বেঙ্গালুরু: হিজাব পরা (Hijab Row) নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা ভিত্তিহীন বলেই মনে করেন আলিয়া আশাদি ও হাজরা শিফা। কর্নাটক হাইকোর্টে হিজাব বিতর্কে (Karnataka High court Hijab Case) যে মামলা দায়ের হয়েছে, তার অন্যতম দুই পিটিশনার উদুপি পিইউ কলেজের এই দুই ছাত্রী। সর্বভারতীয় এক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাঁরা জানান, হিজাব পরা তাঁদের অধিকার। ঘটনার দিন প্রথম বার তাঁরা হিজাব পরে কলেজে যাননি। এর আগেও হিজাব পরে কলেজে গিয়েছেন। কিন্তু তখন কোনও আপত্তি ওঠেনি।
আদালত যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব ও গেরুয়া স্কার্ফ পরে আসার বিপক্ষে রায় দেয়, সে ক্ষেত্রে তাঁদের অবস্থান কী হবে? সরাসরি এই বিতর্কে না গিয়ে দুই ছাত্রীর কৌশলি জবাব, আদালতের উপর আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে। সুবিচার পাব। হিজাব পরা যে তাঁদের ‘অধিকার’, তা বারবারই জোর দিয়ে বলেন এই দুই ছাত্রী। তাঁদের কথায়, ‘আমরা কখন হিজাব পরব, পরব না, সেটা আমাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর নির্ভর করে। কেউ জোর খাটাতে পারে না। আমরা ছোট থেকেই হিজাব পরে আসছি।’ কেউ গেরুয়া স্কার্ফ পরে এলেও তাঁদের কোনও আপত্তি নেই বলেও তাঁরা জানিয়েছেন।
হিজাব বিতর্কে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার জন্য কর্নাটকের এক বিজেপি বিধায়কের মন্তব্যকেই তাঁরা দায়ী করেন। এই দুই ছাত্রীর কথায়, ‘হিজাব বিতর্ক খুব ছোট একটা বিষয়। এটা পড়ুয়াদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত।’ এর মধ্যে রাজনীতিকদের মাথা গলানোর প্রয়োজন রয়েছে বলে তাঁরা মনে করেন না।
এই বিতর্কের সূত্রপাত, গতমাসে, কর্নাটকের উদুপির পিইউ কলেজে। হিজাব পরে আসায় ছয় ছাত্রীকে ক্লাস করতে দেওয়া হয়নি। ইতিমধ্যে ওই ছাত্রীরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। বিচারপতি এদিন মামলাটি বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠিয়ে দিলেও তাঁর মন্তব্য, ‘আবেগ নয়, যুক্তি ও আইন দিয়ে এই মামলার বিচার হবে। বিচারের ক্ষেত্রে সংবিধানই শিরোধার্য।’
উদুপির পিইউ কলেজের ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই কর্নাটকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে হিন্দুত্ববাদীদের বিক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। হিজাবের বিরোধিতায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গেরুয়া স্কার্ফ পরে আসতে শুরু করেছেন পড়ুয়াদের একাংশ। এই বিতর্কের জের ধরেই কর্নাটকের এক কলেজে জাতীয় পতাকা নামিয়ে গেরুয়া পতাকা তোলার অভিযোগ ওঠে।
আরও পড়ুন: Chandra Bose: হিজাবের মতো সিঁদুর, শাখা-পলাও নিষিদ্ধ হোক, দাবি নেতাজির প্রপৌত্রের
এই বিতর্কের মধ্যেই কর্নাটক সরকার ক্লাসরুমের ‘ড্রেস কোড’ নিয়ে অবস্থা স্পষ্ট করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমতা বা শৃঙ্খলা নষ্ট হয়, এমন কোনও পোশাক পরা যাবে না বলে নির্দেশ দেয় রাজ্য। কর্নাটক সরকারের এই নির্দেশ দিয়ে নানামহল থেকে সমালোচনাও হয়েছে। এমত অবস্থায় কর্নাটক হাইকোর্ট কী রায় দেয়, সে দিকেই তাকিয়ে সবপক্ষ। এ দিন সিঙ্গল বেঞ্চে এই মামলা উঠলে, তা বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিচারপতি কৃষ্ণ দীক্ষিতের মন্তব্য, স্বার্থান্বেষী কিছু ব্যক্তি এই ধরনের বিতর্ক জিইয়ে রাখতে চায়।