বসিরহাট: ‘ভোট এলেই ভয় লাগে’। পাঁচ বছর আগের বোমা বিস্ফোরণে হাত উড়ে যাওয়ার সেই স্মৃতি যেন এখনো দগদগে পৌলমীর (Poulomi) চোখে। তারিখটা ছিল ২০১৮ সালের ২০ এপ্রিল। প্রতিদিনের মতো সেদিন সকালেও বাড়ির সামনের ফুল গাছ থেকে ফুল তুলতে গিয়েছিল হাড়োয়ার একরত্তি পৌলমী। কিন্তু সেই গাছের নীচেই পড়েছিল একটি বোমা। সেই বোমাকে বল ভেবে হাতে তুলে নেয় সে। নতুন বল পেয়েছে সেই আনন্দে সেটা দাদুকে দেখানোর জন্য দৌড়ে যায় নিজের বাড়ির দিকে। তার দাদু দেখতে পায় নাতনির হাতে রয়েছে আস্ত তাজা বোমা। তৎক্ষণাৎ তিনি তার নাতনীকে বোমাটিকে ফেলে দিতে বলেন। বোমা ফেলতেই ঘটে বিস্ফোরণ।
বাঁ হাত উড়ে যায় বছর আটের পৌলমী হালদারের। বসিরহাটের হাড়োয়া থানার গোপালপুর ১নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা শম্ভু হালদার ও দিপালী হালদারের ছোট মেয়ে পৌলমী হালদার। আজ থেকে পাঁচ বছর আগে ঠিক পঞ্চায়েত ভোটের আগেই বল ভেবে খেলতে গিয়ে বোমা বিস্ফোরণে হাত উড়ে যায় তার। যা নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য। সেই বিভীষিকা যেন এখনো চোখে মুখে লেগে রয়েছে পৌলমীর। যখন ঘটনা ঘটেছিল তখন সে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। এখন সে পড়ে ক্লাস এইটে। অনেক গুলি দিন কেটে গিয়েছে, কেটে গিয়েছে বহু বছরও। তবে সেই ভয়াবহ স্মৃতি যেন এখনও তার চোখে মুখে ভেসে বেড়ায়।
আরও পড়ুন: Panchayat Election 2023 | ভোটকর্মীদের নিরাপত্তার দাবি শিক্ষক সমিতির
ঘটনার পর স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সহযোগিতায় ও ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাসের উদ্যোগে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা ব্যাায়ে একটি কৃত্রিম হাতের ব্যবস্থা করা হয় পৌলমীর জন্য। কলকাতার এক বেসরকারী হাসপাতাল থেকে পাওয়া সেই কৃত্রিম হাত পরেই শিশু বয়স কাটিয়েছে সে। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে তার চেহারারও পরিবর্তন হচ্ছে। যার ফলে সেই কৃত্রিম হাত তার বাম হাতে আর ঢোকে না। যার ফলে সেই হাত সে ব্যবহার করতেও পারেনা। এখনও সেই দিনের কথা মনে পড়লে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে সে।
পৌলমী বলে, ভোটের নাম শুনলেই যেন আমার ভয় ভয় লাগে। চারদিকে যখন বোমার খবর শুনি তখন আরও ভয় পেয়ে যাই। তার সঙ্গে যা হয়েছে এরকম যেন কোন বাচ্চার সাথে আর না হয়। নয়তো সে মানসিক ও শারীরিক দুই ভাবেই ভেঙে পড়বে। মুরগি পালন করে এই পরিবারটি তাদের সংসার চালায়।
পৌলমীর মা দিপালী হালদার বলেন, যদিও দুর্ঘটনার দিনগুলিতে তৃণমূলের নেতারা যথেষ্ট সাহায্য করেছিলেন। এমনকি পৌলমীর জন্য কৃত্রিম হাতেরও ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তৃণমুলের দলীয় নেতা-কর্মীরা। পাশাপাশি আশ্বাসও দিয়েছিলেন যে আগামী দিনে পরিবারের পাশে থাকবে।
কিন্তু পৌলমীর মা অভিযোগ করেন, তাকে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তা আর রূপায়িত হয়নি।
তৃণমূলের বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার আইএনটিটিউসির সভাপতি কৌশিক দত্ত বলেন, মাঝখানে বেশ কয়েক বছর কোভিডের জন্য একটু সমস্যার জেরে আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, আমরা রাখতে পারিনি। পঞ্চায়েত ভোট মিটে গেলে, আমি খুব গুরুত্বের সঙ্গে শীর্ষ নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করব। পৌলমীর পরিবারের পাশে থাকার সমস্ত রকম চেষ্টা করব।
এদিকে বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলা যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুন্ডু বলেন, তৃণমূল শুধু প্রতিশ্রুতিই দিতে পারে। কারণ, প্রতিশ্রুতি দিতে কোন ট্যাক্স লাগে না। তারা প্রতিশ্রুতির পর প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান, কিন্তু বাস্তবে কিছু করে দেখান না তারা।