হ্যাপি নিউ ইয়ার, ২০২৩-এর জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইল। আজ একটু ফিরে দেখা। ২০২২-এ পথচলা শুরু হয়েছিল কোভিড আতঙ্কের রেশ কাটিয়ে, অনেক আশা নিয়ে, অনেক আশঙ্কাও ছিল বইকী, সেই পথ চলতে চলতে কী হারিয়ে গেল? তাই নিয়েই আলোচনা, কী হারাল বলছি তবে তার আগে এই হারানোর লম্বা ইতিহাস নিয়েও দু’ চারটে কথা হোক। হারানোটা খুব বড় কিছু নয়। চলতে চলতে অমন কত কিছুই তো হারাই আমরা। একথা জানিতে তুমি, ভারতঈশ্বর শাহজাহান, কালস্রোতে ভেসে যায়, জীবন যৌবন ধনমান। এ তো আমাদের ঠাকুর কবেই বলে গেছেন। চান বা না চান, টিকটিকির ল্যাজের মতো আপনার জীবনের আরও একটা বছর তো খসে গেছে, আপনি ক্রমশ ফুরোনোর দিকে, আল পাচিনো গড ফাদার, অসুস্থ, শয্যাশায়ী, বহুদিন পরে ‘কে’ তাঁর স্ত্রী দেখা করতে এসে বলছেন, তোমাকে এত অসহায় কখনও দেখিনি। গডফাদার হেসে বলছেন, অসুস্থতা আমাকে ওয়াইজার, আমাকে বিচক্ষণ করে তুলেছে। ‘কে’ হেসে বলছেন, অসুস্থতা বিচক্ষণ করে তুলেছে? মাইকেল করলিওন, গডফাদার হাসলেন, বললেন মৃত্যু আমাকে আরও বিচক্ষণ করে তুলবে। হ্যাঁ, আপনি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রাজ্ঞ হচ্ছেন, বিচক্ষণ হচ্ছেন, আর সেই হয়ে ওঠার এক চূড়ান্ত পর্যায়ে আপনি মরে যাবেন, এটাই জীবন। এই সারাটা জীবন আপনি কিছু হারাবেন, আবার তা ফিরে পাবেন, হয়তো তা ফিরেই পাবেন না, হয়তো নতুন কিছু এসে হাজির হবে। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে এইসব পাওয়া বা না পাওয়া এক বিরাট ব্যাপার, কিন্তু ইতিহাসের কাছে কিছুই নয়। যেমন আমরা ভুলতেই বসেছি এক উন্মাদ অপরিণামদর্শী প্রধানমন্ত্রী মাত্র ক’ বছর আগে দেশের মানুষকে অযথাই ব্যাঙ্ক আর এটিএম-এর সামনে লাইনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। যেমন ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে আসছে কোভিড সংক্রমণ, লকডাউন, সারি সারি মৃতদেহ আর পরিযায়ী শ্রমিক। সেই কবে ইতিহাসে এক অত্যাচারী রাজা ভেঙে চুরমার করেছিল মন্দির, সেই কালাপাহাড়ের কথা ক’জনই বা মনে রেখেছেন। নিজের শেষ বস্ত্রটিও দান করে ঘরে ফিরতেন কৌপিন পরে রাজা হর্ষবর্ধন, মনে রাখা তো দূরস্থান, ক’জন জানেন? এক হিন্দু রাজা শশাঙ্ক ভেঙে চুরমার করেছিলেন বৌদ্ধ মঠ, কে মনে রেখেছে। হিন্দু ব্রাহ্মণ্যবাদের অত্যাচারেই মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে, সেই অত্যাচারেই জন্ম নিয়েছে হাজার একটা প্রতিবাদী ধর্ম, যাদের অন্যতম হরিচাঁদের মতুয়া ধর্ম। এভাবেই হঠাৎ একবার হারিয়ে গেছে সহিষ্ণুতা, হারিয়ে গেছে ধর্মনিরপেক্ষতা, হারিয়ে গেছে মানবতা, আবার তা ফিরে এসেছে। তো এই ২০২৩-এ কী নতুন করে হারাল? বলছি বলছি, আগে বলি মানুষের সভ্যতার সেই গোড়ার কথা, প্রথমে যূথবদ্ধ এক বড় পরিবার, তারপর এক গোষ্ঠী তৈরি হল, তারা স্থায়ী বসবাসের জায়গা করে নিল। গোষ্ঠীপতি কে হবে? যখন শিকার আর আহরণই ছিল খাদ্যের মূল স্রোত, তখন নিঃসন্দেহে এক শক্তিমান পুরুষই ছিলেন বা হয়ে উঠতেন গোষ্ঠীপতি। কিন্তু তারপর? স্থায়ী বসবাস, কৃষিকাজ, বিভিন্ন রীতিনীতি, কৌশল জায়গা নিল নিছক শক্তির, জরাসন্ধ হেরে গেল কৃষ্ণের কাছে, বুদ্ধি, প্রাজ্ঞতা জায়গা নিল শক্তির। একজন প্রাজ্ঞ মানুষ, বিচক্ষণ মানুষ বসলেন গোষ্ঠীপতির জায়গায়, শক্তিশালী বলরাম নয়, যাদবরা বেছে নিল কূটনীতিতে মাহির এক তরুণকে, তাঁদের নেতা হিসেবে। পাণ্ডবরাও সেই কৃষ্ণকেই মেনে নিলেন তাঁদের দশরূপ মন্ত্রদ্রষ্টা হিসেবে, এমনকী কৌরব পক্ষও কৃষ্ণকে অবহেলা করতে পারলেন না। পুরাণ কাহিনি বাদ দিন, বাস্তব সমাজেও শক্তির বদলে জায়গা পেয়েছিল বিচক্ষণতা। এবার নিশ্চয়ই আপনারা মনে করছেন, হারাল কি সেই বিচক্ষণতা? অধৈর্য হবেন না, নিশ্চয়ই জানাব কী হারাল এই ২০২২-এ। তার আগে বলি, সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত মানুষ এই সময় থেকেই, অর্থাৎ মধ্যযুগের শুরু থেকেই একটা বিষয় টের পেয়েছিল, গোষ্ঠীপতি, রাজা, নবাব, সুলতান, সম্রাট যদি বিচক্ষণ না হয় তাহলে বেঁচে থাকা দায় হবে। কেন বলুন তো? আসলে সেই সময় থেকেই মানুষের বিভিন্ন পরস্পর বিরোধী চাহিদা জন্ম নিয়েছে, চাহিদার জোগান জন্ম নিয়েছে, কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট যাকে বলে, তা বাড়ছে। অতএব জন্ম নিল বিচার, মানুষ বিচারের জন্যই যেতে থাকল ওই প্রাজ্ঞ মানুষটার কাছে, যিনি বিচার করতে পারবেন, নিরপেক্ষভাবে, নির্ভয়ে, স্বাধীন পক্ষপাতহীন বিচার। তো রাজার দরবারে বিচার শুরু হল, অনেক রাজা আবার তাঁদের বিচারের জন্য মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন, অনেক সম্রাট, নবাব রাজা বিচারের কিছু দিক ছেড়ে দিলেন আরও প্রাজ্ঞ বিচক্ষণ মানুষদের ওপর যাঁরা হলেন বিচারক, কাজি। ক্রমশ তাঁদের বিচার লিপিবদ্ধ হতে থাকল, মানুষের কাছে বিচারের, ন্যায় বিচারের এক রূপরেখা তৈরি হল, তৈরি হল জুরিসপ্রুডেন্স, তৈরি হল আইন, তৈরি হল বিচারব্যবস্থা, মঞ্চে এলেন বিচারক, আইনজীবী, শুরু হল সওয়াল জবাব। কোতোয়াল ধরেই মুণ্ডুখানা ঘ্যাঁচ করে কেটে নেবার বদলে তাকে হাজির করা হল কাজির সামনে, বিচারকের সামনে, তারপর বিচার। অনেকে ভাবছেন হুঁ হুঁ বাবা, ধরে ফেলেছি, ২০২৩-এ আমরা বিচার হারিয়েছি। না না তা নয়, কী হারিয়েছি তা বলবই, আজ অনুষ্ঠান শেষ করার আগেই বলব, কিন্তু আমার আরও কিছু কথা বলার আছে। তবে গত বছরে, মানে ২০২৩-এ বিচার ব্যবস্থা বেশ কিছু রায় দিয়েছে, সেসব রায় মূলত আমাদের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়, সুপ্রিম কোর্ট থেকেই এসেছে। জানুয়ারি ২০২৩-এ জতি নরসিঙ্ঘমের মামলা, জুনা আখাড়ার এক প্রধান এই পুরোহিত প্রকাশ্যেই বিষ ছড়িয়েছেন, হিন্দুদের অস্ত্র হাতে নিতে বলেছেন, মুসলমানদের জনসংখ্যা এবং তাদের অত্যাচারকে থামাতে হিন্দুদের হাতে অস্ত্র নিতে হবে বলেছেন। কেউ কোনও কথা বলছে না, সুপ্রিম কোর্ট উত্তরাখণ্ড সরকারকে নির্দেশ দেওয়ার পর তাঁকে গ্রেফতার করা হল ১৫ জানুয়ারি, একমাস পরেই তিনি বেল পেলেন, বাইরে এসেই ক’মাস পরেই আবার তিনি তাঁর বিষ ছড়াচ্ছেন, না আর কিছুই হয়নি। ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্ট দেশের রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেন, কোভিড আক্রান্তদের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ দিতে, সে নির্দেশ কেবল নির্দেশই রয়ে গেছে। মার্চ মাসের ঘটনা ছিল আরও সাংঘাতিক, এই ভিডিও সবাই দেখেছেন, আবার দেখুন। (ভিডিও) মোদি মন্ত্রিসভার মন্ত্রীপুত্রের থর গাড়ির চাকার তলায় পিষে মারা হল ৪ জন কৃষককে, প্রত্যেক অভিযুক্ত জামিন পেয়েছেন, সাক্ষীদের একজনকে মার্চ ১২তে হত্যার চেষ্টা হয়েছে, বিচার চলছে, কবে শেষ হবে জানা নেই। এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে মোদি সরকারের ফরেন কন্ট্রিবিউশন রেগুলেশন অ্যাক্টকে জায়েজ বলা হল, সেই সঠিক আইনে দেশের বেশ কিছু মানবাধিকার সংস্থা, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, বিভিন্ন পরিবেশ সংরক্ষণ ইত্যাদির জন্য তৈরি এনজিওরা বিদেশি সাহায্য থেকে বঞ্চিত হল, যাঁরা সরকারের বিরোধিতা করছিলেন, তাঁদের দরজায় কড়া নাড়ল ভিজিলেন্স, এই আইন অনুযায়ী বিদেশি সাহায্য ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হল। কারণ বিদেশি টাকা নাকি দেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করছে। ওদিকে দেশের এমনকী আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও ৬০-৭০ শতাংশ বিদেশি টাকা আসছে, মিডিয়াতে মানে গণমাধ্যমে ৫০ শতাংশের বেশি বিদেশি টাকা আসছে। তাতে অবশ্য কিছু বলার নেই, কারণ বিনিয়োগের সেই আইনও এই সরকারেরই তৈরি। মে ২২ বুলডোজার চলল, দিল্লি সীমান্তে, যে সরকার বলেছিল ২০২২-এর মধ্যে সবকা পক্কা ঘর হোগা, সেই সরকারের বুলডোজার কেড়ে নিল অসংখ্য গরিব মানুষের মাথার ছাদ। এর শুরুয়াত হনুমান জয়ন্তীর মিছিল থেকে, সেদিন মসজিদের কাছে এসেই দাঙ্গা শুরু হয়, দিল্লি হাইকোর্ট ওই ২২ মে রায় দিলেন, পুলিশের অপদার্থতার জন্যই এই ঘটনা ঘটেছে। ওদিকে ঠিক ওই