রুটি, পরোটা খেতে আপনি ভীষণ ভালবাসেন কিন্ত বাঁধ সেধেছে আপনার গ্লুটেন অ্যালার্জি। যদিও এই অ্যালার্জির তোয়াক্কা না করেই আপনি মাঝে মধ্যেই মনের সুখে পরোটা পেটে চালান করেন কিন্তু ইদানীং রুটি ও পরোটা ঘন ঘন খেয়ে ফেলায় পেটের সমস্যায় একেবারে কাবু হয়েছেন। সঙ্গে দোসর হয়েছে শীতকাল। শীতে কম জল খাওয়ার কারণ হোকা কিংবা কম চলাফেরা অনেকেই পেট ও হজম সংক্রান্ত সমস্যায় ভোগেন। এদিকে শীতকালে একেবারের বেশি ভাত খেতেও ভাল লাগে না। ওটস আর কিনুওয়া আছে কিন্তু আপনার আবার মুখে রোচে না। উপায় একটা আছে, প্রথম প্রথম কাঠখড় পোড়াতে হবে ঠিকই তবে গমের আটার বা সাদা ময়দার বদলে মিলেটের পরোটা (millet paratha) খেতে মন্দ লাগবে না।
মিলেট দিয়ে আগে যদি আপনি রান্নার চেষ্টা করে থাকেন তা হলে জানেন যে এ কাজ সহজ নয়। তাই কীভাবে এই কাজ আয়ত্তে আনবেন দেখে নিন-
টাটকা খেতে হবে
গ্লটেন ফ্রি যে কোনও খাদ্য দ্রব্য ব্যবহার করলে সবসময় টাটকা অবস্থাতেই বানিয়ে খেতে হবে। যেমন গমের বদলে মিলেটের আটা দিয়ে পরোটা বানিয়ে বাদ বাকিটা পরের দিনের জন্য ফ্রিজে রাখলে চলবে। তা হলে আটা প্রচন্ড শক্ত হয়ে যাবে। এই শক্ত আটা কোনওরকমে আপনি বেলে নিলেও স্বাদ খারাপ হয়ে যাওয়ার কারনে খেতে পারবেন না।
বাড়িতে আটা তৈরি করলে ভাল করে চেলে নিন
মিলেটের আটা (millet flour) যদি আপনি বাড়িতেই বানিয়ে নেন তাহলে আটা মাখার আগে ভাল করে চেলে নিন। মিলেটের পরোটা শুনে যতটা মনে হয় বানানো অতটা সহজ নয়।
মিলেটের আটা মাখার সময়ে জল ও আটার সঠিক অনুপাত রাখুন
মিলেটের আটা মাখার সময় মাপের গণ্ডগোল হলে মুশকিলে পড়বেন। তাই মাপ ঠিক রাখতে হবে, ১:১ এর অনুপাতে গরম জল ও মিলেটের আটা নিয়ে মাখতে হবে। তবে প্রয়োজনে শেষ মুহূর্তে আটা মাখার প্রয়োজন মত কনসিসটেনসি পেতে জল বা আটার প্রয়োজন পড়তে পারে। প্রথম দিকে একটু সমস্যা হবে পরে আন্দাজ হয়ে গেলে বিষয়টা সহজ হয়ে যাবে।
পরোটা বেলার সময় বার বার জলের ছিটে দিতে হবে
আটা মাখা হয়ে গেলেই আর দেরি নয়। যত তাড়াতাড়ি পরোটা বানাবেন খেতে তত নরম হবে। মিলেটে প্রচুর পরিমানে ফাইবার থাকে তাই নিমেষে জল শুষে নেয় মিলেট। তাই আটা মেখে রেখে দিলেই দেখবেন এমন শক্ত হয়ে যাবে যে পরোটা বেলাও দুষ্কর হয়ে উঠবে।
বেলার সময় চাকি বেলনি কিংবা হাত দিয়ে মিলেটের রুটি বানিয়ে নিতে পারেন। আপনার যেভাবে সুবিধে হয়।
লেচি বেলার সময় হাতের কাছে একটা ছোট বাটিতে জল রাখুন। প্রয়োজন মত জল দিয়ে দিয়ে বেলে নিন। না হলে দেখবেন শুকিয়ে গিয়ে ফেটে যাচ্ছে।
পুর ভরা মিলেটের পরোটা বানালে এই বিষয়গুলো মাথায় রাখুন
যদি পুর ভরতে চান তা হলে পুর ভরে ভাল করে পরোটা অল্প অল্প জল দিয়ে জুড়ে নিন। বেলার সময় তাড়াহুড়ো করবেন না। তাহলে আটা ফেটে পুর বেরিয়ে যাবে। বেলতে অসুবিধে হবে। তাই পরোটা আর বড় করার আগেই ফাটা জায়গাগুলোতে জল দিয়ে ভরিয়ে দিন।
পুর ভরা মিলেট পরোটা বানানো সময় মনে রাখবেন যদি সবজি ব্যবহার করেন তাহলে একেবারে কুচিয়ে কেটে সিদ্ধ করা হলে মিলেট পরোটা বেলতে সুবিধে হবে।
মিলেটের পরোটা বেলার আলাদা কায়দা রয়েছে, শিখে নিন
হাতে বানালে কিংবা চাকি বেলনি ব্যবহার করলে মনে রাখেবে আটা বা ময়দার পরোটার মতো দুতিন টানে বানিয়ে ফেলা সম্ভব না। চেষ্টা করতে গেলে মিলেটের পরোটা ফেটে নষ্ট হয়ে যাবে। তাই লেচি সামান্য একটু বড় হলে গরম তাওয়ায় রাখুন। বেলার কারনে দেখবেন লেচির ধারগুলো ফেটে আছে। সেগুলো তে জল দিয়ে আটা জোড়া লাগান এবং আঙুল দিয়ে বা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে চেপে পরোটা বড় করে নিন।
মনে রাখতে হবে এটা মিলিটের পরোটা তাই ঘন ঘন এপিঠ ও পিঠ করা যাবে না। এক পিঠ ভাল ভাবে ভাজা হলে তার পরেই অন্য পিঠ তাওায়ায় রাখুন। ব্যাস আপনার মিলেট পরোটা তৈরি।
মিলেটের উপকারিতা
মিলেট খাবার কোনও একটা নয় রয়েছে একাধিক উপকারিতা। মিলেটে প্রচুর ফাইবার থাকায় এটা ডায়বিটিকদের জন্য ভীষণ উপকারী। এটা প্রিবায়োটিকের হিসেবেও ভাল কাজ করে এবং গাট হেলথ ভাল রাখে। এতে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস রয়েছে। তাই এটা ক্যানসারের মত মারণ রোগ প্রতিরোধ করতেও সক্ষম।