও বাক্যালাপ হয়নি। এরই মধ্যে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সম্রাট চৌধুরী জরুরি তলব পেয়ে দিল্লি উড়ে গিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী চৌবে। সব মিলিয়ে বিহারে রাজনৈতিক জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে। লোকসভা ভোটের মুখে বিহারের রাজনীতি কোন দিকে বাঁক নেয়, সেটাই দেখার।
আরও খবর দেখুন