কলকাতা: কী ভাবে দুর্ঘটনার কবলে পড়ল ৩টি ট্রেন তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে ট্রেনের কামরা, ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে যাত্রীদের দেহাংশ। উপড়ে গিয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। সাদা কাপড়ে ঢাকা মৃতদেহ। তার মধ্যেই ভেসে আসছে কান্নার আওয়াজ, আর্তনাদ। আর সব কিছু ছাপিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সের সাইরেনের শব্দ। ছবিটা এককথায় এই রকমই। তার মধ্যে সকাল থেকে দুর্ঘটনাস্থলে হেভিওয়েটদের যাতাযাত। এখনও পর্যন্ত যা খবর, মৃতের সংখ্যা সরকারি মতে ২৯৫। আহত প্রায় ৯০০-র বেশি। এর মধ্যে প্রশ্নটা উঠছে তা হলে দক্ষিণ ভারতগামী ট্রেন পরিষেবা আবার কবে স্বাভাবিক হবে? রেলের তরফে সরকারি ভাবে এখনও এই বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। তবে রেলের উদ্ধার সংক্রান্ত কাজের সঙ্গে যুক্ত একাংশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানিয়েছেন, অন্তত সোমবারের আগে ধ্বংসস্তূপ সরানো সম্ভব নয়। পরিষেবা স্বাভাবিক (Rail Services Resumed) হতে পারে মঙ্গলবার।
প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে রেলের অত্যাধুনিক কবচ (Kavach) প্রযুক্তি নিয়ে। কোথায় গেল কবচ? রেলমন্ত্রী (Railway Minister) কবচের ঘোষণা করে প্রযুক্তির (Technology) ট্রেনে চেপে পরীক্ষামূলক ভ্রমণ করেছিলেন।গত বছর চার মার্চ কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী দেখাচ্ছেন দুটি ট্রেন (Train) মুখোমুখি হলে কীভাবে দুর্ঘটনা (Accident) এড়ানো যাবে। এই প্রযুক্তির নাম দেওয়া হয় কবচ। শুক্রবার বালেশ্বরের (Balewar) কাছে বাহানগা বাজারে লাইনচ্যুত হয় চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের (Coromandel Express) ১৫টি বগি। দুর্ঘটনার (Accident) সঠিক কারণ এখনও উঠে না এলেও প্রযুক্তির গণ্ডগোল এড়ানো যাবে না। সেখানেই আধুনিক প্রযুক্তির কবচ নিয়ে প্রশ্ন (Question) উঠছে। অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস বসানো থাকত এটা হত না। এদিন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বলতে শোনা গিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
আরও পড়ুন: Odisha Train Accident | ওড়িশায় রেল দুর্ঘটনা নিয়ে শোক প্রকাশ আন্তর্জাতিক মহলের
অন্যদিকে এই দুর্ঘটনার পর ওড়িশা ও দক্ষইণভারতগামী ট্রেন পথ একপ্রকার স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। ওই পথে বেশির ভাগই চিকিৎসার জন্য ভেলোরে যায়। দীর্ঘদিন ওই পথ বন্ধ থাকলে সমস্যায় পড়বে যাত্রীরা। এই বিষয় দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক আদিত্য চৌধরী জানিয়েছেন, কবে ট্রেন পরিষেবা স্বাভাবিক হবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, হতাহতদের উদ্ধার করাই তাদের মূল প্রধান্য।
দুর্ঘটনাস্থল থেকে যাত্রীরা জানিয়েছেন, ট্রেনের কামরা একটার গায়ে আর একটা উঠে পড়েছে। কোনওটা উল্টে গিয়েছে। মালগাড়ির উপরে উঠে পড়েছে আস্ত একটা ইঞ্জিন। কয়েকটা কামরা গগিয়ে পড়েছে পাশের নয়ানজুলিতে। লাইন বলতে কিছুই নেই। ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে। সিমেন্টের স্লিপারগুলি ভেঙেচুরে, লোহার রড বেরিয়ে একেবারে কঙ্কালসার। চারিদিকে মৃত্যু মিছিল। এই ছবিটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে, উদ্ধারকাজে গতি আনলেও ট্রেন পরিষেবা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে রেল কর্তৃপক্ষকে।
শনিবার দুপুরের মধ্যে ট্রেনের কামরায় চাপা পড়ে থাকা যাত্রীদের উদ্ধার করা গেলেও, ধ্বংসস্তূপ সরাতে আরও অন্তত ৪৮ ঘণ্টা লাগতে পারে রেল কর্তৃপক্ষের। শুক্রবারের পর শনিবারও এই রুট দিয়ে যাওয়া অধিকাংশ ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। কিছু ট্রেনের যাত্রাপথ পরিবর্তন করা হয়েছে।