ইন্টারনেট সার্ফিং বা ব্যবহারের ক্ষেত্রে অসংযত বা অনিয়ন্ত্রিত অভ্যাস ডেকে আনতে পারে বিপদ। তাই ইন্টারনেটের ব্যবহারে সজাগ ও সতর্ক থাকুন। ভার্চু্য়াল ওয়ার্ল্ডে আবেগে না-ভেসে মেনে চলুন অনলাইনে থাকার এই ১০টি বিধািনিষেধ।
১. অনলাইনে বাড়তি ব্যক্তিগত তথ্য দেবেন না
ফেসবুক,ইনস্টাগ্রাম ছাড়াও লিঙ্কডইন-সহ বিভিন্ন জব সাইটে আমাদের তথ্য শেয়ার করতে হয় ঠিকই, তবে সেই তথ্য যতটা সম্ভব কম দেওয়াই ভাল। জেনে রাখুন, চাকরির ক্ষেত্রে আপনি কোনও পদের জন্য নির্বাচিত হলে আপনাকে তা ফোনে বা লিখিত ভাবে জানানো হবে। ইদানীং চাকরির নামেও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অনেকেই। সেক্ষেত্রে যে সংস্থার তরফে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, সেটির বিষয় প্রয়োজনীয় তথ্য খতিয়ে দেখে নিন।
২. আপনার ফোনের প্রাইভেসি সেটিংস সবসময় চালু রাখুন
বিক্রেতা কিংবা হ্যাকার উভয়ের কাছে আপনার তথ্য অত্যন্ত লাভজনক। তাই তাঁরা অনলাইনে সবসময়ে ওত পেতে থাকবেন তা বলা বাহুল্য। তাই আপনার ওয়েব ব্রাউজার ও মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমের প্রাইভেসি সেটিং চালু রাখুন। ফেসবুকেরও প্রাইভেসি সেটিং চালু রাখুন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই সেটিং সহজে খুঁজে পাবেন না, এই বিষয়টাও সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে ইচ্ছাকৃত ভাবেই করা। যাতে সাবসক্রাইবার বা ইউজাররা অধৈর্য হয়ে প্রাইভেসি সেটিং চালু না করেই অনলাইন সার্ভিস ব্যবহার করেন। তাই ধৈর্য ধরে অনলাইন সেটিং অন করা অনিবার্য।
৩. সেফ ব্রাউজিং নিয়ম মেনে চলুন
ইন্টারনেটে কোনও তথ্য বা ভিডিও খোঁজার সময় সতর্ক থাকুন। যখন-তখন যেকোনও লিঙ্কে ক্লিক করে বসবেন না। মনে রাখবেন হ্যাকাররা ফাঁদ পেতে রাখতে আপনার ব্রাউজিং প্যাটার্ন বা হিস্টরি অনুযায়ী আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য সংক্রান্ত লিঙ্কের মাধ্যমেই ম্যালওয়ার লুকিয়ে রাখবে। ক্লিক করলেই সাইবার ক্রিমিন্যালদের কেল্লা ফতে। তাই ক্লিক করার আগে সাইটে যাচাই করে নিন।
৪. আপনার ইন্টারনেট কানেকশন সুরক্ষিত কি না, দেখে নিন
ইদানীং কফি শপ থেকে শুরু করে সালোঁ, বিভিন্ন শপিং মলে ও অন্যান্য জায়গায় ওয়াই-ফাই ব্যবহারের সুবিধে রয়েছে। এগুলি ব্যবহার করার আগে সতর্ক থাকুন। পারলে এড়িয়ে চলুন। এই জায়গাগুলো হ্যাকারদের অত্যন্ত পছন্দের। যেখানে ব্যক্তিগত ইন্টারনেট কানেকশন বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। এবং এই সময় নিজস্ব ইন্টারনেট কানেকশন বা তথ্যের সুরক্ষা তথন আপনার এক্তিয়ারের বাইরে চলে যায়।
৫. ইন্টারনেট থেকে কোনও তথ্য বা ভিডিও ডাউনলোডের সময় সতর্ক থাকুন
হ্যাকারা ওত পেতেই থাকে কখন আপনি কোনও ছবি বা ভিডিও ডাউনলোড করবেন। ডাউনলোড করতে গিয়ে অনেক সময়ে আপনাকে বেশ কিছু লিঙ্কে ক্লিক করতে বলা হয়। সেই লিঙ্কগুলিতেই ম্যালওয়ার লুকোনো থাকে। তাই ডাউনলোডের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি সুরক্ষিত সাইট দেখে নিন। এবং সেগুলি থেকেই ডাউনলোড করুন। কোনও অ্যাপ দেখলে যদি আপনার কখনও কোনও সন্দেহ হলে এড়িয়ে চলুন।
৬. ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইটে আপনার যে অ্যাকাউন্ট আছে তাতে কঠিন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন
গোটা ইন্টারনেট সিকিউরিটির সিস্টেমের সব থেকে বিপদগ্রস্ত দিক পাসওয়ার্ড। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই পাসওয়ার্ড হ্যাক করেই কাজ সারে হ্যাকাররা। এই সংক্রান্ত বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে এসেছে পাসওয়ার্ড নিয়ে একদম বুদ্ধি বা সময় খরচ করতে চান না ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। এর ফলে নিজের নাম, ফোন নাম্বার, বাড়ির ঠিকানার মতো তথ্য পাসওয়ার্ডে ব্যবহার করেন। এ ছাড়াও “123456” বা “ABCD” ও ব্যবহার করেন অনেকেই। এটা করবেন না। পাসওয়ার্ডকে স্ট্রং বানাতে অন্তত ১৫ ক্যারেকটার ব্যবহার করুন। সংখ্যা, অক্ষর ও কিবোর্ডের স্পেশাল ক্যারেক্টারের মিলিয়ে মিশিয়ে পাসওয়ার্ড তৈরি করুন।
৭. অনলাইন কেনা-বেচার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র নিরাপদ সাইটগুলি বেছে নিন
অনলাইন কেনাবেচা মানেই আপনার ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডের তথ্য ভাগ করে নেওয়া। এই তথ্যগুলো হ্যাকারদের কাছে গেলে একেবারে হাতে চাঁদ পেয়ে যাবে ওরা। তাই এই সংক্রান্ত তথ্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে দেখে নিন এই কানেকশন সিকিউরড ও এনক্রিপটেড কি না। যে সাইটের অ্যাড্রেস বারের শুরুতেই //https:// আছে বুঝবেন সেটা সুরক্ষিত। এই http-র পরে এই S হল Secure শব্দের প্রথম অক্ষর) এবং টাকাপয়সা সংক্রান্ত লেনদেন এদের মাধ্যমে করা সম্ভব।
৮. বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ায় বুঝেশুনে পোস্ট করুন
ইন্টারনেটে একবার আপনার কোনও তথ্য প্রকাশ হয়ে যাওয়া মানেই ধরে নিন তা কোনও মতেই সরানো সম্ভব না। তাই ভেবেচিন্তে ছবি, কমেন্ট সোশাল মিডিয়া সহ অন্যান্য সাইটে পোস্ট করুন। কয়েক বছর আগের আলটপকা মন্তব্য বা উটকো ছবি আপনাকে আপনার কর্মস্থল ও বাড়িতে বিব্রত ও লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে।
৯. অনলাইনে বন্ধুত্ব পাতানোর আগে পরখ করুন
অনলাইনে বন্ধু পাতান অনেকেই, তবে সেই বন্ধুত্ব ভার্চুয়্যাল ওয়ার্ল্ডের গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব জীবনে আসার আগে মহিলা হোক বা পুরুষ সেই ব্যক্তির সম্পর্কে সমস্ত তথ্য জেনে রাখুন। অনেক ক্ষেত্রেই ফেক বা ভুয়ো নাম ও পরিচয়ে অসাধু লোকেরা সোশাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট বানান। সতর্ক থাকুন। বিশ্বাসযোগ্য মনে হলেও অ্যাকউন্টের তথ্য যাচাই করে নিন।
১০. আপনার ডেস্কটপ ও মোবাইলের অ্যান্টিভাইরাস আপডেটেড রাখুন
ইন্টারনেট সিকিউরিটি সফ্টওয়্যার আপনাকে সবরকম সাইবার ক্রাইমের হাত থেকে বাচাতে পারবে না ঠিকই, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এরা ম্যালওয়ার ডিকেক্ট করে আপনাকে সতর্ক করবে। তাই সবসময় এই সফ্টওয়্যারগুলোর আপডেট করা ভার্সন আপনার ফোনে রাখুন। একই ভাবে আপনার অপারেটিং সিস্টেম ও আপডেট রাখুন। এতে পেগাসাসের মত শক্তিশালী সফ্টওয়্যারের জাল থেকে বাঁচতে না পারলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আপনার তথ্য সুরক্ষিত থাকবে।