ওয়েবডেস্ক: বিরোধ পারিবারিক আদালতে (Family Court) যাওয়ার আগেই বাধ্যতামূলক সালিশি ব্যবস্থার প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্টের মহিলা বিচারপতি বিভি নাগরত্নার (Supreme Court female judge B.V. Nagaratna)। বিচারপতি বলেন, পারিবারিক আদালতে কোনও মামলার দায়ের হওয়ার আগেই সেই বিরোধ নিয়ে বাধ্যতামূলক সালিশি ব্যবস্থা থাকা উচিত বলে আমি মনে করি। কারণ সেই বিরোধ যখন মামলার আকারে নথিবদ্ধ হয়, তখন দুই পক্ষের মধ্যে মেরুকরণ ঘটে যায়। এজন্য প্রশিক্ষিত মিডিয়েটর বা সেই ভূমিকায় অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের পারিবারিক আদালতে রাখা দরকার।
“পরিবার ভারতীয় সমাজের ভিত্তি” (Family is the foundation of Indian society) শীর্ষক বেঙ্গালুরুতে (Bengaluru) আয়োজিত কর্নাটক হাইকোর্ট ও কর্নাটক জুডিশিয়াল আকাদেমির পরিচালনায় এক আলোচনা সভায় মন্তব্য বিচারপতির।
তিনি ছাড়াও ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি উজ্জ্বল ভূঁইয়া, কর্নাটক হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি আঞ্জারিয়া সহ কর্নাটক, কেরালা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু ও তেলেঙ্গানার বেশ কয়েকজন বিচারপতি।
আরও পড়ুন: হাসিনার নামে বাংলাদেশে ফের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি
মানব সমাজকে একটি সংগঠন হিসেবে ধরা হলে পরিবার সেখানে একটি একক ভিত্তি। যা সমাজের ভারসাম্যকে ধরে রাখে। পশ্চিমী মূল্যবোধের সঙ্গে ভারতীয় পরিবারের মূল্যবোধের বিপুল ফারাক। ভারতীয় সমাজ সমষ্টিভিত্তিক, ব্যক্তিগত স্বার্থাবলম্বী নয়। কারণ এখানে একে অপরের প্রতি ভরসা রাখে, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। যা পরিবারের সীমা ছাড়িয়ে সমাজের গঠনকে ধরে রাখে। যদিও সেই পারিবারিক ব্যবস্থার দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। যে কারণে আইনি ব্যবস্থাতেও বদল ঘটাতে হচ্ছে।
পারিবারিক বিরোধ বেড়ে যাওয়ার জন্য মহিলাদের শিক্ষা এবং চাকরির পাশাপাশি সামাজিক-অর্থনৈতিক স্বাধীনতার দিকে আঙ্গুল তোলা হয়। কিন্তু এই পরিবর্তনকে সামাজিকভাবে উৎসাহ দিতে হবে, সদর্থক পরিবর্তন হিসেবে মানতে হবে বলে অভিমত বিচারপতির। এমন পরিবর্তনের সঙ্গে ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির বদল ঘটানোর অভাবের কারণে পারিবারিক বিরোধ বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন। দুটি জিনিসের অনুশীলন করলে এমন অধিকাংশ বিরোধের সহজ নিষ্পত্তি হতে পারে।
প্রথমত বিপক্ষকে বোঝার চেষ্টা এবং সম্মান করা। দ্বিতীয়ত, আপন সচেতনতা জোরদার করা। ধরা যাক প্রথম জন এমন কিছু করেছেন বা করছেন যা দ্বিতীয় জনের কাছে সমস্যাজনক বলে মনে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে দ্বিতীয়জন নিজেকে প্রথম জনের জায়গায় দাঁড় করান। এভাবে প্রথম জনের এমন পদক্ষেপ করার কারণ এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি সম্যকভাবে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। এভাবে দুই তরফের মধ্যে একটা বোঝাপড়া তৈরি হবে। সম্পর্কের দূরত্ব বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা কমে যাবে। এর ফলে সন্তানদের মধ্যেও সদর্থক প্রভাব পড়বে। যা শেষ পর্যন্ত পারিবারিক পরিবেশকে আরও সুন্দর এবং সম্পর্কের বাঁধনকে জোরদার করবে বলে অভিমত বিচারপতির।
সর্বভারতীয় একটি ইংরেজি দৈনিকের সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী বিগত এক দশকে হওয়া বিবাহের ৪০% এর ক্ষেত্রে বিবাহ বিচ্ছেদ অথবা সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গিয়েছে। দ্রুত পরিবর্তনশীল সামাজিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সমাজের খাপ খাইয়ে নেওয়ার ব্যর্থতার জন্য এমন পরিস্থিতি দেখা দিচ্ছে। তার ফলে আইনি ব্যবস্থার উপর পারিবারিক মামলার বিপুল চাপ তৈরি হচ্ছে বলেও জানান বিচারপতি।
দেখুন অন্য খবর-