ওয়াশিংটন: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (Artificial Intelligence – AI) অনেক দিন আগেই বেছে নিয়েছে মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থা মাইক্রোসফট (Microsoft)। বলা হচ্ছে, এতদিন যা ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি সম্ভাবনা (Possible Future Technology) হিসেবে চিহ্নিত ছিল, তা চাক্ষুষ করার সময় এসে গিয়েছে। ফলে চ্যাটজিপিটিকে (ChatGPT) এজ ওয়েব ব্রাউজারে (Edge Web Browser) অন্তর্ভুক্ত করতে বিন্দুমাত্র সময় অপচয় করেনি মাইক্রোসফট। বিং সার্চ ইঞ্জিনও (Bing Search Engine) আর্টিফিসিয়ালি ইন্টেলিজেন্ট। মাইক্রোসফটের এজ ব্রাউজার সবার আগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে নিয়োগ করেছে সর্বসাধারণের জন্য। এবার মাইক্রোসফট তাদের ডিজিটাল সিকিউরিটি প্রোডাক্টের (Digital Security Product) ক্ষেত্রেও এআই (AI) নিয়োগ করেছে।
মাইক্রোসফট সিকিউরিটি কোপাইলট (Microsoft Security Copilot)। এই সাইবার সিকিউরিটি প্রোডাক্টে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে যুক্ত করেছে এই মার্কিন টেক সংস্থা। খবরে প্রকাশ, মাইক্রোসফট সিকিউরিটি কোপাইলট অত্যন্ত দ্রুত যে কোনও সাইবার থ্রেট (Cyber Threat) চিহ্নিত করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী সাড়া দিতে পারে। আর্টিফিসিয়ালি ইন্টেলিজেন্ট হওয়ার কারণে যথাযথ সিদ্ধান্তও নিতে পারে এই প্রোডাক্ট।
আরও পড়ুন: Google | NCLAT | ৩০ দিনের মধ্যে জরিমানার ১৩৩৭ কোটি টাকা জমা করতে হবে গুগলকে
কী বলছে মাইক্রোসফট?
সংস্থা সূত্রে বলা হয়েছে, মাইক্রোসফট এতদিন ধরে সাইবার নিরাপত্তা (Cyber Security) প্রদান করে আসছে উইন্ডোজ প্ল্যাটফর্মে (Windows Platform)। সিকিউরিটি কোপাইলট এবার মাইক্রোসফটের থ্রেট ইন্টেলিজেন্সের (Microsoft Treat Intelligence) সঙ্গে একযোগে কাজ করবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্ত হওয়ায়, সাইবার নিরাপত্তা আরও উন্নত হয়ে উঠবে।
বর্তমানে নতুন এই সিকিউরিটি টুল প্রাইভেট প্রিভিউ (Private Preview)-এর মাধ্যমে উপলব্ধ।
আরও পড়ুন: New Web Series | স্বস্তিকার সাংবাদিক মেয়ে ‘নিখোঁজ’, শেষ দেখা গিয়েছিল টোটার সঙ্গে
উন্নত প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
প্রযুক্তি (Technology) কখনও থেমে থাকে না। প্রযুক্তি সর্বদা বিবর্তনশীল (Developmental)। ক্রমাগত বিকশিত হতে থাকে যে কোনও ধরনের প্রযুক্তি। এক্ষেত্রেও তাই ঘটছে। উইন্ডোজ চালিত পার্সোনাল কম্পিউটার ইউজারদের স্বার্থে মাইক্রোসফট তাদের নিজস্ব অ্যান্টিভাইরাস (Antivirus) এনেছে। উইন্ডোজ ডিফেন্ডার (Windows Defender) বেশ জনপ্রিয় প্রযুক্তি দুনিয়ায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উইন্ডোজ ডিফেন্ডার অ্যাডভান্সড হয়েছে। এদিকে, অ্যান্টিভাইরাস যেমন উন্নত হয়, তাকে পাল্লা দিয়ে কম্পিউটার ভাইরাস, ম্যালওয়্যার, ব়্যানসামওয়্যার, ফিশিং ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল ও সাইবার থ্রেটও ক্রমাগত উন্নত হয়। হ্যাকাররা রোজদিনই নিত্যনতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে চলেছেন, বিদ্যমান প্রযুক্তির (Existing Technology) বেড়াজাল টপকানোর জন্য এবং তাকে প্রতিহত করার জন্য। মাইক্রোসফটের কাছে এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে মাইক্রোসফট যেহেতু তাদের উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমকে ওপেন সোর্স (Open Source) করে রেখেছে। অ্যাপলের মতো হার্ডওয়্যারের সঙ্গে তাদের সফটওয়্যার এন্ড-টু-এন্ড ইন্টেগ্রেটেড নয়। নিজেদের সারফেস ল্যাপটপ (Surface Laptop) ছাড়াও, অন্যান্য পার্সোনাল কম্পিউটার নির্মাণকারী (PC Manufacturing Companies) সংস্থাকেও তারা লাইসেন্স (License) বেচে থাকে। এই কারণে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম (Windows OS) সাইবার সিকিউরিটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। তাই এমন কোনও প্রযুক্তি দরকার, যা সাইবার অ্যাটাক (Cyber Attack) হওয়া মাত্র সঙ্গে সঙ্গেই সিদ্ধান্ত নেবে এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। মাইক্রোসফট এবার সেই পথেই। সম্প্রতি ওপেনএআই (OpenAI)-এর তৈরি এআই চ্যাটবট – চ্যাটজিপিটি’র চতুর্থ সংস্করণ বাজারে এসেছে, যাকে জিপিটি-৪ (GPT-4) বলা হচ্ছে। মাইক্রোসফটের সিকিউরিটি কোপাইলট এই জিপিটি-৪ বেসড।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে এলন মাস্ক (Elon Musk), স্টিভ ওজনিয়াকের (Steve Wozniak) মতো ব্যক্তিত্বরা যখন সতর্কভাবে পা ফেলার পরামর্শ দিচ্ছেন, হিতে বিপরীত হওয়ার সতর্কবার্তা শোনাচ্ছেন, সেই সময় মাইক্রোসফটের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ইতিবাচক ভবিষ্যতের ইঙ্গিতবাহী। সিকিউরিটি কোপাইলট অনবরত শিখতে পারে এবং সেই অনুযায়ী উন্নতি করতে পারে। পাশাপাশি, সিকিউরিটি টিমের (Security Team) সঙ্গে কাঁধে কাধ মিলিয়ে কাজও করে যেতে পারে। মাইক্রোসফটের আশা, সেদিন আর দূরে নেই, যেদিন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সম্পন্ন সিকিউরিটি কোপাইলট যে কোনও সাইবার থ্রেটের মোকাবিলা করতে পারবে, তাও চোখের নিমেষে।