দিনের অধিকাংশ সময়টা আপনাকে কাটাতে হচ্ছে ল্যাপটপের সামনে। কোভিডকালের এই ওয়ার্ক ফর্ম হোমই এখন নিউ নরমাল। এদিকে কোভিডের সংক্রমণ এড়ানো গেলেও দীর্ঘক্ষণ ল্যাপটপে কাজের প্রভাব পড়ছে আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর। বাড়িতে থেকে কাজ করা মানেই, আমরা কখনও সোফায় বা কখনও বিছানায় বসে কাজ করছি। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রেই ঠিক থাকছে না ল্যাপটপে কাজ করার প্রয়োজনীয় পশচার বা দেহভঙ্গি। দেখা দিচ্ছে চোখ, পীঠ ও কোমড়ের ব্যাথা বা অন্যান্য সমস্যা । এর প্রভাব পড়ছে আমাদের কাজেও। ভুল দেহভঙ্গির কারণে অযথা চাপ সৃষ্টি হচ্ছে আমাদের মেরুদণ্ডের ওপর। অন্যদিকে ল্যাপটপের নিল রশ্মীতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চোখ। সমস্যার চটজলদী সমাধানে কাজে লাগান এই সরঞ্জামগুলিকে। ল্যাপটপে কাজ করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এগুলি।
প্রোফেশনাল ক্লিনিং কিট
দীর্ঘসময় ধরে ব্যবহার হলে, ল্যাপটপে ধুলোকণা বা ময়লা জমার সম্ভাবনা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। তাই ল্যাপটপ পরিষ্কার করতে বেশ কাজের এই কিট। ইকমার্স প্ল্যাটফর্মগুলিতে সহজেই পাবেন এই ধরনের ক্লিনিং কিট। তবে এই কিটে কী থাকছে তা দেখে কিনবেন অবশ্যই। সাধারণত যে কোনও ক্লিনিং কিটে, একটি পাওয়ারফুল ডাস্ট এয়ার ব্লোয়ার, ১০টি কটন স্বোয়াব, একটি নরম মাইক্রোফাইবার কাপড় , একটি স্বেইড চামড়ার তৈরি মাইক্রোফাইবার কাপড়, ধুলোকণা পরিষ্কার করতে অ্যান্টি স্ট্যাটিক ক্লিনিং ব্রাশ, অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল লেন্স ক্লিনিং সোলিউশন থাকবে। আর শুধু ল্যাপটপই নয় এগুলি যে কোনও ইলেকট্রনিক গ্যাজেট পরিষ্কারের ক্ষেত্রে কার্যকর।
ফোল্ডেবেল ল্যাপটপ স্ট্যান্ড
ল্যাপটপে কাজ করার সময় আপনার দেহভঙ্গি ঠিক রাখতে দারুণ উপযোগী এই স্ট্যান্ড। উচ্চতার নিরিখে এই ল্যাপটপ স্ট্যান্ডটিকে ৬টি ধাপে নিয়ন্ত্রিত করা যায়। সুবিধেমত ল্যাপটপ অ্যাটজাস্ট করে নিতে পারবেন আপনি। এর ফলে দীর্ঘক্ষণ ল্যপটপ ব্যবহার করলেও আপনা ঘাড়ে বা মেরুদণ্ডে অতিরিক্ত চাপ পড়বে না। কাঁধ ও পীঠের ব্যাথা থেকেও অনেকটাই মুক্তি পাবেন। অ্যালুমিনিয়ামের খাদ ও সিলিকন রাবার প্যাডের তৈরি বেশ শক্তপোক্ত তবে ওজনে বেশ হালকা। তাই সহজেই ঘরের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে নিয়ে যেতে পারেন। ঘরের কোনও একটি বিশেষ জায়গায় ল্যাপটপ নিয়ে আর আপনাকে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে না।
অর্থোপেডিক মেমরি ফোম সিট কুশন
ওয়ার্ক ফর্ম হোমে (WFH) একটানা চেয়ারে বসে কাজ করতে গিয়ে পীঠের তীব্র যন্ত্রনায় কষ্ট পাচ্ছেন অনেকেই। তবে এই ফোম কুশনের সাহায্যে অনেকটাই আরাম পেতে পারেন আপনি। চেয়ারে বসার ফলে টেইলবোন ও হিপবোনে যে চাপ সৃষ্টি হয় তা থেকে রেহাই পাবেন। এছাড়াও লং ড্রাইভের ক্ষেত্রেও এই কুশন খুব কাজের । এই মেমরি ফোম সিট কুশন গাড়ির সিটে আপনার পীঠকে ঠেস দিয়ে বসার সুবিধে করে দেবে। আর আপনার মেরুদণ্ডকে সোজা রাখবে।
