‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর’, এটা চিরন্তন সত্য। তাই ত্বক যাতে রোদে না পোড়ে সেই চেষ্টাই করা ভাল। তাই সানস্ক্রিন ছাড়া বাড়ির বাইরে এক পা-ও না বেরোনো ভাল। এদিকে আজকাল আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় একেবারে নাস্তাবুদ অনেকেই। বাড়ি থেকে বেরোনের সময় এই আকাশ কালো করে বৃষ্টি, আবার গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর আগেই হয়ত দেখলেন একেবার চোখ ধাঁধানো রোদ্দুর। সাধারণত সানস্ক্রিন লাগানোর নিয়ম অনুযায়ী, বিশেষ করে আর্দ্রতা পূর্ণ এলাকায়, প্রতি ২-৩ ঘণ্টা যদি সানস্ক্রিন লাগিয়ে নেওয়া যায় তাহলে ভাল। তবে সব সময়ে অক্ষরে অক্ষরে এই নিয়ম কারও মেনে ওঠা হয় না। তাই সানস্ক্রিন লাগিয়েও শেষ রক্ষা না হলে, রোদে পোড়া ত্বক সারিয়ে তুলতে মেনে চলুন এই নিয়মগুলি।
১. রোদে পোড়া ত্বকে অ্যালোভেরার প্রলেপ
রোদে পোড়া ত্বক সারাতে আ্যালোভেরার জুড়ি মেলা সত্যি ভার। অ্যলোভেরার পাতা থেকে জেল বার করে সেটা পোড়া জায়গায় হাল্কা হাতে মালিশ করে নিন। দেখবেন পোড়ার কারণে ত্বকের হারানো ত্বক ফিরে পাবেন। ত্বকে জ্বালা বা চুলকানি হলে নিমেষেই মুক্তি পাবেন এই জ্বালা যন্ত্রণা থেকে। বাড়িতে আ্যলোভেরা গাছ না থাকলে ওষুধের দোকান থেকে জেল কিনতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার ত্বক যদি অতি সংবেদনশীল হয় তাহলে চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।
২. রোদে পোড়া জ্বালা সারাতে নারকেল তেলের মালিশ
অ্যালোভেরার পরেই ত্বকের যত্নে সহজলভ্য উপকরণের হিসেবে জবাব নেই নারকেল তেলেরও। নারকেল তেলে যে ফ্যাটস রয়েছে তা রোদে পোড়া ত্বকের রক্ষা ও যত্ন নিতে খুবই কার্যকরী। ত্বকের রোদে পুড়ে যাওয়া অংশ প্রথমে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিন। তবে কনকনে ঠান্ডা জল ব্যবহার করবেন না। এই অংশে খার জাতীয় সাবান এমনকি ফেস ওয়াশও ব্যবহার না করা ভাল। এবার এই অংশে আলতো হাতে নারকেল তেল লাগিয়ে দিন। দেখবেন আস্তে-আস্তে ত্বক তেল শুষে নিলে, ত্বকের জ্বালা অনেকটা কমবে। আরাম পাবেন।
৩. রোদে পোড়া ত্বকের যত্ন ওটমিলের এই প্যাক খুবই উপকারী
ত্বকের সাময়িক জ্বালা-যন্ত্রণার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর ওটমিল। কীভাবে ব্যবহার করবেন? ওটমিল, মধু ও দুধ দিয়ে একই মিশ্রণ বানিয়ে ত্বকের পোড়া অংশে লাগান। অথবা একটি পাতলা কাপড়ের মধ্যে ওটমিল ভরে ভাল করে মুখ বেঁধে নিন এবং যেভাবে আমরা কাপে চা ডিপ করি সেরকমই এই ওটমিলের পুটলি কিছুক্ষণ স্নানের জলে ডিপ করুন। তবে খেয়াল রাখবেন কোনও মতেই যেন ওটস বা ওটমিল জলে গুলেনা যায় তাহলে আরামের থেকে হয়রানি বেশি হবে।
৪. চা দিয়ে কোল্ড কমপ্রেস
চা-এ রয়েছে ট্যাননিন্স (Tannins) নামে একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এটি ত্বকের জ্বালা কমাতে খুবই কার্যকরী। চায়ের পাতা বা চায়ের লিকার দিয়ে পোড়া ত্বকে ক্লোড কমপ্রেস করুন। খুবই আরাম পাবেন। পরিষ্কার এবং নরম কাপড় ব্যবহার করবেন। প্রয়োজনে কমপ্রেস করার সময় মাঝে চায়ের লিকার বা পাতা দিতে পারেন। চায়ের পাতার সঙ্গে পুদিনা পাতাও ব্যবহার করতে পারেন।
৫. বেকিং সোডা বা কর্নস্টার্চের কমাল
বেকিং সোডা বা কর্নস্টার্চ ও জল দিয়ে মিশ্রণ বানিয়ে রোদে পোড়া জায়গায় লাগিয়ে নিতে পারেন। অথবা স্নানের সময় ইষদুষ্ণ জলে বেকিং সোডা ভাল করে মিশিয়ে নিতে পারেন। এতেও উপকার পাবেন, পোড়া ত্বকের জ্বালা কমবে। এমনকি রোদে পোড়া ত্বকে কর্নস্টার্চ পাউডারে মাখার মতো মেখে শুতে পারেন এতে পোড়া জায়গায় জামাকাপড়ের ঘষা লাগলেও জ্বালা বা ব্যাথা ভাব থাকবে না।
৬. ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখুন
রোদে পোড়া ত্বক মানেই শুষ্ক ত্বক। এদিকে সারাদিনে রোদে পুড়ে শরীরেও জলের ঘাটতি দেখা যায়। এই সময় প্রচুর পরিমান জল, ও এমন খাবার খাওয়া উচিত যাতে শরীর প্রয়োজনীয় জল পায়। যেমন তরমুজ, আঙুর বা কমলালেবু শশা এই জাতীয় ফল খেতে পারেন।
রোদের পুড়ে ত্বকের সমস্যা সাময়িক হলে এই ঘরোয়া উপায় নি:সন্দেহে উপকার পাবেন। তবে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হলে, বা আপনাকে প্রত্যেকদিন দীর্ঘসময় ধরে রোদে থাকতে হলে চিকিত্সকের পরামর্শ নিন। অতিরিক্ত রোদে পোড়ার ফলে আপনার ত্বকে অনেক ক্ষেত্রেই ত্বকের স্বাস্থ্যের চিরতরে ক্ষতি হতে পারে। এমনকি সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মীর প্রকোপে স্কিন ক্যানসারের সম্ভাবনার কথাও থাকছে।
তবে সান পয়েজনিং-র (Sun Poisoning) ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক থাকতে হবে হতে পারে। সেক্ষেত্রে ত্বকে ফোসকা পড়া, বমি বা ঝিম ভাব, জ্বর ও কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এলে তত্ক্ষনাত চিকিত্সকের পরামর্শের প্রয়োজন।