বর্ষাকালে নিয়ম মেনে রবারের জুতো পরেই আপনি বাড়ির বাইরে বেরোন, কিন্তু ওই যে সেদিন রোদ উঠেছে দেখে ফর্মালের সঙ্গে লেদার শু টিম আপ করার লোভ সামলাতে পারলেন না। গণ্ডগোল বাঁধল ওখানেই। বাড়ি ফেরার সময় আপনি আর সাধের চামড়ার জুতো বৃষ্টিতে একেবারে কাকভেজা। মন খারাপ হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা না-করে বরং চটপট জুতোর সঠিক যত্ন নিন। এই নিয়মগুলো মেনে জুতো শুকিয়ে ও পরিষ্কার করে তুলে রাখলে জুতো ভাল থাকবে।
১.জুতো ভাল করে পরিষ্কার করে নিন
প্রথমেই জুতোর বাইরে জল বা কাদা লেগে থাকলে বাড়ি পৌঁছেই পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। জুতোর ওপরে কাদা বা জল শুকিয়ে গেলে পরিষ্কার করতে অসুবিধে হবে। তাই শুকনো নরম কাপড় দিয়ে জুতো ভাল করে মুছে শুকিয়ে নিন। এতে জুতোর গায়ে জলের দাগ থাকবে না।
২. জুতো থেকে ফিতে বার করে রাখুন
জুতোর ফিতে খুলে নিন। সাধারণত চামড়ার জুতোয় কটনের বা অন্য ফাইবারের লেস থাকে। সেক্ষেত্রে লেসটা বার করে ভাল করে মুছে শুকিয়ে নিলেই ভাল। এতে জুতোর ফিতে আর জুতো দুটোই তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।
৩. জুতো থেকে ইনসোল সরিয়ে রাখতে হবে
জুতোর তলায় ও ইনসোলে আর্দ্রতা জমে থাকে। তাই জুতোর ভেতরের এই ইনসোল তা বের করে নিন। ইনসোল সরিয়ে নিলে জুতোর ভিতরে ভালভাবে হাওয়া ঢুকে জুতো তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে। এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, জলে ভেজার কারণে জুতো থেকে বাজে গন্ধ বেরোনো বা জুতো বেঁকে যাওয়ার মতো সমস্যা থাকবে না। তাই ইনসোল সরিয়ে নিয়ে পরিষ্কার, শুকনো কাপড় দিয়ে জুতোর ভেতরটা ভাল করে মুছে নিন।
৪. জুতোর তলা শুকিয়ে নিন
বর্ষাকালে মেঝে ভিজে ওঠে এই সময় জুতোর তলার সোল ও ভেজা মেঝের আর্দ্রতায় জুতো শুকোতে আরও দেরি হয়। তাই জুতোর তলা ভাল করে মুছে জুতো দাঁড় করিয়ে রাখুন বা জালি দেওয়া জুতোর তাক থাকলে তাতে জুতো রেখে দিন। এমনভাবে রাখবেন যেন জুতোর তলাটা শুকিয়ে যায়।
৫. জুতোর ভিতরে যেন ভেজা না থাকে
জুতোর ভিতরে পুরনো খবরের কাগজ দিয়ে ছোটো বল বানিয়ে জল শুকিয়ে নিন। এর ফলে শুকনো খবরের কাগজ ভেতরের আর্দ্রতা ও চামড়া ভেজা ভাব সবটাই শুষে নেবে। এটা খুবই কাজের তবে নজর রাখতে হবে কাগজের এই বল ভিজে গেলেই আবার নতুন বল রাখতে হবে। জুতো চুপচুপিয়ে ভিজে গেলে কাগজের প্রথম দুটো বল ২০ মিনিট অন্তর অন্তর বদলে ফেলতে হবে। এরপর প্রয়োজন মতো কাগজের বল ব্যবহার করুন।
৬. জুতোর জল শুকিয়ে গেলেও থেকে যায় ভেজা ভাব
জুতোর ভিতরের জল শুকিয়ে গেলেও দেখবেন ভেজা ভাব রয়েছে। এ বার আর খবরের কাগজের পদ্ধতি কাজে দেবে না। এ বার প্রয়োজন জুতো জোড়া শুকনো হাওয়ায় শুকিয়ে নেওয়ার। কী করবেন? পারলে শুকনো জায়গায় তুলে রাখুন, হাওয়া পাবে কিন্তু আর্দ্রতা থাকবে না। এদিকে গরম হাওয়া দিয়ে জুতো শুকনোর কথা যদি ভাবেন তা হলে খুব সতর্ক থাকবে হবে। বেশি গরম হাওয়ায় জুতো তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে ঠিকই। কিন্তু এর ফলে জুতোয় ফেটে যাওয়া বা বেঁকে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। বেশি গরম হাওয়া মানে ব্লো ড্রায়ার, বেসবোর্ড হিটিং বা রেডিয়েটার এগুলির ব্যবহার না করাই ভাল।
৭. জল বা কাদার দাগ পরিষ্কার করুণ এইভাবে
জুতো শুকিয়ে গেলে এ বার একটু ভাল করে নিরীক্ষণ করে নিন। হতে পারে কোথাও জল বা ময়লার দাগ হালকা দাগ থেকে যেতে পারে। এর জন্য বাড়তি নজরদারির প্রয়োজন। নুনের দাগ হলে ভিনেগার জলে গুলে নিন এবং সেই জলে কাপড় ভিজিয়ে জুতো মুছে নিন। তেল বা কালির দাগ হলে ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করতে পারেন।
৮. জুতোর কন্ডিশনিং ও পলিশিং
জুতো পুরোপুরো শুকিয়ে গেলে এ বার কন্ডিশনিং ও পালিশের প্রয়োজন। চামড়ায় তেল ও ট্যানিন থাকে, যে কারণে জুতো ভাল ও চকচকে থাকে। কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার পর এগুলি নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে জুতো শুকিয়ে ফেটে যায়। এই সময় লেদার কন্ডিশনিং করলে জুতোয় হারানো আর্দ্রতা ফিরে আসে। কন্ডিশনারের বাক্সের গায়ে লেখা নিয়ম পড়েই ব্যবহার করা ভাল। অন্তত ১০ থেকে ২০ মিনিট জুতোর গায়ে কন্ডিশনার লাগিয়ে রেখে দিন। কন্ডিশনার শুকিয়ে গেলে একটা আবছা ভাব তৈরি হবে। পুরো শুকিয়ে গেলে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুখে নিন। এ বার ভাল করে জুলো পালিশ করে নিন।
৯. পারলে শু ট্রি ব্যবহার করুন
চামড়ার জুতো পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে জুতোর ভিতরে শু ট্রি ঢুকিয়ে রাখতে পারেন। এতে জুতোর শেপ ঠিক থাকবে। এই শু ট্রি সিডার, একপ্রকারের দেবদারুর তৈরি। সুগন্ধ যুক্ত এই শু ট্রি জুতোকে আর্দ্রতা মুক্ত রাখে ও সুন্দর গন্ধ বজায় থাকে।