ভোজনরসিক বাঙালির কাছে দই মানেই মিষ্টি দই। আর, সঙ্গে রসগোল্লা হলে তো কথাই নেই। মনের মণিকোঠায় যতই মিষ্টি দই থাকুক না কেন ইদানীং স্বাস্থ্যের কথা ভেবে অনেকে টক দইয়ের দিকেও ঝুকেছেন। এতদিন টক দই বিশেষ কোনও পদের রান্নায় বা রূপচর্চার ব্যবহারেই সীমিত ছিল। কিন্ত দেখা যাচ্ছে আজকাল অনেকেই তাঁদের নিত্যদিনের খাদ্যতালিকায় টক দই রাখতে ভুলছেন না। পেটের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে টক দই খাওয়া কত ভাল তা এতদিনে অনেকে জেনে গেছেন। কিন্তু শুধু কী পেট, শরীরে আরও অনেক সমস্যার সমাধান করতে জবাব নেই টক দইয়ের। জেনে নিন সেগুলো কী কী-
১. দাঁত ও হাড়ের শক্তি বাড়ায় টক দই
দই-এ প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম রয়েছে, ফলে দাঁত ও হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে এটি খুবই কার্যকরী। একইসঙ্গে প্রতিদিন দই খেলে আর্থারাইটিসের মতো সমস্যার হাত থেকে রেহাই মিলতে পারে।
২. টক দই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে
টক দই-এ প্রোবায়োটিক কার্যকারিতা আছে। এর ফলে বিভিন্ন সমস্যা ও সংক্রমণের হাত থেকে পেটকে বাচিয়ে রাখে টক দই। এই প্রোবায়োটিক উপাদান রক্তে শ্বেত কণা বাড়িয়ে তোলে। শরীরে কোনও সংক্রমণ হলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখে এই শ্বেত কণাগুলি। তবে সব দই-এ এই প্রোবায়োটিক উপাদান থাকে না। তাই বাজার থেকে টক দই কেনার সময় ফুড লেবেল দেখে নিন।
৩. ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ও চুলের স্বাস্থ্য ভাল করে টক দই
বেসন, পাতি লেবুর রস ও টক দই। ত্বক উজ্জ্বল করার এই ঘরোয়া উপায় বহুল প্রচলিত। প্রাকৃতিক ব্লিচের কাজে করে টক দই। ত্বকের পাশাপাশি চুলেরও জৌলুস বাড়ায় টক দই।
৪. হজমশক্তি বাড়াতে কার্যকরী টক দই
দই-এর প্রোবায়োটিক উপাদান আমাদের হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। দই, নিজেও সহজেই হজম হয় এমনকি ল্যাক্টোস ইন্টলারেন্স আছে যাঁদের, তাঁরাও দই খেতে পারেন। দুধ থেকে দই হওয়ার যে প্রক্রিয়া তাত দুধে থাকা ল্যাক্টটিক অ্যাসিড নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।
৫. হার্টের জন্য বেশ উপকারী টক দই
শরীরে কোলেস্টোরেলের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত রাখে টক দই। এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে বেশ কার্যকারী এটি।
৬. টক দই ওজম কমাতে সাহায্য করে
আমাদের শরীরে করটিসোল নামক হরমোনের তারতম্যের ফলে তলপেটে বেশি মেদ জমে। টক দই-এ থাকা ক্যালসিয়াম এই করটিসোল হরমোন তৈরির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এর ফলে ওজন কমে। একইসঙ্গে, দই খেলে পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে ফলে শরীরে ক্যালোরির মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৭. খুশকির উপশমে কাজে আসে টক দই
টক দই-এর অ্যান্টি ফাঙ্গাল কার্যকরিতা রয়েছে। তাই চুলে টক দই লাগালে খুশকির হাত থেকে রেহাই পাবেন পাশাপাশি চুল নরম হবে এবং চুলের জৌলুস বাড়বে।
৮. গোপনাঙ্গের স্বাস্থ্য ভাল রাখে টক দই
দই-এ বিশেষ ধরণের ব্যাক্টেরিয়া রয়েছে। এই ব্যাক্টেরিয়া ভ্যাজাইনাল পিএচ (pH) বজায় রেখে স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
৯. টক দই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে
টক দই-এ একপ্রকার প্রোটিন পাওয়া যায় যা সহজে পাচ্য। এই প্রোটিন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই ডায়বেটিকদের পক্ষে খুবই উপকারী টক দই।
১০. এনার্জি বুস্টার হিসেবেও কাজে আসে টক দই
ভিটামিন ও প্রাকৃতিক খনিজ উপাদানে পরিপূর্ণ টক দই শরীর চাঙ্গা রাখতে খুবই কার্যকরী। এছাড়া দই-এ প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সডিন্ট রয়েছে। তাই শরীরচর্চার পর টক দই খেলে উপকার পাবেন।