আধুনিক জীবনের ইদুর দৌড়ে নাম লিখিয়েছেন আপনিও! তাই ঘুম নিয়ে বেশি মাথা ঘামানো আপনার পছন্দ নয়।ঘুম হলেই হল। কিন্তু বেশ কয়েকদিন ধরেই এই ঘুমই আপনাকে বেশ জব্দ করেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে আগের মতো সেই উত্ফুল্ল ভাব নিজের মধ্যে খুঁজে পাচ্ছেন না।এমনকি পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমোনোর পরেও ইদানীং দিনের বেলা বেশ ক্লান্ত লাগে। আবার মাঝে মধ্যেই কাজের ফাঁকে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছেন। যদি কোনও কারনে স্ট্রেস বা শারীরিক কোনও সমস্যা না থাকলে তা হলে সে ক্ষেত্রে এই সমস্যার একটা সহজ ব্যাখা হতে পারে, সেটা হল ঘুমের অভাব কিংবা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটা। বিশেষজ্ঞদের মতে আমরা অনেকেই ঘুমকে সেভাবে গুরুত্ব দিই না। কিন্তু একদিনের ঘুমের ঘাটতি ডেকে আনতে পারে বদহজম থেকে শুরু করে ব্লাড সুগার বেড়ে যাওয়া, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া এবং মাথা ব্যাথার মতো একাধিক সমস্যা।
আর এই ঘুমের অনিয়ম যদি দীর্ঘদিন চলতে থাকে তাহলে প্রভাবিত হয় গাট হেলথ (gut health), বেড়ে যায় হার্টের সমস্যা(heart ailments), সঙ্গে বিষাদ(depression), টাইপ টু ডায়বিটিস(type-2 diabetes) ও আলঝাইমারের(alzheimer) মতো অসুখের সম্ভাবনাও বেড়ে যায় কয়েকগুন।
আধুনিক জীবনযাপনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটার এই পাঁচটি কারন বার বার উঠে এসেছে। দেখে নিন আপনার ক্ষেত্রেও কি এমনটা হচ্ছে?
রাতের খাবার আর ঘুমোনোর মধ্যে অল্প সময়ের ব্যবধান
(ছবি সৌজন্য: Unsplash)
বেশ কয়েকটি গবেষণায় জানা গেছে রাতে দেরিতে খেলে হজমপ্রক্রিয়ার গতি স্লথ হয়ে যায়। এর ফলে প্রভাবিত হয় ঘুম, বাড়ে অ্যাসিডিটির(accidity) সমস্যা সঙ্গে ওজনও(gain weight)। তাই রাতে ঘুমোতে যাওয়ার অন্তত ৩ থেকে ৪ ঘন্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নিন। হালকা খান, তবে সমান পরিমানে ফ্যাট, ফাইবার ও প্রোটিনযুক্ত সুষম খাবার খান।
ঘুমোতে যাওয়ার আগে গ্যাজেটের ব্যবহার (use of gadgets before sleeping)
ঘুমোতে যাওয়ার আগে আজকাল মুঠোফোনে অধিকাংশ মানুষই মুখ গোজেন। এর থেকে যে নীল আলো বেরোয় সেটা মেলাটোনিন(melatonin) নামক হরমোনের(hormone) কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। ফলে দেরি হয় ঘুম আসতে। ব্লু লাইট(blue light) কিংবা ন্যাচারাল লাইট(natural light) দু’টি-ই আমাদের ঘুমোনো ও জেগে ওঠার চক্র, সার্কেডিয়ান রিদমকে(circadian rhythm) প্রভাবিত করে। তাই, ঘুমোতে যাওয়ার অন্তত এক ঘন্টা আগে ফোন, ট্যাবলেট ল্যাপটপ বা টিভি না দেখাই ভাল। তবে, একান্ত প্রয়োজন হলে ব্লকিং গ্লাস (blocking glass)ব্যবহার করতে পারেন।
স্লিপ হাইজিনের অভাব (lack of Sleep hygiene)
(ছবি সৌজন্য: Pinterest)