সময়ে বুলডোজার ভাঙছে সংখ্যালঘু এলাকার ঘর বাড়ি দোকান। সেদিন সিপিআইএম-এর বৃন্দা কারাতকে দেখা গিয়েছিল বুলডোজারের সামনে রুখে দাঁড়াতে। চলুন জুনে, জুন মাসে জাকিয়া জাফরির আবেদন খারিজ করা হল, কী ছিল তাঁর আবেদন? কংগ্রেস সাংসদ আহসান জাফরি সমেত বহু মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল গুলবার্গ সোসাইটিতে, আহমেদাবাদে, ২০০২-এর দাঙ্গায়। তাঁর স্ত্রী পিএম নরেন্দ্র মোদি সমেত আরও বেশ কিছু বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিলেন, সেই আবেদন কেবল খারিজ করা হল না, সেই অভিযোগকে আদালতে নিয়ে গিয়েছিলেন যিনি, সেই তিস্তা শীতলবাড়কে পরের দিন গ্রেফতার করা হল কারণ ওই রায়ে মোদি শাহ বিজেপিকে কেবল ছাড় দেওয়া হয়নি, রায়ের মধ্যেই বলা হয়েছে এই আবেদনের পেছনে ষড়যন্ত্র ছিল। দু’ মাস পরে তিনি জামিন পেলেন। এই মাসেই অল্ট নিউজ-এর মহম্মদ জুবেইরকে গ্রেফতার করা হয়। বলা হয়, তিনি হিন্দু ধর্মকে অপমান করেছেন, যদিও তিনি তার বহু আগে ১৯৮৩-এর হিন্দি ছবি কিসি সে না কহনা-র একটি ফ্রেম টুইট করেছিলেন, যেখানে হ্নিমুন হোটেলের নাম পালটে হনুমান হোটেল করা হয়েছিল, ঋষিকেশ মুখার্জি বেঁচে থাকলে হয়তো তিনিও গ্রেফতার হতেন। জুলাই মাসে জুবেইর জামিন পেলেন, উত্তরপ্রদেশ সরকারের এক আপিলকেও বিচারক খারিজ করলেন, যে আপিলে বলা হয়েছিল মহ জুবেইরকে টুইট করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিতে, সে আবেদন অবশ্য বিচারকরা খারিজ করে দেন। এই জুলাইয়ে সুপ্রিম কোর্ট মোদি সরকারের প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট-এর পক্ষে রায় দেন, যে অ্যাক্ট যে কোনও মানুষকে যে কোনও সময়ে এই আইনের ধারায় জেরা, তার বাড়িতে রেইড, এবং গ্রেফতার করতে পারে। যে আইনে সাফ বলা আছে যে গ্রেফতার করা মানুষটিকে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি অপরাধী নন, অন্য যে কোনও আইনে গ্রেফতার করা হলে পুলিশ বা সরকারকে প্রমাণ করতে হয় যে গ্রেফতার করা মানুষটি সত্যিই দোষী, এখানে ঠিক উলটো। সেই কারণে এই আইন ন্যাচারাল জাস্টিস বিরোধী, এটাই ছিল আবেদনকারীদের যুক্তি, কিন্তু আদালত সেই যুক্তি খারিজ করে দেন। আগস্ট মাসে পেগাসাস মামলার পরে তৈরি টেকনিকাল কমিটির রিপোর্ট এল, সুপ্রিম কোর্ট জানালেন, হ্যাঁ বেশ কিছু মোবাইলে ওই পেগাসাস আক্রমণ হয়েছিল, কিন্তু সেই ডিটেইল রিপোর্ট পাবলিক করা হল না, সুপ্রিম কোর্ট জানাল এই রিপোর্ট পাবলিক করা সম্ভব নয়, কারণ এতে নাকি অনেকে ব্যক্তিগত তথ্য আছে, অথচ এই ব্যক্তিগত তথ্য বার করার জন্যই পেগাসাস কেনা হয়েছিল, ব্যবহারও করা হয়েছিল। সেপ্টেম্বর দেখাল আশার আলো, সুপ্রিম