ফেসবুকে আলাপ৷ প্রাক্তন সহকর্মীর দূরের আত্মীয়। দীর্ঘ দু’বছরের ডেটিং পর্বের শেষে ‘হ্যাঁ’ বলেছিলেন একে অপরকে। সবকিছু ভালই চলছিল৷ তার পর এল করোনাভাইরাস। সাজানো-গোছানো জীবনের কিছুটা হলেও ছন্দপতন ঘটেছে। তার আঁচ পড়েছে আপনাদের সুখের সম্পর্কে। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, কোথাও যেন একটা দমবন্ধ ভাব আসছে আপনাদের সম্পর্ক। বুঝতে পারছেন না সমস্যাটা কোথায়? কথা বলেছেন, চেষ্টা করেছেন কিন্তু সাড়া পাননি। যতদিন যাচ্ছে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় বাড়ছে। বেরোতে পারছেন না এটা ভেবে যে, এই সম্পর্কের হাত ধরেই অতিমারির ভয়াবহতার পার করেছেন। তা হলে মনোবিদের পরামর্শ নিন। সম্পর্কে সমস্যা আসতেই পারে৷ তবে ভালবাসার সম্পর্কে সংশয় জন্মালে চিন্তার বিষয়। নিজেদের অজান্তেই একটা অসুস্থ সম্পর্ক বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন না তো? সম্পর্কের তিক্ততা ঠিক কতটা বুঝে নিন এই ভাবে-
মনোবল বাড়াতে পাশে থাকেন না কাছের মানুষ
একসঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো যেন আজকাল খাপছাড়া। কেমন একটা আলগা ভাব এসেছে। ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার সময় তাঁর চোখে কোনও উৎসাহ দেখতে পান না।
কথাবার্তায় তিক্ততা
শুরুটা ভাল হলেও আজকাল মাঝপথেই যেন দিশাহীন হয়ে পড়ে আলোচনা। ব্যক্তি বিশেষে সমস্যার পরিভাষা আলাদ হতেই পারে৷ কিন্তু আপনার সমস্যা, খারাপ লাগাগুলো আজকাল যেন তাঁর কাছে হাসি, ব্যঙ্গ বা সমালোচনার প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে। প্রথমে আপনার মন্দ লাগত না৷ ভাবতেন হয়তো আপনাকে বাস্তববাদী করে তুলতেই এই ‘অভিনব’ প্রচেষ্টা। কিন্তু না আপনার সব, সমস্যা, খারাপ লাগা এমনকি ভাল লাগা নিয়েও তাঁর একরাশ বিরক্তি।
অতিরিক্ত অধিকারবোধ
সম্পর্ক গাঢ় হলে অধিকারবোধ আসবেই। তবে সে অধিকারবোধ হবে গ্রীষ্মের দাবদাহে পলাশের শীতল ছায়ার মতো। কাজের চূড়ান্ত ব্যস্ততায় আপনি খেলেন কি না, বাড়ি ঠিক সময় পৌঁছলেন কি না, এই সংক্রান্ত প্রশ্ন শুনতে বা উত্তর দিতে মন্দ লাগে না। কিন্তু এই সব ছাড়িয়ে আপনি কখন কোথায়, যাচ্ছেন কথা বলছেন, ফেসবুক মেসেঞ্জারে কতক্ষণ অ্যাক্টিভ ছিলেন। শুভরাত্রির শুভেচ্ছা বিনিময়ের পরেও আপনি কতক্ষণ অনলাইন ছিলেন ক্রমাগত এই ধরনের প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই সম্পর্কের তিক্ততা বাড়িয়ে তুলবে।
সম্পর্কে বিরক্তিভাব
পুরোনো কোনও খারাপ লাগা বা তর্কের সুত্র ধরে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে সেই নিয়ে নতুন করে অশান্তির সৃষ্টি করা
সম্পর্কে অসততা
ছোটখাটো বিষয় নিয়েও আপনি এবং আপনার কাছের মানুষ, দুজনেই একে অপরকে মিথ্যে কথা বলেন। যেন এমন সত্যি বললেই মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে!
