লখনউ: কৃষকদের অসন্তোষ, তীব্র বেকারত্ব, কোভিডকালে বিপর্যস্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, জ্বালানির অগ্নিমূল্য, না কি স্রেফ মেরুকরণের রাজনীতি। কী হবে ভোট প্রচারের মূল বিষয়বস্তু? উত্তরপ্রদেশের মসনদ দখলে বিরোধী দলগুলি যেখানে মোদি-যোগী সরকারের বিভিন্ন ব্যর্থতাকে হাতিয়ার করছে, তার মোকাবিলা করতে বিজেপিকে কি শুধুই মেরুকরণকে হাতিয়ার করবে? মেরুকরণ নিয়ে ঠিক কতদূর এগোবে গেরুয়া শিবির? এই প্রশ্নের উত্তর দেবে উত্তরপ্রদেশ।
উত্তরপ্রদেশে নানা কারণে যোগী সরকার খুব একটা স্বস্তিতে নেই। সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো অখিলেশ যাদব প্রতিটি সভাতেই আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে যোগী সরকারকে বিঁধে চলেছেন। বিরোধীদের সব সমালোচনার জবাব দিতে অবশ্য আগের ভোটগুলির মত এবারেও বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা মেরুকরণকেই অস্ত্র করছে, এমনটাই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। বহুজন সমাজ পার্টি (বসপা) নেত্রী মায়াবতী স্পষ্ট বলেছেন, ভোটে জিততে বিজেপির শেষ সম্বল বলতে মন্দির আর বিভাজন। এ ছাড়া ওদের মুখে আর কোনও কথা নেই!
২০১২ সালে ২৯ শতাংশ ভোট পেয়ে উত্তরপ্রদেশের মসনদে বসেছিল সমাজবাদী পার্টি। দ্বিতীয় স্থানে ছিল বহুজন সমাজ পার্টি। প্রাপ্ত ভোটের হার ২৬ শতাংশ। উমা ভারতীর অধিনায়কত্বে বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছিল মাত্র ১৫ শতাংশ ভোট। অথচ সেই বিজেপি মোদির ক্যারিশমা ও পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকে হাতিয়ার করে ২০১৪-র লোকসভা ভোটে ৪২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। ২০১৩-র অগস্ট, সেপ্টেম্বরে মুজফফরনগর ও শামলিতে ঘটা দাঙ্গাকে প্রচারে ব্যবহার করে সুকৌশলে মেরুকরণের তাস খেলেছিল বিজেপি।
আরও পড়ুন: UP Election 2022: ‘সেফ সিট’ গোরক্ষপুর শহর থেকে প্রার্থী হচ্ছেন যোগী আদিত্যনাথ
২০১৭-র বিধানসভা ভোটে অখিলেশকে সরিয়ে মসনদ দখল করতেও এই মেরুকরণের রাজনীতিকেই অস্ত্র করেছিল বিজেপি। জাঠ ভোটে থাবা বসিয়েছিল গেরুয়া শিবির। জাঠদের বোঝানো হয়েছিল, বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া মানে মুসলিমদের সরকার গঠনে সাহায্য করা। এবারও প্রচারে গিয়ে সুকৌশলে ২০১৩ সালে সমাজবাদী পার্টির শাসনে হওয়া জাঠ ও মুসলমান সংঘর্ষের স্মৃতিকে উস্কে দিচ্ছেন বিজেপি নেতারা। তাঁরা বলছেন, একটি ভুল ভোট লখনউয়ের মসনদে ‘দাঙ্গাকারীদের’ ফিরিয়ে আনতে পারে।
২০১২ সালে স্নাতকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ২১ শতাংশ। যোগীর আমলে তা ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমাধারীদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৬ শতাংশ হয়েছে। সেকারণেই হয়ত যোগীর মুখে উন্নয়ন নয়, শুধুই মেরুকরণের কথা। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তাই বলছেন, ওরা জিন্নার উপাসক, আমরা সর্দার পটেলের পূজারি। ওদের পাকিস্তান প্রিয়, আমরা ভারতমাতার জন্য প্রাণ দিই। তবে আদৌ এই মেরুকরণের রাজনীতি কাজে আসবে কি না, তা ইভিএম খুললেই জানা যাবে।
আরও পড়ুন: UP Election 2022: অযোধ্যায় বেদপ্রকাশেই আস্থা, টিকিট পেলেন যোগীর মিডিয়া উপদেষ্টা
উত্তরপ্রদেশের ৪০৩টি বিধানসভা কেন্দ্রের নির্বাচন ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে সাত দফায় অনুষ্ঠিত হবে। ১০ মার্চ ভোট গণনা হবে। ২০১৭ সালে ৪০৩টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৩১২টি আসনে জয়লাভ করেছিল বিজেপি। প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট নিজের দখলে রেখেছিল গেরুয়া শিবির। সমাজবাদী পার্টি ৪৭টি আসনে জয়লাভ করে। মায়াবতী বিএসপির দখলে ছিল মাত্র ১৯টি আসন। সেবার কংগ্রেস মাত্র ৭টি আসন পায়।