ভার্চুয়্যাল ওয়ার্ল্ডের দৌলতে ইদানীং রূপচর্চায় মন দিচ্ছেন পুরুষরাও। মহিলাদের পাশাপাশি পুরুষদের কাছেও এখন সমান কাঙ্ক্ষিত সুন্দর ও সতেজ ত্বক। তবে চাহিদা এক থাকলেও পরিচর্যায় রয়েছে বিস্তর ফারাক। হরমোনের তারতম্যে পুরুষ ও নারীর শারীরিক গঠন তো বটেই, ত্বক ও চুলের ক্ষেত্রেও বিস্তর ফারাক রয়েছে। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ত্বক নরম ও কোমল হয়। তাই ত্বক পরিচর্যার মূল বিষয়টা এক থাকলেও পুরুষদের ত্বক পরিচর্যার ক্ষেত্রে প্রয়োজন বাড়তি কিছু পদক্ষেপ।
কীভাবে বুঝবেন ত্বকের ধরন?
রূপচর্চার প্রথম পদক্ষেপ নিজের ত্বকের ধরন নির্ণয় করা। তারপরেই পরিচর্যা। দেখে নিন ত্বকের এই ধরনগুলির কোনটা আপনার ত্বকের সঙ্গে মেলে।
সেনসিটিভ স্কিন- কোনও নতুন প্রোডাক্ট ব্যবহার করলেই আপনার ত্বকে জ্বালা বা হুল ফোটানোর মত যন্ত্রণা হয়।
নর্মাল স্কিন- ত্বক পরিষ্কার ও সেনসিটিভ স্কিনের মতো সমস্যা নেই।
শুষ্ক ত্বক- যদি আপনার ত্বক রুক্ষ, চামড়া ওঠা ও ফাটা হয়।
তৈলাক্ত ত্বক- সারক্ষণ ত্বকে তেল-তেলে বা চ্যাটচেটে ভাব থাকে।
মিশ্র ত্বক- ত্বকের কিছু জায়গায় শুষ্ক বা ফাটা ভাব। আবার অন্য জায়গায় তেলতেলে ভাব থাকবে।
ত্বকের ধরন নির্ধারিত করা গেলে তবেই সঠিক পরিচর্যা ও আশানুরূপ ফলে পাওয়া যাবে। পাশাপাশি রূপচর্চার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলি মেনে চলুন।
প্রোডাক্ট লেবেল ও উপকরণগুলি দেখে নিন
ত্বকের ধরন মাথায় রেখে প্রোডাক্ট কিনুন। আপনার ত্বকে ব্রণ বা অ্যাকনের সমস্যা থাকলে অয়েল ফ্রি লেখা ক্লেনজার ও ময়শ্চারাইজর ব্যবহার করুন। সেনসিটিভ ত্বক হলে মাইল্ড বা ফ্রেগন্যান্স ফ্রি প্রোডাক্ট বেছে নিন। কারন ফ্রেগন্যান্স যুক্ত প্রোডাক্টগুলিতে বিশেষ কিছু রসায়নের ফলে আপনার ত্বকে জ্বালা বা চুলকানি হতে পারে। এর ফলে বাড়তে পারে ত্বকের শুষ্ক হওয়ার সম্ভাবনাও।
জিম বা ব্যায়ামের পর ভাল করে মুখ ধুয়ে নিন
শারীরিক কসরতের পর খুব ঘাম হয়। ঘামের মাধ্যমে শরীরের বর্জ্য পদার্থ বাইরে বেরিয়ে যায়। এই টক্সিন বা বর্জ্য পদার্থ রোমকূপে জমলে ত্বকে ব্রণ বা অ্যাকনের সৃষ্টি হয়। তাই শারীরিক কসরতের পর অবশ্যই মুখ ভাল করে ধুয়ে নিন। তবে সাবান নয়। সাবানের ক্ষতিকারক কেমিক্যালস আপনার ত্বকের ক্ষতি করবে। পরিবর্তে ব্যবহার করুন যে কোনও মাইল্ড ফেস ক্লেনজার এবং ঈষদুষ্ণ গরম জল। খেয়াল রাখবেন জল যেন বেশি গরম না হয়। এতে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
দাড়ি কামানোর সঠিক পদ্ধতি জেনে নিন
কিছু পুরুষের ক্ষেত্রে মাল্টি ব্লেড রেজার ভাল কাজ করে। খুব সহজেই মসৃণ ও ভাল দাড়ি কাটা হয়। তবে শেভিংয়ের পর গোটা বা জ্বালার সমস্যা থাকলে, ত্বক ছড়ে গেলে মাল্টি ব্লেডের বদলে সিঙ্গল বা ডাবল ব্লেড রেজার ব্যবহার করতে পারেন। একইসঙ্গে মাথায় রাখবেন, মুখের ত্বক অহেতুক চাপ দিয়ে টানটান করতে যাবেন না। দাড়ি কামানোর আগে গাল ভিজিয়ে নিলে ভাল দাড়ি কাটা হবে। ময়শচারাইজার যুক্ত শেভিং ক্রিম বা জেল ব্যবহার করুন। এবং আপনার দাড়ি যেদিকে বাড়ে সেইদিকে রেজার চালান। প্রত্যকবার রেজার চালিয়ে ধুয়ে নিন। এতে দাড়ি কামাতে আপনার সুবিধে হবে এবং দাড়ি কামানো মসৃণ হবে। প্রত্যেক ৫ থেকে ৭ বার দাড়ি কামানোর পর ব্লেড বদলে নিন।
ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন
ময়শচারাইজারের ত্বক সতেজ ও উজ্জ্বল রাখে। তাই স্নান ও শেভিংয়ের পর নিয়মিত ময়শ্চারাইজার লাগান।
ত্বকের দিকে নজর দিন
গায়ে নতুন কোনও দাগ, গোটা বা তিল গজালে সেদিকে নজর দিন। বিশেষ করে যদি এই জায়গায় হাল্কা জ্বালা বা চুলকানি অনুভব করেন তা হলে চিকিৎকের পরামর্শ নিন। বিশেষ করে পঞ্চাশোর্ধ্ব পুরুষের ক্ষেত্রে মেলানোমা নামক বিশেষ কর্কট রোগের সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। তাই সতর্ক থাকুন। তবে এই রোগ প্রথম ধাপে ধরা পড়লে সহজেই নিরাময় হয়।
বাড়ির বাইরে গেলে সানস্ক্রিন লাগান
ত্বক ভাল রাখতে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে ত্বক সুরক্ষিত রাখুন। বাড়ির বাইরে বেরোলে সানস্ক্রিন লাগান। প্রয়োজনে মাথার ত্বক, কান, গলায় সানস্ক্রিন লাগান। এবং ঠোঁটে এসপিএফ যুক্ত লিপ বাম ব্যবহার করুন। ভাল ফল পেতে ব্রড স্পেকট্রাম, ওয়াটার রেজিসট্যান্ট সানস্ক্রিন বেছে নিন। এতে ৩০ বা বেশি এসপিএফ (SPF) থাকলে ভাল হয়। সাঁতার কাটার পর বা বেশি ঘাম হলে দু’ঘন্টা অন্তর সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিন। এ ছাড়া ফুলহাতা জামা, টুপি, ছাতা এবং সানগ্লাস ব্যবহার করুন।