সম্পর্কে মর্যাদার অভাব
দেখা করার কথাই হোক বা বিশেষ কোনও দিনে উইশ করা কোনও বিষয় আপনি প্রাধান্য পান না। আপনার প্রিয় মানুষের যত কাজ, মন খারাপ যেন বেছে বেছে এই দিনগুলোতেই আসে। এ ছাড়াও বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া বলুন কিংবা অফিস ট্যুর— আপনি হাজারো ব্যস্ত থাকলেও তাঁর ভালমন্দ মাথায় রাখেন। কিন্তু পরিবর্তে এর সিকিভাগও আপনার জোটে না।
আর্থিক বিষয়েও অবিবেচকের মতো কাজকর্ম
কমিটেড রিলেশনশিপ যখন, তখন আপনার মেল আইডি, ব্যাঙ্ক ডিটেল, এটিএম কার্ডের পাসওয়ার্ড আরও কত কী! অনেক কিছুই তাঁর জানা, আপনিও হয়তো জানেন কিন্তু কোনও আর্থিক লেনদেনের সময় তাঁকে জানিয়েই কিছু করেন। আপনার ক্ষেত্রে কিন্তু এটা হয় না। হয়তো দু’জনের কথা ভেবেই কিছু সাশ্রয় করেছিলেন তাঁকে জানিয়েই। কিন্তু হঠাৎ দেখলেন সেই সাশ্রয়ের অর্থ ব্যবহার হয়েছে তাঁর নিজস্ব কোনও কারণে। হয়তো আপনার তাতেও আপত্তি নেই৷ কিন্তু খারাপ লাগছে এটা ভেবে যে, তিনি জানানোর প্রয়োজনও মনে করেননি।
মনোকষ্ট, নিজের যত্ন নিতে ভুলে যাওয়া
যে কোনও সম্পর্কে অল্পস্বল্প কষ্ট, ছোটখাট অশান্তি হয়েই থাকে। তবে দুজনে কাছাকাছি এলে বা একসঙ্গে সময় কাটানোর মুহূর্তগুলিও যদি আপনাদের একে অপরকে সামলে বুঝে চলতে হয়, তা হলে সমস্যা। প্রিয় মানুষ কী করলে খুশি হবেন তা ভাবতে এবং সেই কাজ করার চেষ্টা করতেই আজকাল আপনার সময় চলে যায়। নিজের ভাললাগা, পছন্দের কাজ, শরীরচর্চা কোনওটাই করতে আর ভাল লাগে না। দীর্ঘদিন এইভাবে চললে আপনার শারীরিক ও মানসিক সমস্যা হতে পারে।
ভবিষ্যতের কথা ভেবে সম্পর্কে থাকা
আপনি সম্পর্কে থাকছেন শুধু এটা ভেবে যে, আজ নয়তো কাল আপনার কাছে মানুষ সম্পর্ক নিয়ে যত্নবান হবেন। তাই আপনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর মনের মতো হয়ে ওঠার। তবে তিনি এই ব্যাপারে কিছুই খবর রাখেন না। এমনকি, সম্পর্কের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করলে দুজনের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, শুধুমাত্র এটা ভেবে আপনি আপনার খারাপ লাগা বা সমস্যার কথা নিয়ে আর আলোচনা করেন না।
বর্তমানে যুগে আধুনিক জীবনযাপন ও ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডের দৌরাত্ম্যে সম্পর্কের মেয়াদ অনেকটাই কমে আসছে। তাই ভালবাসার সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসা কাজের কথা নয়। তাই সমস্যা হলে তার প্রতিকার করুন। মনোবিদের পরামর্শ নিন, রিলেশনশিপ কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলুন। সম্পর্কটা না বাঁচলেও হয়তো বন্ধুত্বটা বেঁচে যেতে পারে।