ব্যস্ত জীবনে, ঘড়ির কাটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছুটে চলেছেন সবাই। দোসর হয়েছে অনিয়মিত ঘুমের অভ্যেস। রয়েছে অনিয়মিত খাওয়া দাওয়া সহ অন্যান্য কারন। আর এই সব মিলিয়ে আধুনিক জীবনে বাড়ছে স্ট্রেস।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণে, এই স্ট্রেস হল কোনও আপতকালিন পরিস্থিতিতে শরীরের প্রতিক্রিয়া। কোনও খারাপ পরিস্থিতির মোকাবিলা করা কিংবা দ্রুত এই পরিস্থিতি থেকে বেড়িয়ে যাওয়া হল শরীরের স্ট্রেস রেসপন্স(stress response) । এই প্রতিক্রিয়া শরীরকে যে কোনও বিপদে রক্ষা করে। তবে এই পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদি হলে বেড়ে যায় স্ট্রেস লেভেল। এই হাই স্ট্র্স লেভেল পরবর্তী সময়ে বিপণ্ন করে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য।
একটানা এই হাই স্ট্রেস লেভেল কোন কোন শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করে জেনে নিন-
নিশ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা (respiratory)
কোনও বিষয়ে স্ট্রেস হলে আমরা জোরে জোরে নিশ্বাস নিই। যাতে রক্তে থাকা অক্সিজেন শরীরের ভাল ভাবে সরবরাহ হয়। এটা হল শরীরের এক ধরনের স্ট্রেস রেসপন্স। এর ফলে অনেকেই স্ট্রেসের শিকার হলে নিশ্বাসে সমস্যার কথা বলেন। কিংবা বুকে চাপ অনুভব করেন। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় যারা ভোগেন তাদের সমস্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়। আবার অনেকে স্ট্রেসের কারনে অসুস্থ হয়ে শরীরে বড় কোনও সমস্যার কথা ভেবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
হার্ট সংক্রান্ত সমস্যা (cardiovascular)
স্ট্রেস বা উদ্বেগ বাড়লে হার্ট বেশি পরিমানে শরীরে রক্ত সরবরাহ করা শুরু করে। তখন রক্ত নালীগুলো সঙ্কুচিত হয়ে মাংশপেশিতে বাড়তি রক্তের জোগান দেওয়ার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এহেন স্ট্রেস রেসপন্সের ফলে উচ্চ রক্তচাপের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন এই ভাবে হাই স্ট্রেস লেভেল(high stress level) বা ঘন ঘন উদ্বেগের সৃষ্টি হলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা(high blood pressure), স্ট্রোক(stroke) ও হার্ট অ্যাটাক(heart attack) হতে পারে।
হজম সংক্রান্ত সমস্যা (digestive)
স্ট্রেসের কারনে অ্যাসিড রিফ্লাক্স, আলসার, পেট ব্যাথা বা পেটে খামচে ধরা, ফেট ফোলা, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, বমি ভাব কিংবা বমির সম্ভাবনা দেখা যায়।
মাংশপেশির সমস্যা (muscular health)
স্ট্রেস রেসপন্সে (stress response) মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায় এবং পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলে সেগুলো আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। তবে দীর্ঘ সময় ধরে এই স্ট্রেস পরিস্থিতি থাকলে মাংসপেশি পূর্ব অবস্থায় ফিরতে পারে না। ফলে মাথাব্যাথা, পীঠ ও বুকে ব্যাথা, কাঁধে ব্যাথা, গোটা গায়ে ব্যাথা ভাব সৃষ্টি হয় এবং শরীর ভীষণভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এই ব্যাথা থেকেই নিত্যদিনের কাজ কিংবা শরীরচর্চায় বাঁধা সৃ্ষ্টি হয়। তখন চিকিত্সকের পরামর্শ একান্ত প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে।
প্রভাবিত হয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (immunity)
ক্রনিক স্ট্রেস শরীরের সংক্রমণ মোকাবিলার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এর ফলে যে কোনও সংক্রমণ বিশেষ করে ভাইরাস সংক্রমণ সহজেই শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। দ্রুত সেরে ওঠার পথেও বাঁধা হয়ে দাড়ায়।
ডায়বিটিস (diabetes)
স্ট্রেসের কারনে রক্তে শর্করার মাত্রা(glucose level) বৃদ্ধি পায় যা পরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়। কিন্তু ক্রনিক স্ট্রেসের ক্ষেত্রে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয় শরীর। বেড়ে যায় টাইপ টু ডায়বিটিসের প্রবণতা।
দাঁতের সমস্যা (dental problems)
অতিরিক্ত উদ্বেগে অনেকেই ব্রুক্সিজম(bruxism) বা দাঁত কিড়মিড় করেন। এটা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে দাঁতের স্বাস্থ্য ক্ষয় হয়।
যৌনতা ও পুরুষ প্রজনন স্বাস্থ্য (sexuality and male reproductive health)
ক্রনিক স্ট্রেস (chronic stress) টেস্টোসটোরেনের (testosterone) মাত্রা কমিয়ে দেয় এর ফলে স্পার্ম প্রোডাকশন (sperm production), ইরেকটাইল ডিসফাংশন(erectile dysfuntion) বা পুরুষ বন্ধ্যত্বের(impotence) সমস্যার সৃষ্টি হয়। এছাড়া যৌনসম্পর্কে(sexual relationship) অনীহা কিংবা রিপ্রোডাক্টিভ অঙ্গে সংক্রমণের সমস্যার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
যৌনতা ও নারী প্রজনন স্বাস্থ্য (sexuality and female reproductive health)
পুরুষদের মত অত্যাধিক স্ট্রেস মহিলাদের মধ্যেও যৌনসম্পর্কে অনীহা সৃষ্টি করে। প্রভাবিত হয় মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল, মেনস্ট্রুয়াল রেগুল্যারিটি ও ফ্লো। বেড়ে যায় মেনস্ট্রুয়্যাল পেন ও ক্র্যাম্প। এই কারণগুলির জন্য গর্ভধারণেও সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।