সেই কবেই দিদিমা-ঠাকুমাদের মুখে শোনা, রান্নাঘরে বাসন একসঙ্গে থাকলে ঠোকাঠুকি লাগবেই। মানে, একসঙ্গে থাকতে গেলে দু’জন মানুষের মধ্যে বা যে কোনও সম্পর্কেই সামান্য একটু মনোমালিন্য, কথা কাটাকাটি, ঝগড়া তো থাকবেই৷ কিন্তু এখন যুগ বদলেছে, বদলেছে পরিস্থিতি। দৈনন্দিন জীবনে থাবা বসিয়েছে করোনার মত অতিমারি। শারীরিক ভাবে তো বটেই, মানসিক ভাবেও আমাদের প্রভাবিত করেছে করোনো। বেড়েছে অসহিষ্ণুতা। ভাঙন ধরেছে সুখের সম্পর্কে। তাই বিশিষ্ট মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন ঝগড়া করতেই পারেন, কিন্তু তা করুন প্রোটোকল মেনে। লঘু পাপে গুরুদণ্ডের মতো সামান্য মনোমালিন্য কে সম্পর্ক ভাঙনের দিকে এগোতে দেবেন না।
সম্প্রতি তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এই নিয়ে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন অনুত্তমা। ভিডিও-য় ঝগড়া নিয়ে চারটি প্রোটোকল বা নিয়মাবলি প্রত্যেককেই মেনে চলার অনুরোধ করেছেন তিনি। সেগুলি কী কী জেনে নিন-
ঝগড়ার সময় একে অপরের দুর্বলতম জায়াগায় আঘাত করবেন না
প্রেমের সম্পর্ক, সহবাস, দাম্পত্য যে কোনও সম্পর্কে অল্পবিস্তর ঝগড়া হয়েই থাকে। দু’জন সম্পূর্ণ আলাদা ব্যক্তি, তাই যে কোনও বিষয়ে দু’জন দু’রকমের ধারণা, যুক্তি বা মত পোষণ করতেই পারেন। সেখান থেকে কখনও কথা কাটাকাটি, ঝগড়া হলে পুরনো কথা তুলে একে অপরকে আঘাত করবেন না। তিক্ততা আরও বাড়বে। হতেই পারে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে জীবনের নানা তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা, খারাপ লাগা ভাল লাগা একে অপরের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন আপনারা। কিন্তু ঝগড়ার সময়ে সেই কথা মনে করিয়ে সামনের মানুষকে আঘাত দেওয়া আদৌ বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ঝগড়ার সময়ে নিজের অবস্থানকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে এই কাজ হয়ত আপনাকে ক্ষণিকের শান্তি দেবে, কিন্তু মনে রাখবেন এই শান্তির থেকে স্বস্তি অনেক ভাল। রাগ পড়ে গেলে দেখবেন নিজেরও খারাপ লাগছে।
রেগে গেলেই বিচ্ছেদের কথা বলবেন না
ভালবাসা দিয়ে তিলে তিলে দুজনে মিলে যে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন, রাগ হলেই সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলবেন না। আপনি হয়ত রাগের মাথায় বলেছেন, মন থেকে বলেননি। কিন্তু সামনের মানুষ যদি আপনার এই রাগের কথাকেই সত্যি ধরে নেয় তা হলে সম্পর্কে আরও জটিলতার সৃষ্টি হবে।
তৃতীয় ব্যক্তিকে ঝগড়ার মাঝখানে আনবেন না
বন্ধুদের বা আত্মীয়স্বজনকে ঝগড়ার মীমাংসা করতে সম্পর্কের মাঝখানে আনবেন না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিরপেক্ষ মধ্যস্থতা হয় না। অন্যদিকে আপনাদের ঝগড়ায় তৃতীয় ব্যক্তির ভাবনাচিন্তার বা দৃষ্টিভঙ্গির বিরুপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে সামান্য একটি বিষয় অকারণে জটিল হয়ে যেতে পারে। প্রয়োজন হলে কোনও কাউন্সেলারের পরামর্শ নিতে পারেন।
পুরনো ঝগড়ার কথা টেনে আনবেন না
সম্পর্ক যত দীর্ঘমেয়াদি হবে, ওঠাপড়ার ঘটনাও থাকবে তত বেশি। সেক্ষেত্রে পুরনো কোনও ঝগড়া, যা আগেই মিটমাট হয়ে গেছে। সেই সময় একে অপরের ভুলও স্বীকার করে নিয়েছেন দুজনে, এমন প্রসঙ্গ পরবর্তী ক্ষেত্রে আর জোর করে টেনে আনবেন না।
সম্পর্কের টানাপোড়েন, সেখান থেকে ঝগড়া, এ রকম প্রাসঙ্গিক একটি বিষয় নিয়ে মনোবিদের এই সরল ব্যখ্যা ও ভালবাসার সম্পর্ক সুস্থ রাখার এই ভিডিও-র ভূয়সী প্রশংসা করেছেন নেটিজেনরা। উপচে পড়েছে তাঁদের পাল্টা প্রশংসার বার্তা।
ছবি সৌজন্য: Pixabay