গুয়াহাটি: দখলদার তাড়াতে বন্দুক উঁচিয়ে এগিয়ে চলেছে রাষ্ট্রের বাহিনী। লাঠি হাতে একা তাদের প্রতিহত করতে এগিয়ে আসছে এক যুবক। প্রতিবাদী যুবকের দিকে এগিয়ে গিয়ে শুরু হল বাহিনীর পালটা জবাব। তারমধ্যেই চলল গুলি। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই সব শেষ। মৃত্যু ঘটল প্রতিবাদী যুবকের। তারপরে সেই মৃতদেহের উপরে একাধিকবার হামলা চালাল এক চিত্রগ্রাহক।
এটাই হল মইনুল হকের মৃত্যুর ঘটনার ছবি। যা সোশাল মিডিয়ার দৌলতে ঘুরছে সকলের মোবাইলে। তেমনই মুঠো ফোনের মধ্যে ওই হত্যাকাণ্ডের মুহূর্তের ছবি দেখলেন মইনুলের বাবা আহমেদ আলি। ছেলের মারা যাওয়ার সময়ের ভিডিও মোবাইল ফোনে দেখতে দেখতে কান্নায় ভেঙে পড়েন বৃদ্ধ বাবা৷ শুক্রবার প্রার্থনার দিন গ্রামের মাঠে ভাঙা মসজিদের সামনে গ্রামবাসীদের সঙ্গে তাঁরও দেখা মেলে৷
এর আগে আহমেদ জানিয়েছিলেন, জেসিবি ট্রাকের একদিকে ঝুলছিল তাঁর ছেলের দেহ৷ তার পর সেই ট্রাক মইনুলের দেহ হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচড়াতে নিয়ে যায়৷ পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ব্যক্তি ছিলেন মইনুল। বাড়িতে বাবা ছাড়াও তাঁর স্ত্রী এবং দুই সন্তান রয়েছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই তাঁর মৃত্যুর পরে দিশাহারা অবস্থা সমগ্র পরিবারের।
আরও পড়ুন- অভিষেককে বাধা! ১৪৪ ধারার মধ্যে জনসভা বিপ্লব দেবের, মুখ্যসচিবের দ্বারস্থ তৃণমূল
২০১৮ সাল থেকে অসমে নাগরিকপঞ্জি নিয়ে বিতর্ক চলছে। সেই তালিকায় বহু মানুষের নাম বাদ গিয়েছে। যার জেরে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়েছে অসম-সহ সমগ্র দেশ জুড়ে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, নাগরিকপঞ্জির তালিকায় মইনুলের নাম ছিল। আধার কার্ডের মতো সচিত্র পরিচয়পত্রও ছিল। অর্থাৎ নাগরিকত্ব হারানোর ভয় তাঁর ছিল না। কেবল নিজের ভিটেমাটি বাঁচাতেই প্রাণ খোয়াতে হল ২৮ বছরের মইনুলকে।
মইনুলের আধার কার্ড
বৃহস্পতিবার মইনুলের গুলিবিদ্ধ দেহের উপর লাফিয়ে পড়তে দেখা যায় এক চিত্রগ্রাহককে৷ উন্মাদের মতো চিৎকার করতে করতে সে লাফাতে থাকে শরীরটার উপর৷ পরে জানা যায়, ওই ব্যক্তির নাম শঙ্কর বানিয়া৷ তাকে গ্রেফতার করেছে অসম পুলিশ৷ মইনুলের বাবা জানিয়েছেন, ওই ক্যামেরাম্যান কয়েকজনের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল৷ তাতে একজন পুড়ে যান৷ শঙ্করের মধ্যে ঠিক কী আক্রোশ কাজ করছিল তা জানা যায়নি৷ পুলিশ সেটা জানার চেষ্টা করছে৷ তবে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, ফায়ারিংয়ের সময় শঙ্করকে ধাওয়া করেছিল মইনুল৷ হাতে সম্ভবত ইট বা পাথর জাতীয় কিছু ছিল৷ তার পরই গুলিবিদ্ধ হয় সে৷