কেউ কি জানেন, শিঙাড়ার কোনও আধার কার্ড নেই৷ শুধু শিঙাড়া কেন, নাগরিকত্ব পরীক্ষায় ডাহা ফেল গোলাপজাম, চিকেন টিক্কা এবং আরও কত কে! ভাবছেন শিঙাড়া বুঝি বাংলায় তৈরি৷ নিদেন বিহারের৷ লালুপ্রসাদ তো সেই কবেই বলেছিলেন, ‘যব তক শিঙাড়াকে মে আলু, তব তক বিহার মে লালু৷’ না, তোকোণা এই শিঙাড়াটি বাঙালির পরম আত্মীয় বটে, কিন্তু বাঙালি নয়৷ বিহারিও নয়৷ দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে দিব্যি সংসার পেতেছে এই দেশে৷
গুলাবজামুন বা গোলাপজাম– আহ! এলাচ, গোলাপ জল ও চিনির শিরায় ডুবে থাকা খোয়ার তৈরি এই গোলাকৃতি খাদ্যটি যে ভারতীয় নয়, ভাবতেই মন ভেঙে যায়। সেই কোন কালে পারস্য, অধুনা ইরান থেকে ভারতে এসেছিল এই মিষ্টি। আর এখন উত্তর ভারতের সব পার্বণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে গেছে এটি।
ডাল ভাত- মন জুড়ানো এই ডাল ভাত-জুটিও নাকি ভারতীয় নয়। এর জন্ম নাকি নেপালে!
রাজমা- বাঙালিদের রান্নাঘরে রাজমার অবারিত দ্বার নেই ঠিকই, কিন্তু উত্তর ভারতীয়রা রাজমা চাওয়ালের নাম শুনলেই যেন অজ্ঞান এমন একটা ভাব। কিন্তু এত হু-হতাশ যার জন্য সেই রাজমাও কিন্তু ভারতীয় নয়। পর্তুগাল থেকে ভারতে আসা এই রাজমাকে যে জলে ভিজিয়ে ফুটিয়ে নিতে হয় তা শিখিয়েছে মেক্সিকানরা। তবে আদা রসুন, পেঁয়াজ ও টমেটো দিয়ে সুস্বাদু গ্রেভিতে রাজমা কষিয়ে রান্না করা হয় সেই পদ্ধতি একেবারে খাঁটি ভারতীয়।
জিলিপি বা জলেবি- হ্যাঁ ঠিকই পড়ছেন। রসগোল্লা, পান্তুয়া, কালোজামের কাছে খোয়ার গুলাব জামুন নিয়ে বাঙালির তেমন মাথা ব্যথা না-থাকলেও, জিলিপির প্রতি অগাধ ভালবাসা রয়েছে। জিলিপির এই রসালো প্যাঁচের মায়া তো সেই আমাদের ছোট্টবেলা থেকে কাছে টানে। কিন্তু না, এই জিলিপিও ভারতীয় নয়। এটাও গুলাব জামুনের মতো মধ্যপ্রাচ্যের আমদানি। আরবি ভাষায় জলাবিয়া বা পারস্যে জলিবিয়া নামে পরিচিত।
শিঙাড়া বা সামোসা- যে শিঙাড়া দিয়ে এই আলোচনা শুরু হয়েছিল এ বার তার পালা। শিঙাড়া চতুর্দশ শতাব্দীতে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ভারতে আসে মধ্য এশিয়ার ব্যবসায়ীদের হাত ধরে। মধ্যপ্রাচ্যে এটি সাম্বোসা নামে পরিচিত।
চিকেন টিক্কা মশালা– টিক্কা মশালা যখন, তখন হতেই হবে ভারতীয়, তাই ভাবছেন তো? কিন্তু না, এই চিকেন টিক্কা মশালার জন্ম সাতসাগর পেরিয়ে, জন্ম গ্লাসগোতে। ১৯৭১ সালে এক গ্রাহকের অনুরোধ রাখতে ড্রাই চিকেনের একটি ডিশ বানাতে গিয়ে এই চিকেন টিক্কা মশালার জন্ম দেয় সেফ আলি আহমেদ।