কলকাতা: রাখির (Rakhi) সঙ্গে বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয় রাখি বন্ধন উৎসব (Rakhi Bandhan Utsav 2023)। এই দিনে বোনেরা তাদের ভাইয়ের হাতে রাখি বেঁধে তাদের মিষ্টি খাওয়ায়। ভাই তার বোনকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেয়। আর বাঙালির এই রাখি বন্ধনের প্রসঙ্গে উঠে আসবেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম। কারণ, বঙ্গভঙ্গ আইনে যখন ভাগ হচ্ছে দুই বাংলা, সেই অশান্ত মূহুর্তকে সম্প্রীতির বন্ধনে বেঁধেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই ইতিহাস।
ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতবর্ষে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন চরম পর্যায়ে পৌঁছালে ব্রিটিশ সরকার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাকে দুটি প্রদেশে বিভক্ত করবে। তৎকালীন সময় দেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা চরম আকার ধারন করে। ব্রিটিশ সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিরোধ করার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তৎকালীন হিন্দু ও মুসলিম ভাই ও বোনকে একতা হওয়ার আহ্বান করেছিলেন।
১৯০৫ সালের জুন মাস। লর্ড কার্জন তখন ভাইসরয়। সেইসময় তিনি বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব ঘোষণা করলেন। ওই বছরেরই অগাস্ট মাসে বঙ্গভঙ্গ জন্য আইন পাশ হয়। জানানো হয়, এই আইন কার্যকরীর হবে ১৯০৫-এরই ১৬ অক্টোবর, বাংলায় ৩০ আশ্বিন। সেই সময়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতায় মানুষ সামিল হয়। ঠিক হয়, ওই দিন বাংলার মানুষ পরস্পরের হাতে বেঁধে দেবেন হলুদ সূতো বাঁধবেন। এই দিনকে মিলন দিবস হিসেবে পালন করা হয়। কবিগুরু এই দিনটিকে রাখি বন্ধন উৎসব পালন করার ডাক দেন। বাংলায় হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌভ্রাতৃত্বকে ফুটিয়ে তুলতেই এই উদ্যোগ নেন রবীন্দ্রনাথ।
কিন্তু সেই রাখি বন্ধন উৎসব শ্রাবণ মাসে বা পূর্ণিমা, কোনওটাতেই হয়নি। শুধু বোনেরা ভাইদের নয়, এই দিন প্রত্যেক মানুষের মধ্যের একতাই ছিল রাখি বন্ধনের মূল বিষয়। এই রাখিবন্ধন উৎসবে সম্প্রীতি যে ভাবে জায়গা করে নিয়েছিল, তা আজকের দিনেও প্রাসঙ্গিক। রবীন্দ্রনাথ এই রাখি বন্ধন উৎসব নিয়েই গান লিখেছিলেন, বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল। পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, হে ভগবান। কলকাতার রাস্তায় এখনও প্রতি বছর ৩০ আশ্বিন রবীন্দ্রনাথের স্মরণে রাখি বন্ধন উৎসব পালিত হয়। তবে এই রাখির সঙ্গে শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমার রাখির কোনও সম্পর্ক নেই। এই রাখির মূল উদ্দেশ্যই ছিল মানবিকতা, সম্প্রীতি ও একতা।