কোর্টের রায় জানাল যে কোনও নারী, বিবাহিত বা অবিবাহিত সন্তান ধারণ করতে পারেন, এটা এক ঐতিহাসিক রায়। এই সেপ্টেম্বরেই এক রায়ে বলা হল অডিও ভিজুয়াল মিডিয়া দৃষ্টিকটুভাবেই ঘৃণা ছড়াচ্ছে, না কোনও রায় নয়, কিন্তু অবজার্ভেশন, তাই বা কম কী? এবার বুঝেছেন তো, ২০২২-এ বিচার হারিয়ে যায়নি, কী হারিয়েছে? বলছি। তার আগে চলুন অক্টোবরে। কোর্টের রায়ে ধর্ষণে অভিযুক্ত নয়, ধর্ষণের মামলায় সাজা পেয়েছিল গুরু রামরহিম, তিনি প্যারোলে ছাড়া পেলেন, হরিয়ানার দুটো আসনে বাই ইলেকশনের ঠিক আগেই তাঁকে ছাড়া হল, তিনি আশ্রমে ফিরেই ভক্ত সমাবেশে ভাষণ দিলেন। নভেম্বরে আবার নরেন্দ্র মোদির জয়, ১০৩তম সংবিধান সংশোধনী বিল ছাড় পেল, এই প্রথম উচ্চবর্ণের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণ চালু হল, সংবিধানে মূল সমানতার ধারণাকে নস্যাৎ করে দিয়ে ৮ লক্ষ টাকার নীচে রোজগার করে এমন উচ্চবর্ণের মানুষদের জন্য চাকরিতে ১০ শতাংশ সংরক্ষণ চালু করার সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে জানাল সুপ্রিম কোর্ট। ডিসেম্বরে দুটো খবর এল, প্রথমটা জুলাই ২০২১-এ জেলে মারা গিয়েছিলেন স্ট্যান স্বামীকে নিয়ে। জানা গেল তাঁর কমপিউটার হ্যাক করে কিছু ইমেল ঢোকানো হয়েছিল, প্ল্যান্ট করা হয়েছিল, তাঁকে গ্রেফতার করার পর তিনি জামিন পাননি। দ্বিতীয় খবর বিলকিস বানো মামলার, তাঁকে ধর্ষণে অভিযুক্তদের জেল থেকে ছেড়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে তিনি আবেদন করেছিলেন, সেই আবেদন খারিজ করা হল। সংস্কারী হিন্দু ধর্ষক খুনিরা জেলের বাইরেই আছেন, এখনও। তাহলে হারালটা কী? সারা বছর জুড়ে বিচারব্যবস্থার এই রায়গুলো দেখার পরে বলাই যায়, আইন তো আছেই আইনের জায়গায়, এখনও তো সিআরপিসি আছে, মনুসংহিতা তো লাগু হয়নি, এখনও তো সংবিধান আছে। কিন্তু দেশের মানুষ, বহু মানুষ ভরসা হারাচ্ছেন এই বিচার ব্যবস্থার ওপর। এ এক সাংঘাতিক সময়, গোটা ২০২২ জুড়ে বিভিন্ন রায় মানুষের আস্থা কেড়ে নিচ্ছে, ২০২২ থেকে ২০২৩ আসতে আসতে আমরা হারিয়েছি আইনের ওপর আস্থা, আইনের ওপর ভরসা। কিন্তু আশায় মরে চাষা, আমরা এখনও আশা রাখব, এখনও আদালতের দিকেই চেয়ে থাকব ন্যায় বিচারের জন্য, মানুষ ভালো কিছুর জন্যই বাঁচে, গত বছর যা খোয়া গেছে এ বছর তা ফিরে আসুক। বছরের শেষে কেরলের সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান বেল পেয়েছেন, কিন্তু উমর খালিদের প্যারোল শেষে বছরের শেষ দিনে আবার গেছেন জেলে, জেলেই মুক্তির নয়, অন্তত জামিনের দিন গুনছেন অধাপিকা সোমা সেন। ২০২৩ ফিরিয়ে আনুক সেই বিচার ব্যবস্থাকে যার ওপরে আস্থা রাখতে পারে দেশের মানুষ।