কলকাতা: রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সামগ্রিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ বলে অভিযোগ করলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস (Governor CV Anand Bose)। পঞ্চায়েত ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে বৃহস্পতিবার রাজভবন থেকে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহাকে (State Election Commissioner Rajeev Sinha) রাজধর্ম পালনের বার্তা দিলেন। তাঁর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনি মানুষের আর্তি শুনুন। গ্রাউন্ড জিরোতে যান। সাধারণ মানুষের কান্না আমি বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে শুনেছি। আমি রাজভবনে রাজধর্ম পালনের জন্য বসে আছি। কমিশনারের প্রতি তাঁর আরও পরামর্শ, আপনি দ্রোণাচার্য হয়ে উঠুন। অশ্বথামা হবেন না। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যপাল কমিশনারের প্রতি কার্যত অনাস্থা প্রকাশ করলেন। তাঁর আরও মন্তব্য, আপনাকে আমি নিয়োগ করেছিলাম। আপনি আমাকে এবং রাজ্যবাসীকে হতাশ করেছেন। আপনাকে বলছি এখনও সময় আছে, অ্যাক্শন নিন। যে ভাষায় তিনি এদিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে বিঁধলেন তা রীতিমতো নজিরবিহীন বলে মনে করছে প্রশাসনিক মহল।
পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্ব থেকেই রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায় হিংসার সূত্রপাত।এদিন পর্যন্ত রাজনৈতিক হানাহানিতে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। মনোনয়ন পেশ শুরু হতেই রাজ্যপাল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়, ক্যানিং, হয়ে উত্তরবঙ্গের দিনহাটা সহ বিস্তীর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেন। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। হতাহতদের কয়েকজনের বাড়িতে গিয়েও পরিবারের সদস্যদের সহানুভূতি জানান তিনি। তা নিয়ে অবশ্য শাসকদলের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে রাজ্যপালকে। দুদিন আগেই নির্বাচন কমিশনারকে মুখ বন্ধ খামে তাঁর পর্যবেক্ষণ পাঠান রাজ্যপাল।তিনি বলেন, আর ৪৮ ঘণ্টা দেখব, নির্বাচন কমিশন আদালতের নির্দেশ কতটা পালন করেছে। তাঁর আরও মন্তব্য, আমি আমার রিপোর্ট কার্ড যথাস্থানে পাঠিয়ে দিয়েছি। এই অবস্থায় রাজভবন তিনি সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন।
ওই সাংবাদিক বৈঠকেই রাজ্যপাল বলেন, মিস্টার কমিশনার, আপনি রাজধর্ম পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে কেন এত হিংসা, কেন এত মৃত্যু, এর দায় আপনাকে নিতে হবে। আপনি হাত তুলে নিতে পারেন না। আমি বিভিন্ন হিংসাদীর্ণ এলাকায় ঘুরেছি, সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। শিশুর কান্না, মায়েদের কান্না শুনেছি। মানুষ আমাকে অনেক অভিযোগ করেছে। কেউ কেউ নকল ব্যালট ছাপা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন।কিন্তু মিস্টার কমিশনার, আপনি কোনও ব্যবস্থা নেননি।
আরও পড়ুন: Rujira Banerjee | SC | হেনস্তার অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টে দ্বারস্থ রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়
রাজ্যপাল বলেন, বাসন্তী, ক্যানিং, ভাঙড়, দিনহাটায় এত যে মৃত্যু হয়েছে, এর দায় কার। রাজ্যে গণতন্ত্রকে খুন করা হয়েছে। কারা ঘাতক, কমিশনারের নিশ্চয়ই জানা উচিত। মিস্টার কমিশনার, আপনার হাতে তো রক্তের দাগ লেগে রয়েছে। আরবের হাজারটা পারফিউম ব্যবহার করেও ,সে দাগ মোছা যাবে না। আমি জেলায় জেলায় গিয়ে মানুষের আর্তি শুনেছি। আপনার কানে কেন মানুষের অভাব অভিযোগ, শিশু ও মায়েদের কান্নার আওয়াজ পৌঁছচ্ছে না, বুঝতে পারছি না।
বোস বলেন, আপনাকে আমি নিয়োগ করেছিলাম। কিন্তু আপনি রাজ্যবাসীকে হতাশ করেছেন। রাজধর্ম পালন করেননি। রাজ্যপাল কিন্তু রাজধর্ম পালনের জন্যই রাজভবনে বসে আছেন। আমি শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে এই রাজনৈতিক হিংসা বন্ধ করব। এই রক্তের রাজনৈতিক হোলিখেলা বন্ধ করতেই হবে। মানুষের রক্ত ঝরানোর কোনও অভিকার নির্বাচন কমিশনারের নেই। আপনি ফোন ঘোরালেই অনেক হিংসা বন্ধ হয়ে যেত। কিন্তু আপনি তা করেননি।
রাজ্যপালের আরও অভিযোগ, রাজ্যের অনেক আইএএস আইপিএস অফিসার পক্ষপাতদুষ্ট। তাঁদের কারও বিরুদ্ধে কমিশনার কোনও ব্যবস্থা নেননি। পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে হিংসার জন্য বাংলার মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এখনও সময় আছে। মিস্টার কমিশনার আপনি মানুষের আর্তি শুনুন, মানুষকে বাঁচান, দ্রুত অ্যাক্সন নিন।