স্লিপ হাইজিন(sleep hygiene) অর্থাৎ শোওয়ার ঘরের এমন পরিবেশ যা ঘুম আসতে সাহায্য করে এবং ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায় না। এক্ষেত্রে ঘুমোনোর সময়ে আপনার শোওয়ার ঘর আরামদায়ক(comfortable) ও অন্ধকার(dark) রাখলে ভাল। অন্ধকারে মেলাটোনিন(melatonin) নামক হরমোনের নিঃসরণ(hormone secretion) ভাল হয় এর ফলে গাঢ় হয় ঘুম(induce deep sleep)। প্রত্যেকদিন একই সময়ে ঘুমোতে যান। এর ফলে ঘুম আসতে সুবিধে হবে।
রাতে শরীরচর্চা(intense workouts at night )
(ছবি সৌজন্য: Unsplash)
দিনে সময়ের অভাব তাই রাতে অফিস থেকে ফিরে ইনটেন্স ওয়ার্কআউট করতে পছন্দ করেন। কিন্তু জানেন কি আপনার এই সব অভ্যেস শরীর ভাল রাখার বদলে সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। শরীরচর্চার ফলে অ্যাড্রেনেলিন রাশ(adrenaline rush) হয় (শরীরে অ্যাড্রনেলিন হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যাওয়া) এর ফলে শরীর ঠান্ডা হতে সময় নেয়। এই কারনে অনেকের ঘুম আসতে দেরি হয়। আপনার ঘুমের সমস্যা থাকলে, ইনটেন্স ওয়ার্কআউটের বদলে রাতের খাওয়া সেরে হাঁটতে পারেন। কিংবা ইনটেন্স ওয়ার্কআউটের বদলে যোগাসন করতে পারেন।
রাতে মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান (alcohol consumption)
(ছবি সৌজন্য: Unsplash)
অল্প মাত্রায় মদ্যপানের একটা সেডেটিভ এফেক্ট(sedative effect) আছে কিন্তু মদ্যপান মাত্রাতিরিক্ত হলে শরীরের ওপর এর ঠিক উল্টো প্রভাব পড়ে। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, গাঢ় ঘুমের সময় কমে যায়। এদিকে ঘুমোতে যাওয়ার অল্প সময় আগে মদ্যপান করলে স্লিপ অ্যাপনিয়ার(sleep apnea) সমস্যা মাথাচাড়া দেয়। এই স্লিপ অ্যাপনিয়ার(sleep apnea) ফলে জোড়ে জোড়ে নাক ডাকা বা নিশ্বাসে সমস্যার সৃষ্টি হয়।
এই পাঁচ কারন ছাড়াও দিনের বেলা আপনি কীভাবে সময় কাটাচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করছে রাতের ঘুম। অ্যাক্টিভ লাইফস্টাইল(active lifestyle) হলে ঘুম আসবে সহজে এদিকে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার অভ্যেস থাকলে বা তুলনামূলক কম পরিশ্রম করলে সমস্যা হবে ঘুম আসতে।
চেষ্টা করুন যাতে বায়োলজিকাল ক্লক(biological clock) মেনে চলতে পারেন।
(ছবি সৌজন্য: Unsplash)
যাদের ইনসোমনিয়া(insomnia) বা স্লিপ অ্যাপনিয়া(sleep apnea) আছে তাদের বেলা তিনটের পর ক্যাফেন(caffeine) এড়িয়ে যাওয়া ভাল। বরং স্লিপ ডিসর্ডারে(sleep disorde) ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল(lavender essential oil), ক্যামোমাইল টি(chamomile tea), ম্যাগনেশিয়াম(magnesium) বা মেলাটোনিন(melatonin) সাপ্লিমেন্ট(supplement) কাজে লাগাতে পারেন। তবে এই সব সমস্যার ক্ষেত্রে প্রাথমিক কাজ হল চিকিত্সকের পরামর্শ মতো কাজ করা ।
(ছবি সৌজন্য: Unsplash)