জলপাইয়ের তেলের গুনের কথা সর্বজন বিদিত। রান্না ও রূপচর্চায় এই তেলের অপার মহিমা। কিন্তু জলপাইয়ের পাতার জাদুকরি ক্ষমতা কি আপনার জানা আছে? প্রাচীনযুগে তো বটেই বর্তমান সময়ও এই পাতার বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের কার্যকারীতার জবাব নেই।জলাইায়ের পাতায় অলিউরোপিন নামক একটি উপাদান পাওয়া যায়। এর ফলে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে এই পাতা খুবই উপকারী। জেনে নিন কোন কোন রোগের ঘরোয়া উপায়ে নিরাময়ের কাজে ব্যবহার করতে পারেন জলপাইয়ের পাতা।
হার্পেস সারাতে পারে জলপাইয়ের পাতার
জলপাইয়ের পাতায় রয়েছে অ্যান্টি ভাইরাল ও অ্যান্টি মাইক্রোবায়েল ক্ষমতায় হার্পেসের মতো ভাইরাসের সংক্রমেন ক্ষেত্রে কার্যকারী এই পাতার নির্যাস। আপনার যে জায়গায় হার্পেস হয়েছে সেখানে ১-২ ফোঁটা জলপাইয়ের পাতার নির্যাস লাগিয়ে নিন। দেখবেন কিছুটা আরাম পাবেন। এবং ক্ষতস্থান থেকে সংক্রমনের ছড়িয়ে আশেপাশের ত্বকের কোষের ক্ষতি করতে পারবেনা।
মস্তিষ্ককে এইভাবে সুস্থ রাখে জলপাইয়ের পাতার নির্যাস
অলিউরোপিন স্মৃতিভ্রম(Alzheimer’s Disease) রোগ প্রতিরোধে যথেষ্ট কার্যকরী। এর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট কার্যকারীতা মস্তিষ্কে ডোপামাইনের ক্ষরণ আটকে মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখে। কেন্দ্রীয় স্নায়ু পদ্ধতিকে স্ট্রোকের ঝুঁকি থেকে সুরক্ষিত রাখে। এইভাবে প্রবীণ বয়সের পার্কিনসন (Parkinson) এবং স্মৃতিভ্রম(Alzheimer’s Disease) রোগও প্রতিরোধ করে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে জলাইপাইয়ের পাতা
অলিওরোপিন উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এটি রক্তনালিকে শিথিল করতে সাহায্য করে। রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন কমায়। এ ছাড়া করনারি আর্টারিতে রক্ত চলাচল ঠিক রাখতে কাজ করে।
হৃদযন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখে এইভাবে
হার্টের সবথেকে বড় সমস্যা ধমনীর সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়া। এর জন্য দায়ী শরীরে মাত্রাতিরিক্ত ব্যাড
কোলেস্টেরল (LDL) জমা হওয়া। একটি গবেষণায় দেখা গেছে LDL-র মাত্রা অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে জলপাই পাতার নির্যাস।
ডায়বেটিসে কীভাবে কার্যকরী
গবেষণায় দেখা গেছে, রক্তের শর্করা পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে জলপাইয়ের পাতা। এটি ‘টাইপ টু’ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে। জলপাইয়ের পাতা শরীরের স্বাস্থ্যকর টিস্যুগুলোকে সুরক্ষিত রাখে।
ক্যানসার প্রতিরোধ করে
জলপাইয়ের পাতার নির্যাস ব্রেস্ট ক্যানসার (Breast Cancer) প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি ক্যানসার সৃষ্টিকারী কোষ বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। একইসঙ্গে টিউমারের সম্ভাবনাও অনেকটাই কমিয়ে দেয়।
অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করে
একটি গবেষণায় জানা গেছে অলিওরোপিয়েন হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন জলপাইয়ের পাতার নির্যাস
একে মোটামুটি নিরাপদ খাবারই বলা যায়। জলপাইয়ের পাতার চা বানিয়েও খেতে পারেন। বা শুকিয়ে গুঁড়ো করে খেতে পারেন।
চিকিত্সকের পরামর্শের প্রয়োজন
তবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ খাচ্ছেন বা ব্লাড থিনার ব্যবহার করেন কিংবা ডায়বেটিক হন, জলপাইয়ের পাতার নির্যাস চিকিত্সকের পরামর্শ ছাড়া একেবারেই খাবেন না। অন্যথ্যা আপনার তীব্র শ্বাষকষ্টজনিত সমস্যা হতে পারে। একইভাবে যাঁরা কেমোথেরাপি নিচ্ছেন তাঁরা এটি এড়িয়ে চলুন।
যে কোনও প্রাকৃতিক উপাদানের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। তাই চটজলদি সমস্যার সমাধানে এটা সেইভাবে কার্যকরী নয়। তবে ওজন কমানো থেকে শুরু করে সুস্বাস্থ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে এটা নি:সন্দেহে কার্যকরী।