একদিকে যেমন ত্বক ও চুলের পক্ষে ক্ষতিকারক সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি তেমনই আবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো সহ একাধিক কারণে ভীষণ প্রয়োজন ভিটামিন ডি(Vitamin D)। আর এই ভিটামিন ডি(Vitamin D)-র সব থেকে ভাল উত্স হল সূর্যের আলো। এদিকে নিয়মিত রোদ পোহানোর শুধু ভিটামিন ডি(Vitamin D) বাড়াতেই নয় বরং আরও অনেক ভাল দিক রয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্যের(mental health) জন্যেও সূর্যের আলো ভীষণ প্রয়োজন। এদিকে আবার সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি দীর্ঘক্ষণ শরীরে পড়লে সানট্যান এমনকি স্কিন ক্যানসারের সম্ভাবনাও রয়েছে। তাই শরীরে রোদ লাগাবেন কি লাগাবেন না ইদানীং এই নিয়ে একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।
আপনার শরীরে কতটা সূর্যের আলো প্রয়োজন তা নির্ভর করছে আপনার ত্বকের ধরণ, বয়স, স্বাস্থ্য, আগের কোনও শরীরিক সমস্যা থাকলে তার ওপর, আপনার নিত্য দিনের খাদ্যতালিকা আর অবশ্যই আপনি কোথায় থাকেন এই বিষয়গুলিও গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত পাঁচ থেকে পনেরো মিনিট পর্যন্ত সূর্যের আলো শরীরে পড়া ভাল। তবে এটাও ঠিক রোদে বেরোনোর আগে সঠিক পরিমাণে সানস্ক্রিন ও সঙ্গে সানগ্লাস রাখতে ভুলবেন না।
ভিটামিন ডি-র পাশপাশি নিয়মিত সূর্যের আলো আমাদের শরীরে এই কারণেও প্রয়োজন-
সকালে কিছুক্ষণ সূর্যের আলোয় থাকলে আমাদের শরীরের সার্কাডিয়ান রিদম ঠিক থাকে। ন্যাচারাল লাইট আমাদের শরীরে একটা ইন্টারনাল ক্লেকের সিস্টেম তৈরি করে। সূর্যের আলো যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠতে সাহায্য করে, তেমন এই ইন্টারনাল ক্লকের আমাজের রাতে সময়মতো ঘুমোতে সাহায্য করে কারন অন্ধকারে মেলাটোনিনের নিঃসরণ হয়।
সকালে কিছুক্ষণ রোদ পোয়ালে বডি মাস ইন্ডেক্স কম হয় বলে ২০১৪ সালে একটি গবেষণায় উঠে আসে। এই বডি মাস ইন্ডেক্স আমাদের উচ্চতা ও ওজনের ওপর নির্ভর করে। তাই বডি মাস ইন্ডেক্স যদি কম হয় তাহলে বুঝতে হবে ওজন কমেছে। সকালে ওঠে রোদ পোয়াতে গিয়ে হাটা বা সূর্যের আলোতে ওয়ার্কআউট করলে এক সঙ্গে দুটো কাজই হবে। শরীরে পর্যাপ্ত আলো ঢুকবে আবার ওজনও কমবে।
শীতকালে অনেকের ডিপ্রেশন হয় বিশেষ করে শীতপ্রধান দেশে অনেকের মধ্যে সিজন্যাল অ্যাফেক্টিভ ডিসর্ডার দেখা যায়। শরীরে সূর্যের আলো পড়লে সেরোটোনিন নামক একটি হরমোন নিঃসরণ হয়। এই হরমোন মুড ভাল করে, একাগ্রতা বাড়ায়। মনে স্ফূর্তির আনে।
বেড়ে ওঠার সময়, বিশেষ করে বাচ্চারা এমনকি যুবারাও, যদি পর্যাপ্ত পরিমানে সূর্যের আলো পায় তাহলে পরবর্তীকালে চোখের সমস্যার সৃষ্টি হয়না। ২০১৬ মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় জানা যায়, কাছের জিনিস দেখতে অসুবিধা হওয়ার মতো সমস্যায় সূর্যের আলো ভীষণ কার্যকরী।
যদিও দীর্ঘ সময় ধরে রোদে থাকলে তাও আবার সানস্ক্রিন ছাড়া তা ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক। হতে পারে স্কিন ক্যানসারের মতো সমস্যা। তবে সঠিক মাত্রায় সূর্যের আলো শরীরে গেলে তা আবার অন্য কয়েক ধরনের ক্যানসারের ক্ষেত্রে উপকারী। একটি গবেষণায় দেখা গেছে গ্রীষ্মপ্রধান দেশগুলির মানুষের মধ্যে কোলোন ক্যানসার, হজকিন লিম্ফোমা, ওভ্যারিয়ান ক্যানসার, প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসার ও প্রস্ট্রেট ক্যানসারের প্রবণতা কম থাকে।
অতিরিক্ত সান এক্সপোজারের কারনে তিন রকমের স্কিন ক্যানসার যেমন মেলানোমা, বেসাল সেল সারসিনোমা বা স্কোয়ামস সেল সারসিনোমার মতো সমস্যা হতে পারে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী যাদের সোরিয়াসিস, এগজিমা, জন্ডিস, ভিটিলিগো এমনকি ব্রণর সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমানে সান এক্সপোজার ভীষণ উপকারী।
(ছবি সৌ: Unsplash)