স্ট্র্যাপ সমেত জেল আই মাস্ক
সকাল থেকে মুঠোফোন ও ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে টানা তাকিয়ে থাকার কারণে দিনের শেষে ক্লান্ত হয়ে পড়ে চোখ যুগল। প্রয়োজন ৩০ মিনিটের একটি বিরতীর। এই সময় কাজে লাগতে পারে জেল আই মাস্ক। একটানা মাথা যন্ত্রণা, চোখে ঘোর লাগা, চোখের তলায় ফোলাভাবের হাত থেকে রেহাই দেবে এই আই মাস্ক। আধঘন্টার এই বিরতীর পর, দেখবেন অনেকটাই তরতাজা মনে হবে নিজেকে। তবে এই ধরণের সমস্যা যদি নিয়মিত হয় তাহলে তত্ক্ষণাত্ কোনও চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়াই কাম্য ।
এক্সটেনশন বোর্ড
ডেস্কটপের যুগ থেকেই একটি গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম এই এক্সটেনশন বোর্ড। ওয়ার্ক ফর্ম হোমের দৌলতে এক্সটেনশন বোর্ড এখন মিলবে ঘরে-ঘরে। মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, হেডফোন সহ অন্যান্য যন্ত্রের ওয়ান স্টপ চার্জিংয়ের এই ব্যবস্থা খুবই প্রয়োজনীয়। না হলে রীতিমতো খণ্ডযুদ্ধ লেগে যেতে বাধ্য বাড়িতে। সোশাল মিডিয়ায়, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আর ওয়ার্ক ফর্মে হোমের যুগে মানুষ অনেক অসুবিধের সঙ্গেই আপোস করে নিতে শিখেছে ঠিকই। কিন্ত চার্জিনংয়ের অভাবে ফোন বা ল্যাপটপ বন্ধ হলেই যত গণ্ডগোল।
ব্যাক ব্রেস পসচার কারেক্টার
হাঞ্চ ব্যাক বা রাউন্ড ব্যাকের সমস্যায় ভুগছেন অনেকেই। ল্যাপটপে দীর্ঘক্ষণ কাজ করার ফলে বেড়িয়ে আসছে কুঁজ। ল্যাপটপে কাজ করার সময় পশচার ঠিক না থাকায় চাপ পড়ছে মেরুদণ্ডের ওপর। বেঁকে যাচ্ছে মেরুদণ্ডে, বেরিয়ে আসছে কুঁজ। এই ক্ষেত্রে পসচার কারেক্টরের ব্যবহার অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারে সমস্যা। পোসচার কারেক্টার আপনার পীঠকে সব সময় সোজা রাখবে। ফলে সুস্থ থাকবে আপনার মেরুদণ্ড।
অ্যাডজাস্টেবেল ল্যাপটপ স্ট্যান্ড
যে কোনও সৃজনশীল কাজের জন্য প্রয়োজন একটা কমফোর্ট জোন। অনেক সময় মনে হয়েছে যদি ইচ্ছেমতো ল্যাপটপ রেখে কাজ করতে পারতেন আপনি। তাহলে আরও ভাল হত। ব্যাঘাত ঘটত না আপনার ওয়ার্ক ফ্লো-এ। এই স্ট্যান্ডের কাজ আপনার সুবিধে মতো ল্যাপটপটি ধরে রাখা। স্ট্যান্ডটিকে আপনার সুবিধে মতো যে কোনও অ্যাঙ্গেলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিন। ঠিক জায়গায় এলে স্ট্যান্ড লক করে দিন। এখানেই শেষ নয়, আপনার ল্যাপটপকে অতিরিক্ত গরম হতে দেবে না এই যন্ত্রটি। সঙ্গে থাকছে একটি ডিট্যাচেবেল মাউস প্যাড ট্রেও।
ব্লু লাইট ব্লকিং কমপিউটার গ্লাস
লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট! ল্যাপটপের নীল আলো যে আমাদের চোখের পক্ষে কতটা ক্ষতিকারক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই ব্লু লাইট ব্লকিং চশমা আপনার চোখকে অনেকটাই আরাম দেবে। প্রায় ৯০শতাংশ ব্ল লাইট ফিল্টার হয় বলে জানা গিয়েছে। এর ফলে মাথা ধরা, চোখের জল শুকিয়ে যাওয়ার মত সমস্যার হাত থেকে আপনি সহজেই মুক্তি পাবেন। প্রত্যেকেই যারা ল্যাপটপে কাজ করেন তাঁদের ক্ষেত্রে এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ।