বাঁকুড়া: জগদ্ধাত্রী পুজোতে চন্দননগর সেজেছে রঙীন আলোর সাজে। কিন্তু বাঁকুড়ার পাত্রসায়েরের বামেরা গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায়ের জগদ্ধাত্রী পুজোতে নিষিদ্ধ বিদ্যুতের রঙীন আলোকমালা। এখানে মাটির ঘরে শুধুমাত্র হ্যাজাক, প্রদীপ ও লণ্ঠনের আলোতে দেবী জগদ্ধাত্রীর আরাধনা করা হয়। প্রায় সাড়ে তিনশ বছরের প্রাচীন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের জগদ্ধাত্রী পুজো। একসময় এলাকায় নামকরা ছিল বন্দ্যোপাধ্যায় জমিদার। সেই জমিদার আমলেই শুরু হয়েছিল জগদ্ধাত্রী আরাধনা। ভাঙ্গাচুরা জগদ্ধাত্রীর টেরাকোটার মন্দির আজও প্রমান করে দেয় এখানকার জগদ্ধাত্রী কত প্রাচীন।
মন্দির এখন ধংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। শোনা যায় সেই মন্দির করতে গিয়েও ব্যর্থ হন বন্দ্যোপাধ্যায় জমিদারেরা। স্বপ্নাদেশে দেবী মন্দিরে না থেকে মাটির টিনের ছাউনীতে পুজো করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যেভাবে এলাকার গরীব আদিবাসী ও নিম্নশ্রেনীর মানুষ বসবাস করেন দেবী সেই ভাবেই পুজো নিতে চেয়েছেন। তাই এখানে দেবী পুজিতা হন মাটির টিনের ছাউনি দেওয়া বাড়িতে। আজ জমিদার নেই কিন্তু রয়েছে বন্দ্যোপাধ্যায় জমিদার বাড়ির প্রাচীন জগদ্ধাত্রী পুজো।
আরও পড়ুন: ছট পুজো উপলক্ষ্যে সোমবার সরকারি ছুটি
এই পুজোতে রয়েছে প্রাচীন নিয়ম রীতি। দেবীর পুজো যেহেতু হয় মাটির বাড়িতে তাই পুজো ক’দিন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরাও থাকেন অস্থায়ী ছাউনি করে। এখানে বিদ্যুতের আলো জ্বালানো চলে না তাই পুজো ক’দিন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার বসবাস করেন আলোহীন পরিবেশে। মন্দির চত্বরে জ্বলে হ্যাচাক লাইটের আলো। সেই আলোতে আলোকিত হয় ওই এলাকা। দেবীর পুজো নৈবিদ্য, হোমের কাঠ সহ নানান পুজো উপকরন সংগ্রহ করেন এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ জন। কোন এক সদস্য জোর করে বিদ্যুতের আলো জ্বেলে পুজোর করতে গিয়ে বিপদে পড়তে হয়েছিল সেই থেকেই আর কেউ সাহস করে বিদ্যুতের আলো জ্বালাতে পারেনি। পুজো কদিন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা মাটির মন্দিরের পাশে অস্থায়ী ছাউনী করে নিজেরাও বসবাস করেন। জমিদার আমলের প্রাচীন বন্দুক কাঁধে নিয়ে মা কে পাহারা দেন জমিদার বাড়ির সদস্যরা। এই পুজো বন্দ্যোপাধ্যায় জমিদার বাড়ির পুজো হলেও পুজোতে সামিল হয় এলাকার সর্বস্তরের মানুষজন। এই পুজো সাড়ে তিনশ বছরের পুরানো। নিয়ম মেনে পুজোতে মেতে উঠেন জমিদার বাড়ির বর্তমান প্রজন্ম।
দেখুন আরও খবর: