ওয়েবডেস্ক- SIR ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে! মানুষের মধ্যে ভয়-ভীতি এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে যাচ্ছে। তার মধ্যেই চলেছে পুলিশি ধরপাকড়।
২০০২ এর তালিকায় (2002 Voter List) বাবা-মায়ের নাম থাকলে আর কোনও নথির প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছ নির্বাচন কমিশন। সে ভারতীয় নাগরিক (Indian Citizen)। কিন্তু সেই নথি থাকার পরেও জুটল অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর তকমা।
গত ২৬ জুন অন্তঃসত্ত্বা সুনালি খাতুন (pregnant Sunali Khatun) ও তার স্বামী দানিশ (Danish) সহ তার আট বছরের সন্তানকে আটক করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয় দিল্লি পুলিশ। জানা যায়, অবৈধ উপায়ে ভারতে প্রবেশ (illegal immigrant) করেছিলেন সুনালি। সেই কারণে গত জুন মাসে সন্তান সহ এই দম্পতিকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
সুনালি খাতুনের আইনজীবী রঘুনাথ চক্রবর্তী দাবি করেছেন যে, রাজ্যের ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) এর আগে নির্বাচন কমিশন (ইসি) (Election Commission) কর্তৃক প্রকাশিত ২০০২ সালের বাংলার ভোটার তালিকায় খাতুনের বাবা-মা উভয়ের নামই রয়েছে।
আইনজীবী রঘুনাথ চক্রবর্তী (Lawyer Raghunath Chakraborty) বলেন, খাতুনের বাবা-মা – ভোদু শেখ এবং জ্যোৎস্না বিবির নাম বীরভূম জেলার মুরারাই বিধানসভা কেন্দ্রের ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় পাওয়া গেছে। তাদের ভোটকেন্দ্র পাইকার গ্রামের পাইকার প্রাথমিক বিদ্যালয়। এদিকে, খাতুন এবং আরও পাঁচজনকে ভারতে ফিরিয়ে আনার জন্য কেন্দ্রকে নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট, সেই সময় সীমা শেষ হয়েছে ২৪ অক্টোবর। ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়নি তাদের।
খাতুনের আইনজীবীর চক্রবর্তীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই মামলায় এটাই একটি শক্তিশালী দিক যে, সুনালির গর্ভে থাকা শিশু জন্মের পর ভারতের নাগরিকত্ব পাবে। এই মুহূর্তে অবৈধভাবে প্রবেশের জন্য সুনালি তার পরিবার সহ বাংলাদেশের জেলে রয়েছেন।
৩ অক্টোবর, বাংলাদেশের একটি আদালতও তাদের ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করে এবং তাদের ‘প্রত্যাহারের’ নির্দেশ দেয়।
আরও পড়ুন- ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ! যোগীরাজ্যের পুলিশকর্মীকে কী বলল সুপ্রিম কোর্ট?
খাতুনের পরিবার বাংলা থেকে দিল্লিতে আসা পরিযায়ী শ্রমিক। যারা প্রায় ২০ বছর ধরে দিল্লিতে ময়লা, আবর্জনা তোলার কাজ করত। অনুপ্রবেশকারী হিসেবে দিল্লি পুলিশ তাদের গত ২৬ জুন আটক করে, সুনালি খাতুন, স্বামী দানিশ সহ তার আট বছরের ছেলে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সুনালি বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা।
অপর একটি পরিবারের সঙ্গেও একই ঘটনা ঘয়েছে। সুইটি বিবি (৩২) এবং তার দুই ছেলে, যাদের বয়স ছয় এবং ১৬ বছর – মূলত বীরভূমের মুরারাই থানার ধিতোরা গ্রামের বাসিন্দা। তাদেরও একই সময়ে আটক করে নির্বাসিত করা হয়। উভয় পরিবারকেই অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বলে অভিযোগ করা হয়েছিল।
২৬ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী এবং ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন গঠিত বেঞ্চ নির্দেশ দেয় যে খাতুন সহ দুই পরিবারের ছয় সদস্যকে চার সপ্তাহের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে আনতে হবে । কিন্তু আদালতের নির্দেশের পরেও সুনালি ও তার পরিবার বাংলায় ফিরে আসতে পারেনি। সুনালির অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি আদালতের কাছে বিশেষভাবে বিবেচনার জন্য জানান আইনজীবী চক্রবর্তী।
এখনও প্রশ্ন উঠেছে, সুনালির বাবা -মায়ের নাম ২০০২ এর ভোটার তালিকায় থাকার পরে কিভাবে তাদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে আটক করে দেশ থেকে তাড়ানো হল ? তারা গরিব পরিযায়ী শ্রমিক বলেই কী এই হেনস্থা?
পশ্চিমবঙ্গ অভিবাসী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ডের চেয়ারম্যানও, তৃণমূল সাংসদ সামিরুল ইসলাম বলেন, আদালতের আদেশ সত্ত্বেও, কেন্দ্র এখনও তাদের ফিরিয়ে আনেনি।
খাতুনের বাবা ভোদু শেখ বলেন, এখন আমাদের নাম তালিকায় আছে। আমার মেয়ে এবং তার পরিবারকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আমার আর কী দরকার? সব নথি তো রয়েছে। কলকাতা হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছে, এবং বাংলাদেশের একটি আদালত (তাদের ফিরিয়ে আনার) আদেশ দিয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কিছুই হয়নি।
মা জ্যোৎস্না বিবি বলেন, “আমরা সেখানে তার অবস্থা নিয়ে চিন্তিত। আমরা জানি না বাংলাদেশের কারাগারে সে কী ধরণের যত্ন পাচ্ছে। মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা। জানি না কেমন আছে।
খাতুনকে ফিরিয়ে আনতে সরকারের ‘ব্যর্থতার’ জন্য তার বাবা-মা কলকাতা হাইকোর্টে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অবমাননার আবেদন করেছেন। ইতিমধ্যে, কেন্দ্র এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে।
দেখুন আরও খবর-