বর্ষাকালে, জমা জল বা কাদা প্যাচপেচে রাস্তা পার করে বাড়ি ফিরলেই যে কেল্লা ফতে, এমন নয়৷ বরং বাড়ি বয়ে নিয়ে আসা ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাসের হয়রানি তো সবে শুরু। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া বা হেপাটাইটিসের মতো বাড়াবাড়ি না-হলেও সর্দিকাশি বা চোখের সমস্যা তো আকছার লেগে থাকে। আমাদের সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গের মধ্যে চোখ অত্যন্ত সংবেদনশীল। তাই বর্ষাকাল এলেই সব থেকে আগে বিভিন্ন জীবাণু সংক্রমণের থাবা বসায় চোখের উপর। প্রয়োজন চোখ নিয়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের। তাই বর্ষাকালে কনজাংকটিভাইটিস ও চোখের অন্যান্য সংক্রমণের থেকে বাঁচতে মেনে চলুন এই নিয়মগুলি।
অপরিষ্কার হাত চোখে দেবেন না
আপনি ঘরেই থাকুন বা বাইরে, কোনওমতেই হাত না-ধুয়ে চোখে দেবেন না। অনেক সময় দেখা যায় কাজের ব্যস্ততায় আমরা হাত ধুতে বা পরিষ্কার করতে ভুলে যাই। তাই চোখ চুলকোনো বা চোখ কড়কড় করলে চোখে হাত না-দিয়ে বরং সাদা পরিষ্কার রুমাল দিয়ে চোখ মুছে নিন। হাতের আঙুলে নানা ধরনের জীবাণু থাকে তাই হাত না ধুয়ে চোখে দিলে খুব সহজেই চোখে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। আরও ভাল হয় যদি কাজের ফাঁকে মিনিট খানেকের বিরতি নিয়ে আপনি চোখে জলের ঝাপটা মেরে নেন। এর ফলে দীর্ঘক্ষণ একভাবে তাকিয়ে থাকলে চোখের জ্বালা কমবে, চোখও পরিষ্কার হবে। তবে জলের ঝাপটা খুব জোরে দেবেন না৷ আলতো করে দিলেই কাজ হবে। না হলে হিতে বিপরীতও হতে পারে।
চশমা বা সানগ্লাস পরিষ্কার রাখুন
ডিজিট্যাল যুগে ল্যাপটপ বা ডেস্কটপের ক্ষতিকারক নীল রশ্মি থেকে বাঁচতে আজকাল চশমা প্রায় সকলেই পরেন। বর্ষাকালে এগুলো পরিষ্কার রাখার খুবই প্রয়োজন। চশমা বা সানগ্লাস পাউচ বা যে বাক্সে রাখবেন তা নিয়মিত পরিষ্কার করুন। চশমা মুছতে যে কাপড় ব্যবহার করেন তা ভাল করে ধুয়ে ব্যবহার করুন। কন্ট্যাক্ট লেন্সে বাইরে ফেলে রাখবেন না। যত্ন সহকারে লেন্সের বাক্সে ঢুকিয়ে সঠিক জায়গায় তুলে রাখুন।
চোখের মেকঅ্যাপ নিয়ে সতর্ক থাকুন
বৃষ্টিতে ভিজলেই মেকআপ ধুয়ে ছড়িয়ে যেতে পারে৷ তাই ওয়াটার প্রুফ আই মেকঅ্যাপ ব্যবহার করুন। এবং কাজল বা মাশকারার মতো আই মেক আপের যাবতীয় সরঞ্জাম অন্য কারও সঙ্গে ভাগ করবেন না। এমনকি লেন্সের বাক্স কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করবেন না। বরং ব্যবহারের পর লেন্সের বাক্স ভাল করে পরিষ্কার করে তুলে রাখুন। চোখে কোনও সংক্রমণ হলে তা সেরে না-ওঠা পর্যন্ত মেকআপের কোনও সামগ্রী ব্যবহার করবেন না।
কনজাংকটিভাইটিস হলে এই নিয়মগুলি মেনে চলুন
বাড়িতে কারও কনজাংকটিভাইটিস হলে সাবধানে থাকুন। সামান্য অসাবধানতা দেখালেই এই সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই অসুস্থ ব্যক্তির চোখে ওষুধ দেওয়ার পর হাত ভাল করে ধুয়ে ফেলুন। অসুস্থ ব্যক্তির সঙ্গে জামাকাপড়, তোয়ালে শেয়ার করবেন না। এমনকি সম্ভব হলে আলাদা বাথরুম ব্যবহার করুন। এগুলোর মাধ্যমে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মহামারি বা কনজাংকটিভাইটিসের সময়ে জলবহুল জায়গাগুলি এড়িয়ে চলুন।
জমা জলের এলাকগুলো এড়িয়ে চলুন
বলা সহজ, তবে বর্ষাকালের প্রায় সব রাস্তাই জলমগ্ন। সেক্ষেত্রে জলমগ্ন এলাকা এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়। তবে সম্ভব হলে তা নিশ্চই করুন কারণ এই সব জমা জলেই ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ দ্রুত ছড়াবে। এ ছাড়া বৃষ্টির জল যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন, কারণ এই জলেও প্রচুর ময়লা থাকে যা চোখের পক্ষে ক্ষতিকারক।
বর্ষাকালের হাওয়া ও ধুলোঝড় থেকে চোখকে বাঁচিয়ে রাখুন
বর্ষাকালে রাস্তাঘাটে বেরোলে আচমকাই ধুলোঝড়ের মধ্যে পড়তে পারেন। এই সব ক্ষেত্রে ভাল করে চোখ ধুয়ে নিন। চোখে ধুলোবালি পড়লে বিভিন্ন সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তাই বর্ষাকালের এই সব সমস্যা থেকে চোখকে বাঁচিয়ে রাখতে চশমা পরে বেরোলে অনেক সুবিধে হবে।