কুচকানো চামড়া, ফোকলা হাসি, উদ্বেগ, ডিপ্রেশন, বিরক্তি, ভুলো মন আর বৃদ্ধাবস্থা সমানর্থক! কতটা যুক্তিসঙ্গত কে জানে, বরং বলা ঠিক এগুলো আমাদের ধারণা। আর যেহেতু ধারণা মাত্র, তাই সব ধারণা যে সত্যি হবে তার কোনও মানে নেই। জীবন পরিবর্তনশীল তাই শারীরিক পরিবর্তনে আমরা সাময়িকভাবে বিচলিত হলেও প্রত্যেকেই জানি বয়স বাড়বে, এটা ভবিতব্য। তবে বৃদ্ধাবস্থার যে সবার কাছে এক রকম সমস্যা এনে দেয় না, তা কিন্তু নয়। প্রত্যেকের শারীরিক গঠন আলাদা তাই বয়স বাড়লে যে সমস্যা হয় সেগুলোও আলাদা।তবে শরীরের বয়স বাড়লেই কী মনের বয়স বাড়তে দেওয়া ঠিক? যে যাই বলুক না কেন জীবন সবার কাছে সমান সদয় হয় না তাই অনেক ইচ্ছে-আকাঙ্খা পূর্ণতা পায় না ঠিক সময়। বয়স বাড়লেই যে লাঠি ধরতে হবে সেটা যেমন ঠিক না আবার হাতে লাঠি উঠলেই যে লাঠি ছাড়া গতি নেই তাও না। তাই বৃদ্ধাবস্থা নিয়ে এই ভ্রান্ত ধারণাগুলি থেকে বেড়িয়ে আসা প্রয়োজন-
ভ্রান্ত ধারণা ১: বয়স্কদের বেশি ঘুমের প্রয়োজন নেই
ঘুম, আমরা প্রত্যেকেই জানি মস্তিষ্কের পরিচালন ক্ষমতা ঠিক রাখতে খুবই প্রয়োজন।তাই বয়স যাই হোক না কেন দিনে অন্তত ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। এর কম ঘুম মানেই মস্তিষ্কের ওপর চাপ সৃষ্টি হওয়া। শরীরকে ক্লান্ত করা। তাই বয়স যতই বাড়ুক না কেন ভাল ঘুম খুব প্রয়োজনীয়। সময় মত ঘুমোতে যাওয়া এবং সময় মত ঘুম থেকে ওঠা। ভীষণ জরুরী।
ভ্রান্ত ধারণা ২: বয়স্কদের মধ্যে ডিপ্রেশন বা বিষাদ হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক
না একদমই নয়। বিষাদ, উদ্বেগ, রাগ এই সবগুলোই আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রভাবে সৃষ্টি হয়।
তাই বাড়ির বয়স্কদের মধ্যে এই ধরনের সমস্যা লক্ষ্য করলে বয়সজনিত কারণ ভেবে উপেক্ষা করবেন না বরং তাঁদের সঙ্গে কথা বলুন, সময় কাটান, সমস্যা কোথায় জানার চেষ্টা করুন।হতে পারে একাকিত্বের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছেন না। তাই কথা বলুন সমস্যার সমাধান বার করুন।
Life is a gift, and when it is long it is a privilege. The “wealth of many years” is a wealth in terms of the persons themselves, their experience and history. #IDOP2021
— Pope Francis (@Pontifex) October 1, 2021
ভ্রান্ত ধারণা ৩: বয়স্কদের কোনও ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি না করাই ভালব
বৃদ্ধাবস্থা মানেই নিত্য নৈমিত্তিক জীবনের অনেক কাজ অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া। এটা একদম ঠিক নয়।বয়স বাড়লে কিছু শারীরিক সমস্যার হয় এটা ঠিক, ফলে যুবাস্থার সেই স্ফূর্তি হয়ত থাকবে না। তাই অনেক কাজ করতেই বেগ পান বয়স্করা। কিন্তু তাঁদের একেবারে বিশ্রামে পাঠিয়ে দেওয়াটা কাজের কথা নয়। এটা করলে তাঁরা মানসিক ভাবে বিমর্শ হয়ে পড়বেন। বেচে থাকার ইচ্ছে হারাবেন। এই অবস্থা থেকে মন খারাপ। আর মন খারাপ হলেই শরীর খারাপ। তাই শরীরচর্চা যেমন যোগা, সকালে বা বিকেলে হাটতে বেড়োলে শরীর ও মন ভাল থাকবে।
এ বছরের থিম ডিজিট্যাল ইকুয়ালিটি ফর অল এজেস
তাই বৃদ্ধাবস্থায় শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ও অবস্থা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে আজকের দিন, ১লা অক্টোবর, প্রত্যেক বছর ইন্টারন্যাশনাল ডে অফ ওল্ডার পার্সন উদযাপন করা হয়।পাশাপাশি বয়স্করা যেভাবে নিত্যদিন অমর্যাদা, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন সেই নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যেও কাজ করছে রাষ্ট্রপুঞ্জ।
ওই কুচকানো চোখের তারায় কত অসম্ভব কে সম্ভব করার গল্প, প্রাজ্ঞতা, ধৈর্য্য, হেরে গিয়েও ঘুড়ে দাড়ানোর লড়াই কত গল্পই তো রয়েছে।যা পরবর্তী প্রজন্মের চলার পথের পাথেয়! তাই বাড়ির বয়স্ক সদস্যদের প্রতি যত্নবান হতে হবে এ প্রজন্মকে। আবার তেমনি বয়স বাড়লেই যে নিজেদের গুটিয়ে নিতে হবে তাও নয়।
ছবি সৌজন্য: Pixabay