কলকাতা : রাত থেকে তুমুল বৃষ্টি। সকালে সূর্যের আলো নেই। মেঘলা আকাশ। অন্ধকার হয়ে রয়েছে। ১০ নম্বর আহিরিটোলার পুরনো বাড়ির দোতলা হুড়মুড় করে নীচে নেমে এল। এমনিতেই নড়বড়ে ছিল, সারারাতের বৃষ্টিতে আচমকাই দুর্ঘটনা।
সরু গলি, তার মধ্যে উদ্ধারকাজ করতে গিয়ে নাজেহাল হতে হল দমকলকর্মীদের। এ পাড়ার বাড়ি গুলোর বেশির ভাগেরই জরাজীর্ণ দশা। ইট বের করা। ১০ নম্বর বাড়িতে অনেক শরিকের বাস। ইটপাথর বিম সরিয়ে হিমশিম খেতে হল দমকলকর্মীদের। হাতে হাতে একটা একটা করে ইট সরিয়ে ধ্বংসস্তূপ সরানোর চেষ্টা। তার মধ্যে টানা বৃষ্টি। আড়াআড়ি ভাবে পড়ে রয়েছে তিন চারটে বিম। তার নীচে চাপা পড়ে রয়েছেন এক বৃদ্ধা এবং এক তিন বছরের শিশু। ড্রিল মেশিন চালিয়ে তাদের উদ্ধারের আপ্রাণ চেষ্টা। এক সময় উদ্ধারে নামল এনডিআরএফ কর্মীরা। কিন্তু না শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি। উদ্ধার করা হয় এক সন্তানসম্ভবাকে। সম্পর্কে মৃত শিশুটির তিনি মা।
তা হলে এই মৃত্যুর দায় কার বা কাদের? বাড়ি মালিক এবং ভাড়াটেদের টানাপড়েনে কলকাতার এ রকম একাধিক বিপজ্জনক বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। আহিরিটোলার এই এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ‘পুরসভাকে বারবার জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি। বাড়ির কোনও মেরামতি হয় না। কোনও সংস্কারও নেই। কিছুদিন আগে পয়প্রণালী ব্যবস্থা একেবারে বেহাল হয়ে পড়ে, সে সময়ও পুরসভাকে জানিয়ে কোনও ফল হয়নি।’ পুরসভা বহু বাড়ির সামনে যদিও বিপজ্জনক বাড়ির সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছে।
কলকাতা পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, ‘বাড়ির মালিক এবং ভাড়াটিয়াদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ বা সংস্কার নিয়ে দু’পক্ষের সদিচ্ছা না থাকলে বিপদ এড়ানো অসম্ভব। পুরসভা চাইলেই এই সব বাড়ি ভেঙে দিতে পারে না।’ এ নিয়ে আদালতের হস্তক্ষেপেরও দাবি করেছেন ফিরহাদ হাকিম। এলাকার বাকি বিপজ্জনক বাড়ির বাসিন্দাদেরও সাবধান করে দিয়েছে পুরসভা।