শিলিগুড়ি: পাহাড়ে বেশ ঘটা করে বিজেপির সঙ্গে জিএনএলএফ, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা, হামরো পার্টি, সিপিআরএম সহ একাধিক দল জোট বেঁধেছিল। উদ্দেশ্য ছিল পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং পাহাড়ে রাজ্যের শাসকদলের ঘনিষ্ঠ অনিত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চাকে পরাস্ত করা। যৌথ জোটের নাম দেওয়া হয়েছিল ইউনাইটেড গোর্খা মঞ্চ। এর নেতৃত্বে ছিলেন দার্জিলিংয়ের সাংসদ তথা বিজেপির সর্বভারতীয় নেতা রাজু বিস্ত। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল অনেক আসনেই এই মহাজোট প্রার্থী দিতে পারেনি। যার ফলে ইতিমধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনেক আসনে জয়ী হয়েছে ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা বা বিজিপিএম-এর প্রার্থীরা।
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুং বিজেপির নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড গোর্খা মঞ্চে থাকলেও তিনি জানিয়েছেন, বিজেপি ডায়নোসরের মতন আঞ্চলিক দলগুলোকে খেতে চাইছে। বিজেপি একটি ভাঁওতাবাজ দল। এরা ভোটের আগে এসে গোর্খাল্যান্ডের জিগির তুলে চলে যায়। নির্বাচনী ইস্তাহারে পর্যন্ত গোর্খাল্যান্ড সম্পর্কে একটি কথাও বিজেপি লেখেনি। কিছুদিন আগেই দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্ত ভোট প্রচারে গেলে তাঁকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সর্মথকরা রাস্তা আটকে ধরে। সাংসদকে তারা জিজ্ঞাসা করে গোর্খাল্যান্ডের কী হল? সাংসদের সঙ্গে দেহরক্ষীরা থাকায় ব্যাপারটা বেশি দূর গড়ায়নি।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee | আজ উত্তরবঙ্গে বিজেপি বিরোধী সুর চওড়া করবেন মমতা
পাহাড়ের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি পাহাড়ের আঞ্চলিক দলগুলোর তুলনায় এককভাবে বেশি প্রার্থী দেওয়ায় ইতিমধ্যেই এই মহাজোটের সঙ্গীরা কথা বলতে শুরু করেছে। পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা হওয়ার আগে থেকেই পাহাড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে থাকা ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক বিরোধী জোটের আওয়াজ উঠেছিল। হামরো পার্টিই প্রথম আওয়াজটা তোলে। এরপরে বিজিপি একে একে সব দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে ইউনাইটেড গোর্খা মঞ্চ তৈরি করে এবং সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছিল বি জি পি এম এর সমস্ত প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী দেওয়ার। কিন্তু কার্যত তা হয়নি।
অনিত থাপা জানিয়েছেন, বিজেপি পাহাড়ের সবকটা আঞ্চলিক দলকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়া উচিত। রাজু বিস্ত নির্বাচনের সময় বলেছিলেন যে, তিনি মহাকাল বাবার শপথ করে গোর্খাল্যান্ড আনবেন। কিন্তু গোর্খাল্যান্ড কি এনেছেন? বিজেপি তার ইস্তাহারে লিখে রাখুক যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জিতে গোর্খাল্যান্ড হবে। তাহলে আমি আমার সব প্রার্থীকে প্রত্যাহার করে নেব। নির্বাচনের ফলাফলই বলে দেবে দার্জিলিং পাহাড়ের মানুষ কোন দলকে পছন্দ করে। আমরা জনগণের সঙ্গে জোট করেছি, তাদের জোট নেতাদের সঙ্গে। আমি পাহাড়ের উন্নয়নে তৃণমূল সরকারের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করেছি। এবারের ভোটে আমরা যেখানে উঠেছি, সেখানে তৃণমূলও উঠেছে। তৃণমূল আমাদের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেনি।
সব মিলিয়ে পাহাড়ের এবারের পঞ্চায়েত ভোট বেশ জমজমাট। তার প্রধান কারণ দুই দশক বাদে পাহাড়ে পঞ্চায়েত ভোট হতে চলেছে। নেতারা গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোয় দিনরাত প্রচারে যাচ্ছেন। তবে ভোটের ফলাফলই বলে দেবে পাহাড়ের মানুষ কাদের রাখতে চায় এবং তার থেকেই ইঙ্গিত পাওয়া যাবে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে।