কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: আধার কার্ডের তথ্য চুরি করে অসদুদ্দেশ্যে ব্যবহারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম আধার কার্ড আবশ্যিক করার জোরাল বিরোধিতা করেছিলেন। কারণ, আধারের নকল করা তথ্য ও ছবি দিয়ে ভুয়ো সিম কার্ড তোলা কিংবা বাড়ি ভাড়া নেওয়া, জমি-বাড়ি কেনা, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার মতো বহু ঘটনা ঘটে থাকে। তাই অনেক দেরিতে হলেও বুদ্ধি খুলেছে কেন্দ্রের। আধার কার্ডের ছবি কাউকে শেয়ার না করার নির্দেশিকা কেন্দ্রের। যদি কোনও প্রয়োজনে আধার কার্ডের তথ্য কাউকে পাঠাতেই হয়, তাহলে মুখাবয়বহীন ছবি ব্যবহারের পরামর্শ দিল কেন্দ্রীয় সরকার। আধার কার্ডের অপব্যবহার রুখতেই এ ধরনের সতর্কতা পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র।
কেন্দ্রের এই সতর্কবার্তায় প্রশ্ন উঠেছে হঠাৎ করে দেশের নাগরিকদের হুঁশ ফেরানোর চেষ্টা কেন? তাহলে কি হামেশাই আধার কার্ডের তথ্য দেশে এবং বিদেশে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে! যাবতীয় সরকারি, এমনকী বেসরকারি কাজেও এখন আধার কার্ডের ফটোকপি জমা দেওয়া প্রায় আবশ্যিক হয়ে গিয়েছে। সেই ছবি, ঠিকানা ও আধার নম্বর ব্যবহার করে সাইবার ক্রাইমে অনেক কিছুই ঘটে থাকে। অপরাধের ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির আধার কার্ডের ছবি ব্যবহার করতেও দেখা গিয়েছে অপরাধীদের। তাহলে কেন্দ্রীয় সরকারের এতদিন পর টনক নড়ল কেন? আর কেনই বা বিবৃতি জারি করে দেশবাসীকে সতর্ক করার প্রয়োজন পড়ল, এই প্রশ্ন মাথাচাড়া দিচ্ছে স্বাভাবিকভাবেই।
আরও পড়ুন: Nusrat Jahan: খোলাপোতা মন্দিরে কালী মায়ের ভোগ রাঁধলেন নুসরত, দিলেন সম্প্রীতির বার্তা
সমস্যা হচ্ছে যে, মুখাবয়বহীন আধার কার্ডের ফটোকপির স্বীকৃতি দিতে চায় না কেউ। সকলেই এই ধরনের প্রমাণ নিতে অস্বীকার করে। ফলে সরকার বিবৃতি দিয়ে হুঁশিয়ার করে দিলেও আদৌ এতে কাজ হবে কি না তা দেশবাসীর অজানা।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বপ্রথম আধার কার্ডের তথ্য নিয়ে মুখ খুলেছিলেন। তিনিই আশঙ্কাপ্রকাশ করেছিলেন যে, এর মাধ্যমে কেন্দ্র দেশের জনগণের উপর নজরদারি চালাবে। সব তথ্য জেনে নেবে। তখন অনেকেই তাঁর এই ভূমিকার সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু, এখন কেন্দ্রীয় সরকার খোদ মানুষকে সাবধান করে দেওয়ায় সেই আশঙ্কাকেই সিলমোহর দিল। তাহলে কি ভারতের নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হয়ে গেল? এই প্রশ্নের জবাব দেবে কে?
রবিবার এক প্রেস বিবৃতিতে কেন্দ্র বলেছে, আধার কার্ডের ফটোকপি কাউকে না-দেওয়াই ভালো। কোনও সংস্থা যদি আধার কার্ডের নকল কপি চায়, তাহলে মুখের ছবিহীন ফটোকপি পাঠানোই ভালো। এতে কার্ডের অপব্যবহার রোখা সহজ। এক্ষেত্রে আধার নম্বরের শেষ চারটি নম্বর দেখা যাবে, এমনভাবে ফটোকপি করাই বাঞ্ছনীয় বলে ওই বিবৃতিতে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
কেন্দ্রীয় ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, লাইসেন্সহীন কোনও হোটেল কিংবা সিনেমা হলের আধার কার্ডের কপি চাওয়ার অনুমতি নেই। যেসব সংস্থার কাছে ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার স্বীকৃত লাইসেন্স আছে, কেবলমাত্র তারাই কোনও ব্যক্তির কাছ থেকে আধার কার্ডের কপি নিয়ে পরিচয় যাচাই করার অধিকারী। কোনও সংস্থাকে আধারের নকল দেওয়ার আগে যাচাই করা প্রয়োজন যে, সেই সংস্থার আদৌ ইউআইডিএআইয়ের স্বীকৃত লাইসেন্স আছে কি নেই। অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে কেন্দ্র বলেছে, দেশের মানুষ যেন রাস্তাঘাটে গজিয়ে ওঠা ইন্টারনেট কাফে থেকে বা বহু লোকের ব্যবহার করা কম্পিউটার থেকে আধার কার্ড ডাউনলোড না করেন।