ওয়েব ডেস্ক: পিরিয়ড (Period) বা ঋতুকাল ঘিরে মেয়েরা যুগে যুগে নানা রকম নিয়ম-কানুন, সংস্কার আর পরামর্শ শুনে এসেছে। কখন কী করা উচিত, কী করা একেবারেই নয়—এইসব কথা কখনও দিদিমা-ঠাকুমার মুখে, কখনও বা বন্ধুর পরামর্শে বা আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় ঘুরে ফিরে আসে। ডিজিটাল যুগে যখন তখন ফোনের স্ক্রিনেই ভেসে ওঠে এমন সব তথাকথিত পরামর্শ, যা বিভ্রান্ত করে অনেককেই।
সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে—পিরিয়ডের প্রথম তিন দিন স্নান করা উচিত নয়। ভিডিওর বক্তব্য, স্নান করলে নাকি শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়, রক্তসঞ্চালনে ব্যাঘাত ঘটে, ক্লান্তি ও অন্য স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। ‘সঠিক রীতি মেনে’ নাকি চতুর্থ দিন থেকে স্নান করা উচিত। এই দাবি ঘিরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। কারণ, চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মতে এই কথা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং বিজ্ঞানবিরোধী।
আরও পড়ুন:
চিকিৎসকরা বলছেন, ঋতুকালীন সময়ে স্নান করলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ে বিশেষ কোনও সমস্যা হয় না। উষ্ণ বা ঠান্ডা জলে স্নান করলে শরীরের তাপমাত্রা অল্প কিছুক্ষণের জন্য একটু হেরফের করতেই পারে, তবে আমাদের শরীরের নিজস্ব তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এতটাই দক্ষ যে তা নিজেই সব সামাল দিতে পারে। বরং, অনেকে বলেন গরম জলে স্নান করলে পেটের ব্যথা কমে ও পেশি শিথিল হয়, যা আরামদায়ক।
এই ধারণার কোনও ভিত্তি আয়ুর্বেদের গ্রন্থেও নেই। বরং, এই ধরনের ধারণা আসলে সমাজে প্রচলিত কিছু কুসংস্কার, যা জন্ম নিয়েছে সেই সময়, যখন পরিষ্কার জলের অভাব ছিল, কিংবা স্যানিটারি প্রডাক্টের সহজলভ্যতা ছিল না। আজকের দিনে তা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণহীন।
ডাঃ আকাঙ্ক্ষা ত্রিপাঠি (সিনিয়র গাইনোকলজিস্ট, প্যারাস হাসপাতাল, উদয়পুর) জানাচ্ছেন, ‘‘ঋতুকালীন সময়ে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত স্নান না করলে ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে। অনেকের ক্ষেত্রে গরম জলে স্নান করলে স্বস্তিও মেলে।’’
রক্তপ্রবাহ কি থেমে যেতে পারে স্নানের ফলে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একেবারেই না। রক্তপাত শরীরের হরমোন পরিবর্তন ও ইউটেরাসের পেশির উপর নির্ভর করে। স্নান বা বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গে তার সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই। বরং গরম জলে স্নান করলে ইউটেরাসের পেশি শিথিল হয় এবং রক্তপাত সহজ হয়।
ডাঃ মুসকান ঠাকুর (আয়ুর্বেদ কনসাল্টেন্ট, ইন্দোর) বলছেন, ‘‘আয়ুর্বেদে কোথাও বলা নেই যে পিরিয়ডের সময় স্নান করা নিষেধ। হালকা গরম জলে স্নান বরং আরাম দেয়, ক্লান্তি কমায়।’’ সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়ানো সব তথ্যকে অন্ধভাবে বিশ্বাস না করে, আগে যাচাই করুন। কুসংস্কার নয়—স্বাস্থ্য নিয়ে সিদ্ধান্ত নিন বিজ্ঞানের ভিত্তিতে।
দেখুন আরও খবর: